মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ সাইমুম আনাম সাজিদ, ঢাকা:
দিন দিন বেড়েই চলেছে সর্বনাশা মাদকের বিস্তার। মাদকের আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ছিন্নমূল পথশিশুদের মধ্যে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মাদকে আসক্ত। সংগঠনটির তথ্যমতে ঢাকা শহরে অন্তত ২২৯ টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ অনূর্ধ্ব বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে।
পথশিশুরা সাধারনত গাজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে শুঁকে শুঁকে নেশা করে।তবে এসব মাদকের মধ্যে ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যাই বেশি। ড্যান্ডি নামটা অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও ওদের কাছে এটা চিরচেনা এক দ্রব্য।
ড্যান্ডি হলো এক প্রকার গ্লু গাম বা আঠা জাতীয় উদ্বায়ী পদার্থ যা সাধারণ তাপমাত্রায় সহজেই বাষ্পে পরিণত হয়। এই প্রকার উদ্বায়ী গাম জাতীয় পদার্থ বাষ্প বা ধূম্রাকারে গন্ধ শুকা বা শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে শ্বসনতন্ত্র হয়ে রক্তের মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কে পৌঁছায়, প্রথমে জাগায় আনন্দের শিহরণ আর উন্মাদনা পরবর্তীতে তা দেহে আনে শিথীলতার ভাব। দীর্ঘমেয়াদে এই পদার্থ ব্যবহারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে আসক্তি।
বহু বছরেও সম্ভব হয়নি পথশিশু কিংবা হতদরিদ্রদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখা। এদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও। নেশার টাকা জোগাতে তারা বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তি, চুরি- ছিনতাই, রাহাজানির মতো জঘণ্য অন্যায়। প্রায় সময়ই এরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মাদকের টাকা জোগাতে রাস্তা-ঘাটে, বাস বা ট্রেনে উঠে ভিক্ষাবৃত্তি করে। সু্যোগ পেলেই করে ফেলে ছোটোখাটো চুরি বা ছিনতাই।
মধ্য রাতে ঘড়ির কাঁটাও যখন ক্লান্ত, ঝিমিয়ে পড়েছে শহর, ঠিক তখনও পথশিশুদের জীবন নিয়ন্ত্রণ নেশার হাতে। রাজধানীর গাবতলী, গুলিস্তান, কমলাপুর, সদরঘাট এলাকায় হাজারো পথশিশুর জীবন মাদকের এই শিকলে আবদ্ধ।
সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান বেশ পুরোনো বলাই চলে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিনিয়তই মাদকবিরোধী বিভিন্ন অভিযান চালাচ্ছে। কিছুদিন পর পরই জব্দ করা হয় বিভিন্ন প্রকার নেশার দ্রব্য। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু সড়কের পাশে তাকাতেই চোখে পড়ে মাদকাসক্ত পথশিশুদের।যে বয়সে তাদের কলম ধরার কথা ছিলো ঠিক সে বয়সে মাদকদ্রব্য হাতে রাস্তার পাশে মাতাল হয়ে পড়ে আছে।
ড্যান্ডি নামক এই আঠা জাতীয় দ্রব্য সাধারণত পাওয়া যায় হার্ডওয়্যার এর দোকানে। এটি সংগ্রহে নেই কোনো বিধিনিষেধ।যার ফলে সহজলভ্য হচ্ছে এই মাদকের নাগাল। দ্রব্যটি অবৈধ না হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেরও নেই কোনো মাথাব্যথা।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.মানজুরুল ইসলাম বলেন, ‘লাইসেন্সের প্রক্রিয়া, গাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আনা নেয়া এটা একটা দুরূহ ব্যাপার, তারপরও কিন্তু আমাদের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা- ড্যান্ডি সেবনে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ক্ষতি হয়। এমনকি হয়ে যেতে পারে উন্মাদ- পাগল। বিশ্লেষকদের মতে , নেশায় আসক্ত এসব শিশুদের সংশোধনের জন্য সংশোধনাগার নির্মাণ করা এবং সেখানে সর্বদা তদারকি করার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজধানী সহ কিছু কিছু জেলা শহরে বেশ কয়েকটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগই বেসরকারীভাবে পরিচালিত হয় যার ফলে সেখানে সাধারণ পথশিশুরা নিরাময়ের জন্য জায়গা পায় না।
দেশ গড়ার কারিগর সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মাদক। মাদকের কারণেই অনেক মা-বাবার বুক ফাটা কান্নায় প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ বাতাস। অতএব, ভয়াবহ এই মরণব্যাধি থেকে পথশিশু সহ তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতনতার সাথে এক হয়ে কাজ করতে হবে।