বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা. পাবনা :
সংবাদ প্রকাশের জেরে, পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালামের ইন্ধনে, সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাসকে খুজতে তার বাড়িতে এসেছিল একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও সাংবাদিক মোবারক বিশ^াস জানান, রাতে ৪টি মোটরসাইকেল যোগে ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও দুটি ব্যাগ নিয়ে মোবারক বিশ্বাসের বাড়ির পাশের চা দোকানের পাশে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেয়। এরপর মোবারক বিশ্বাসের খোঁজ করতে থাকেন। এরপর তারা পাশ্ববর্তি আরেকটি দোকানে গিয়ে মোবারক বিশ্বাসের খোঁজ করেন। এসময় স্থানীয়রা তাদের হাতে চা পাতিসহ ধারালো অস্ত্র দেখেছে বলে জানায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশে পাশের বাসিন্দারা মোবারক বিশ্বাসের বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিষয়টি টের পেয়ে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, মোটরসাইকেল আরোহীদের মধ্যে বেশিরভাগ মুখোশধারী ছিলো। পরে স্থানীয়রা এক ব্যাক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন। সে সদর উপজেলার বালিয়াহালট গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নাজমুল(৩২)। পরবর্তিতে জানা যায়, নাজমুল বালিয়াহালট কথিত বিএনপি নেতা পরিচয়দানকারী ইয়াকুব এর খালাত ভাই।
আরো জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর ইয়াকুব, পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালামকে ম্যানেজ করে গ্রেফতারকৃত মাদক সম্রাট খোকনকে ১৫১ ধারায় আদালতে প্রেরন করেন। ওইদিন মাদক সম্র্রাট খোকনকে আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের করে আনেন কথিত নেতা ইয়াকুব। এ ব্যাপারে পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালামের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাস “পাবনায় মাদক সম্রাট গ্রেফতার ১৫১ ধারায় আদালতে প্রেরন” শিরোনামে কয়েকটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিউজ প্রকাশ করেন। এদিকে ওসি সালামের বক্তব্য নেওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পর সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাসের কাছে ইয়াকুব মোবাইল করে জানতে চান খোকনকে নিয়ে কি হয়েছে।
সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাস ইয়াকুবকে প্রশ্ন করেন, একজন মাদক সম্রাটকে ওসি কিভাবে ১৫১ ধারায় আদালতে প্রেরন করতে পারে। যার নামে ইতিপুর্বে প্রায় হাফ ডজন মাদক মামলা রয়েছে। এরপর ওইদিন মোবারক বিশ্বাস পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালামকে জড়িয়ে একটি খবর প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে শুক্রবার রাতে সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাসকে মারার জন্য সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে খুজতে তার এলাকায় গিয়েছিল। সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাস সেই সময়ে ঔষধ কিনতে শহরে গিয়েছিল। তা না হলে একটি অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে যেতে পারতো, জানান সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাস। সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাস তার বাড়িতে এসে বিষয়টি জানতে পেরে, পাবনার পুলিশ সুপার মোঃ মোরতজা আলী খান ও পাবনার সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেলকে ঘটনাটি মোবাইলে অবহিত করেন। পুলিশ সুপার সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাসকে থানায় জিডি করতে পরামর্শ দেন। পরে পাবনা সেনাবাহীনির ক্যাম্প কমান্ডারের ফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। এ ঘটনায় মোবারক বিশ্বাস পাবনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং-৯৮৫,তাং-১৩-১০-২০২৪ইং।
কে এই ইয়াকুব? পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের বালিয়াহালট গ্রামের বাসিন্দা মরহুম ইউসুফ আলীর ছেলে কথিত বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলী (৩৫)।
৫ই আগষ্টে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ইয়াকুব কেন্দ্রীয় এক নেতার পরিচয়ে শুরু করেন বিভিন্ন অপকর্মসহ থানার দালালি। যাকে তাকে আওয়ামীলীগের তকমা লাগিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের পর তদবীর বানিজ্য তুঙ্গে। মাদক ব্যাসায়ীদের গ্রেফতারের পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থানার ওসিদের ম্যানেজ করে ১৫১ ধারায় আদালতে প্রেরন বা থানা হাজত থেকে বের করার অভিযোগ রয়েছে।
২০০৪-৫ সালে চুরি ও ডাকাতি করতে গিয়ে ২বার জনতার হাতে গণপিটুনি খেয়ে হাজত বাস করেন ইয়াকুব। সাবেক সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক রেহানুল ইসলাম বুলালের সাথে মিছিল-মিটিং করার কারনে বিএনপি’র কর্মী হিসাবে ইয়াকুব পরিচিতি হয়ে ওঠে। সেই সুবাদে বাগিয়ে নেন. ওয়ার্ড বিএনপি’র একটি পদ। ৫ আগষ্টের পর যাকে, তাকে আওয়ামীলীগের তকমা লাগিয়ে শুরু করেন, চাঁদাবজি। নিজেকে নিরাপদে রাখতে থানা ও ডিবি পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। অল্প দিনের মধ্যে মালিগাছা ও মালঞ্চি ইউনিয়নের বালিয়াহালট, নুরপুর, রামানন্দপুর, গাছপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ওই সব এলাকার অনেককেই তার কুটচালে পড়ে অর্থদন্ড জরিমানা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ মোবারক বিশ্বাসকে হত্যা বা ভয়ভীতি দেখানোর জন্য তার সশস্ত্র ক্যাডারদের পাঠিয়েছিলেন। মোবারক বিশ্বাস এটিএন বাংলা পাবনা জেলা প্রতিনিধি ও জাতিয় দৈনিক খবরপত্র’র নিজস্ব সংবাদদাতা।