বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:
পাবনা আটঘরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন ও নৌকা প্রতিক বিরোধী শহিদুল ইসলাম রতনকে বয়কট করেছে স্থাণীয় আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। জানা যায়, বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোবারক হোসেন পান্নার বিপক্ষে তার পুত্র তানভীর ইসলামকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার ঘোষনা করেন। সেই ঘোষনার পরে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের ডেকে তার পুত্র তানভীরের পক্ষে কাজ করতে বলেন, যারা কাজ করবে না, তাদেরকে দল থেকে বহিস্কারের হুমকি প্রদান করেন। ফলে গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতিকের ভরাডুবি হয়। তখন থেকেই নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমাট বাধতে থাকে। উপজেলা নির্বাচনের পরে দলীয় প্রার্থী মোবারক হোসেনসহ যারা আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকার পক্ষে কাজ করেছিল, তাদের উপর হামলা-মামলা শুরু করে বাপ পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন-বেটা উপজেলার চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম। এরপর থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা বাপ-বেটার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। তার প্রমান এবারে আটঘরিয়ার আওয়ামীলীগের সকল ইউনিটে সাবেক নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপি পন্থি লোকদের দিয়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা ত্যাগী নেতা-কর্মী ছিলেন এবং বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন করেছিলেন তাদেরকে এবারে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি পৌর নির্বাচনের তফশিল ঘোষনার পর স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের ডেকে পৌর মেয়র রতন নিজেকে একমাত্র প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা পত্রে জোরপুর্বক স্বাক্ষর নিয়ে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দেন। এদিকে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ দলীয় প্রার্থী হিসাবে কমপক্ষে ৩জনের নাম প্রস্তাবের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী মোবারক হোসেন বলেন, শহিদুল ইসলাম রতন যদি তার একক নামে প্রার্থীর পদ প্রস্তাব করে থাকেন, তাহলে আমি এর বিরোধীতা করছি। আর উপজেলা নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল, সেই নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে তার নিজ পুত্রকে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে জয়লাভ করিয়েছে,। জননেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করার কারনে শহিদুল ইসলাম রতনকে পৌর মেয়রের নমিনেশন না দেওয়া হয়, সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। আরো জানা যায়, আটঘরিয়া পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ৬জন। এরমধ্যে ইউনিয়নের ৪বার ও উপজেলার ৩ বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ইশারত আলী, আটঘরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য মোঃ জহুরুল হক, ডাঃ হোসেন আলী বিশ্বাস সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক, আলী সুজা মিঠু সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক পৌর আওয়ামীলীগ, আশরাফুল ইসলাম জুয়েল সাবেক যুগ্ন সম্পাদক পৌর আওয়ামীলীগ।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা জহুরুল হক বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন নিজে রেজুলেশন করে জোরপুর্র্বক সবাইকে স্বাক্ষর করিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের কাছে জমা দেন। জেলা আওয়ামীলীগ কেন্দ্রে একমাত্র প্রার্থী হিসাবে নাম প্রস্তাব করেন। জেলার নেতৃবৃন্দের উচিত ছিল যারা প্রার্থী হবেন, তাদের সবাইকে জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে হাজির হতে। তারপর পর্যালোচনা করে কেন্দ্রে সবার নাম পাঠাতে পারতো। একক প্রার্থীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আহাদ বাবু বলেন, আটঘরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও পৌর আওয়ামীলীগ রেজুলেশন করে যে কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছে, জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শুধুমাত্র স্বাক্ষর করে কেন্দ্রে প্রেরন করেন। কত জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমার জানা নেই। এদিকে আটঘরিয়ার সাবেক ও বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও ৫ মেয়র প্রার্থীর দাবি উপজেলা সভাপতি ও বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম রতনকে বাদ দিয়ে যাকে দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতিক বরাদ্ধ দিবে আমরা সবাই তাকে জয়যুক্ত করতে একযোগে কাজ করে যাবো। স্থানীয় একাধিক নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান মেয়রকে যদি দলীয় নমিনেশন দেওয়া হয়, তাহলে আটঘরিয়া পৌরসভার নৌকার ভরাডুবি হবে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহী অথবা অন্যকোন প্রার্থী জয়লাভ করবে। এতে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ বিতর্কিত হতে পারে এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীরা নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। স্থাণীয় নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করায় মোখলেছুর রহমান মিন্টুকে কোন পদ পদবি দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয় তার পক্ষে যারা কাজ করেছিল তাদেরকেও দলীয় কোন পদে রাখা হয়নি। তাহলে একই সংসদীয় আসনে আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রতনের ছেলে তানভীরকে বিদ্রোহী প্রার্থী বানিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ করে জয়লাভ করান মেয়র রতন। তাহলে তাকে কেন দলীয় পদ দেওয়া হলো। আবার তাকে আটঘরিয়ার দলীয় পৌর মেয়র পদ দেবার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। একই সংসদিয় আসনে দুই রকম নীতি, নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।