শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
এইচএম মোকাদ্দেস,সিরাজগঞ্জ :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে গত এক মাসেও বাড়িতে ফেরেনি শাহিন শেখ (১৬)। গত ৪ আগস্ট কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিছিলে যায় সে। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা দুটি লাশের একটি শাহিনের বলে দাবি তার পরিবারের। ওই লাশের দাবিদার আরও কয়েকজন থাকায় লাশ হস্তান্তরে জটিলতা দেখা দিয়েছে। নিখোঁজ শাহিন শেখ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার জানপুর মহল্লার বাবু শেখের ছেলে। তার সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
শাহিনের বাবা বাবু শেখ বলেন, চলতি বছর সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে শাহিন। গত ৪ আগস্ট সকালে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় শাহিন। যাওয়ার সময় বলে যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যাচ্ছে। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরাস্তা এলাকায় মিছিলে শাহিনকে দেখতে পাওয়া যায়। এরপর থেকে শাহিন বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন খোঁজা-খুঁজি শুরু করে। কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। বাবু শেখ আরও বলেন, স্থানীয়রা বলেন ‘সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘরের মধ্যে আপনার ছেলে আটকা পড়ে থাকতে পারে। পরে রাতে আমরা জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে শাহিনকে খোঁজা-খুঁজি করি। একটি কক্ষে দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তার একটি লাশ আমার শাহিনের। কিন্তু পুলিশ না থাকায় লাশ হাত দিইনি। পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে আবারও জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আসি। এসে দেখি লাশ নাই। পরে জানতে পারি ভোরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। লাশের শরীরের অধিকাংশ স্থান পুড়ে গেছে। চেনার উপায় নাই। কিন্তু আমার ছেলের পরনের জুতা ও শরীরের উচ্চতা দেখে চিহ্নিত করতে পারি এটি শাহিনের লাশ।
বাবু শেখ আরও জানান, হাসপাতালের মর্গে তিনি একটি লাশকে ছেলে শাহিন হিসেবে চিহ্নিত করার পর নিতে চাইলে আরও চার ব্যক্তি ওই লাশ নিজেদের দাবি করলে পুলিশ সেটি কাউকে দিইনি। এদিকে রোববার ডিএনএ টেস্টের জন্য বাবু শেখকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। ডিএনএ টেস্টে মিললে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার আতাউর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট ভোরে খবর পেয়ে আমরা সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাসায় যাই। সেখান থেকে আমরা দু-জনের মরদেহ উদ্ধার করি। তাঁদের শরীর পুরোটাই আগুনে পুড়ে গেছে। চেনার উপায় নাই। পরে লাশগুলো মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছি। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের দায়িত্বে থানা ডোম স্বপন বলেন, গত এক মাস হলো হাসপাতালের মর্গে দু-জনের লাশ রাখা আছে। লাশের শরীর পুরোটাই আগুনে পোড়া। লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। ডিএনএ টেস্ট না হওয়া পর্যন্ত লাশ দেওয়া যাচ্ছে না। সিরাজগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকারিয়া বলেন, যে দুটি লাশ মর্গে আছে তার দাবিদার কয়েকজন। যে কারণে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ডিএনএ টেস্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি পেয়েছি। ডিএনএ টেস্টের জন্য পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন হাতে পেলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।