বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দমনের সহযোগিতায় করায় এখন
দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠরাই সেনাবাহীনির হাতে নির্যাতিত।
আন্তজার্থিক সংবাদ :
সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশু মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শিশুটি তাদের মান্দালয়ের বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে।মান্দালয়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করলে নিজেদের বাড়িতে থাকা শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়। দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে এ পর্যন্ত এত কম বয়সী আর কেউ নিহত হয়নি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী সেইভ দ্য চিলড্রেন বলছে, অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদের সময় নিহতদের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি শিশু রয়েছে।বিক্ষোভ চলাকালে এ পর্যন্ত মোট ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। অপরদিকে মানবাধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) মৃতের মোট সংখ্যা অন্তত ২৬১ জন বলে জানিয়েছে।মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রতিবাদকারীদের প্রাণহানি নিয়ে মঙ্গলবার দুঃখ প্রকাশ করেছে কিন্তু দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য তাদেরই দায়ী করেছে। সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার জন্য দায়ী। মান্দালয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিভাগের একজন কর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, চান মায়া থাজি উপশহর এলাকায় সাত বছরের ওই শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। বার্তা সংস্থা মিয়ানমার নাও এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈন্যরা শিশুটির বাবাকে গুলি করেছিল, কিন্তু গুলি বাবার কোলে থাকা শিশুটির গায়ে লাগে। এই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরও দুই জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা। শিশুটির নাম খিন মিও চিত বলে জানা গেছে। দাতব্য সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। শিশুটির ১৯ বছর বয়সী ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পরিবারটির সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে সামরিক বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি বলে বিবিসি জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে শিশু বালিকার মৃত্যুর এ ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছে সেইভ দ্য চিলড্রেন। এর আগের দিন মান্দালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হয়েছিল বলে জানা গেছে। দেশটির আন্দোলনকারীরা বুধবার আরও অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। এ সময় একটি নিরব ধর্মঘটের ডাক দিয়ে লোকজনকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রেখে বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। চিত্রকর ও আন্দোলনকারী নোবেল অং রয়টার্সকে বলেন, “কেউ বাইরে যাবে না, কোনো দোকান খোলা থাকবে না, কোনো কাজ হবে না। শুধু একদিনের জন্য সব বন্ধ থাকবে।” সুচী সরকার রোহিঙ্গাদের দমন পীড়নে সেনাবাহিনীর পক্ষে থাকায় আজ দেশটির সাধারণ নাগরিকরাও মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে প্রতিনিয়ত আন্দোলন সংগ্রাম করছে। বেসরকারী হিসাবে মাত্র ১মাস ২৪ দিনে ২৬১ জন নাগরিককে জীবন দিতে হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অ্যং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। বন্দি করা হয় দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির বেশ কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরাও রয়েছেন।