মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহী মহানগরীতে ওয়াকফ লিল্লাহ সম্পত্তিতে স্কুল উচ্ছেদ করে দোকান ঘর নির্মান করা হয়েছে।
আর এই জবর দখলের কাজটি করছেন ওই সম্পত্তির মোতাওয়াল্লীর আত্মীয় স্বজন।
এ নিয়ে তাদের এক আতœীয় এ্যাড. নিজাম উদ্দীন জনস্বার্থে বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। গত (৫ সেপ্টম্বর) রোববার এ অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
জানা যায়, রাজশাহী নগরীর আহম্মদপুর এলাকায় ওয়াকফ করা জমি অবৈধভাবে জবরদখল করে সেখানে দোকান-ঘর নির্মাণ করছেন ওয়াকফ‘র মোতাওয়াল্লীর আত্মীয়-স্বজনেরা। কিন্তু বিষয়টি বর্তমান মোতাওয়াল্লী মো. সিরাজুল ইসলামকে জানানোর পরও তিনি এবিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। তার উদাসীনতার কারণে মাজারের ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে দেখা গেছে ক্ষোভ।
এনিয়ে গত রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) জনস্বার্থে ওয়াকফ জমি জবরদখল মুক্তকরণের জন্য আইনজীবী মো. নিজাম উদ্দীন স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
ওয়াকফ’র জমি রক্ষায় অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী আইনজীবী মো. নিজাম উদ্দীন ওয়াকফ দলিল ও তদসংশ্লিষ্ট কাগজাদির বরাত দিয়ে প্রতিবেদককে জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশান (রাসিক) কৃর্তক কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্থকরণ প্রকল্প আওতায় আসায় কিছু জমি অধিগৃহিত হয়। বাকি জমি স্কুলের নামে অর্থাৎ ওয়াকফ লিল্লাহ‘র জমি হিসেবেই রয়েছে। কিন্তু বর্তমান মোতাওয়াল্লীর আত্মীয়-স্বজন স্কুলের জমি অবৈধভাবে জবরদখলপূর্বক সেখানে প্রায় ১৩টি দোকান-ঘর নির্মাণ করছেন। বর্তমানে তারা দোকানঘর ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে জামানত নেয়া শুরু করেছে।
তিনি আরও জানান, এঘটনায় স্থানীয়দের বাসিন্দা ও স্কুলের সশ্লিষ্টদের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, মাজার শরীফে যে অর্থ ভক্ত-আশেকানরা দান করেন তারও কোনো হিসেব থাকে না। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। আর তাই আমি সেচ্ছায় জনকল্যাণার্থে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি, যাতে জবরদখল রোধ করে স্কুলটি ও ওয়াকফ লিল্লাহর সম্পত্তিটি রক্ষা করা যায় যা জনকল্যাণমূলক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হযরত শাহ শুফী ইসমাইল হোসেন চিস্তি ১৯৫০ সালে নগরীর আহম্মদপুর এলাকায় একটি খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাই-বোন ও নিজের মধ্যে বন্টন করে তার প্রাপ্ত অংশের ১৩ শতাংস অংশ নিয়ে খানকাহ শরীফের হযরত শাহ শুফী ইসমাইল হোসেন চিস্তি নামে দলিল করে ওয়াকফ লিল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন।
শুফী ইসমাইল হোসেন চিস্তির ৪ ছেলে ও ৭টি মেয়ে ছিলেন। ১১ জনকে নিয়ে একটি কমিটি করে যান। সেই কমিটির কাজ হলো মোতাওয়াল্লীদের সাহায্য সহযোগিতা করবেন। আবার মোতাওয়াল্লী নির্বাচিত হবেন আমার পুত্রের সন্তানদের মধ্যে থেকে। তবে তাদের মধ্যে বয়োজৈষ্ঠতা, সততা ও যোগ্যতা ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন।
তিনি ১৯৬৯ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করলে খানকাহ শরীফের কাছেই তার মাজার নির্মিত হয়। ইতিমধ্যেই তার ভক্ত আশেকান বা মুরিদেরা লিল্লাহ এষ্টেস্টের নামে ১৯৮৯ সালে ইসমাইল হোসেন চিস্তির মাজারের পাশেই ০.১১৫৬ শতাংশ জায়গা ক্রয় করে দেন। তবে ওই সময় তার সেজো ছেলে শামসুজ্জোহা চিস্তি মোতাওয়াল্লী ছিলেন। অন্যান্য সব পুত্রই মারা যান। শুধু তিনিই বেচে ছিলেন।
ইসমাইল হোসেন চিস্তির সর্বশেষ ছেলে ১৯৯৯ সালে মারা যান। পরবর্তীতে ২০০০ সালে তার বড় ছেলের ছেলে অর্থাত পোতা ড. আব্দুল খালেক মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন। অত:পর তিনি ২০০৫ সালে তার দাদার নামেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১০.০৫.২০০৯ সালে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয় ঢাকায় স্কুল করার অনুমতি চান। আবেদনের প্রেক্ষিতে ও:প্র:/রাজ:/২০৩৪ স্মারক নম্বরের প্রেক্ষিতে ০৪.০৬.২০০৯ সালে ০.১১৫৬ একর জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে ওয়াকফ প্রশাসক।
ওয়াকফ লিল্লাহর জমি জবরদখলের বিষয়টি নিয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে মোতায়াল্লী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সাইদুল ও আমার ছোট ভাই নাসিরুদ্দিন আমার কথা শুনছে না। গায়ের জোরে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মান করছে। আমি ঢাকায় আছি। আমার ছোট ভাই গোলাম রসুলকে দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু সে দায়িত্ব পালন না করে নিজের নামেই একটি দোকানঘর নিয়েছে। আমি রাজশাহীতে এসে মামলা করবো। সেই সাথে দোকাঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবো বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে দোকানঘর নির্মানকারী মো. সাইদুর রহমান দোকান ঘর নির্মানের সত্যতা স্বিকার করে বলেন, আমরা ১১জন শরিক মিলে ১১টি দোকানঘর নির্মান করছি। শরিকরা হলেন: শামসুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, চপল, আসিফ, মোস্তাক আহম্মেদ, রাজা, নাসীর, গোলাম রসুল, কুতুব মিলে ১১টা দোকানঘর নির্মান করা হচ্ছে। যা মাঝারের খাতে ব্যয়ে করা হবে।
হজরত খাজা শাহ্ সুফি ইসমাইল হোসেন চিশতী (রহ:) নামে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন প্রামানিক বলেন, ওয়াকফ লিল্লাহ জমির উপর নির্মিত স্কুলটিতে অসহায়, গবির ও পথশিশুদের বিনা খরচে শিক্ষা দেয়া হতো। স্কুলটি ২০০৫ সাল ৯৬জন ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। পরে স্কুলটির সুনাম ছিলো শহরজুড়ে।
কিন্তু কিছু অসাধু লোকজন নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে গায়ে জোরে স্কুলের স্থাপনা উচ্ছেদ করে দোকান ঘর নির্মান করছে। এতে শিক্ষার আলো থেকে ছিটকে পড়ছে অসহায়, গবির ও পথশিশুরা।
এ ব্যপারে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে ও শিক্ষা মন্ত্রানালয়ে পৃথক দুটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোতায়াল্লী মো. সিরাজুল ইসলামের নির্দেশ অমান্য করে দোকানঘর করছেন এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, মোতায়াল্লী দুই ভাই নাসির ও গোলাম রসুলকে তিনটি দোকানঘর করেছে। স্কুলের জায়গা দখল, মোতায়াল্লী মো. সিরাজুল ইসলামের নির্দেশ অমান্য, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।