বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ :
আজ ৭ ফেব্রুয়ারী বুধবার বিকেলে র্যাব-১৪ এর উপ-পরিচালক অপারেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের জানান। অধিনায়ক র্যাব – ১৪, ময়মনসিংহ মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত র্যাব-১৪, সদর ব্যাটালিয়নের অপারেশনস্ অফিসার উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও এএসপি জাহিদ হাসান এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫০ জন শীর্ষ চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ। চাঁদাবাজদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চাঁদা আদায়ের নগদ ৬০,৮৬১ টাকা, ৪৩ টি মোবাইল এবং বিপুল পরিমান চাঁদা আদায়ের রশিদ।
সড়ক ও মহাসড়কে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাক হতে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে ৫০ জন চাঁদাবাজকে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব -১৪, ময়মনসিংহ চাঁদাবাজির ৬০,৮৬১ হাজার টাকা ও বিভিন্ন আলামত উদ্ধার। কোতোয়ালি থানাধীন শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ এলাকা থেকে সর্বমোট ১২ জন গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেফতারকৃতরা মো. সিদ্দিক এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহ এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে। গ্রেফতারকৃত মো. সিদ্দিক ও তার সহযোগী আসামিদের চাঁদাবাজি করার জন্য নিয়োগ করে।
কোতোয়ালি থানাধীন শম্ভুগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে সর্বমোট ০৭ জন গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেফতার কৃত মো. মোস্তোফা এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহ এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে। কোতোয়ালি থানাধীন রহমতপুর বাইপাস ও আকুয়া বাইপাস এলাকা থেকে ১১ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার কৃত মো. লাল মিয়া ও লুৎফর রহমান বসির এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহের রহমতপুর বাইপাস ও আকুয়া বাইপাস এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে। মুক্তাগাছা সদর এলাকা থেকে ০৭ জন গ্রেফতার। গ্রেফতার কৃত রাসেল এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকা এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে।
তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকা থেকে ১৩ জন আটক। গ্রেফতার কৃত কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহের কাশিগঞ্জ এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহ সহ সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকগণ বাজার করতে গিয়ে দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা সবজি বাজারে অধিক দামে সবজি বিক্রয়ের ব্যাপারে জনমনে অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়। যেখানে পাইকারী বাজার এবং খুচরা বাজারে সবজির মূল্যে তারতম্য দেখা যায়। পণ্য উৎপাদনের স্থান হতে পাইকারী বাজারে পরিবহনের সময় দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধাপে ধাপে চাঁদা দেয়ার কারণে পাইকারী বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। যার মাশুল গুনতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। কিছু কিছু স্থানে র্যাব ও ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে আবার পূর্বের মত উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন ভিত্তিক নিউজের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। উক্ত জনদূর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহসহ সারাদেশে র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদনকারীদের নিকট হতে পন্য সামগ্রী সংগ্রহ পূর্বক ট্রাক/পণ্যবাহী যানবাহনে পাইকারী ও খুচরা বাজারে পৌছানোর সময় পথিমধ্যে নামে বে-নামে ভূয়া রশিদ অথবা কখনো কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিপুল পরিমান অর্থ চাঁদাবাজি করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত চাঁদাবাজির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। তারা ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করে। গ্রেফতারকৃতরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতি রাতে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর অবস্থান নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পণ্যবাহী যানবাহন ময়মনসিংহের প্রবেশের সময় তারা লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের নিকট অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রশিদও প্রদান করে থাকে। ড্রাইভাররা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাংচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন হতে ১৫০-২৫০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। পণ্যবাহী কোন গাড়ি দেখলেই তারা লেজার লাইটের আলো নিক্ষেপ করে তা থামিয়ে কৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে মধ্য রাতে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে উক্ত সময় সড়কে এমন চিত্র শুরু হয়। উক্ত চক্র ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতি রাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের নিকট হতে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে বলে জানা যায়।
র্যাব জানায়, যারা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে, র্যাব-১৪ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা করবে। র্যাব-১৪ সম্মানিত নাগরিক সমাজকে আহবান জানাচ্ছে যে, যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদ করবে তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে র্যাবকে সহায়তা করুন, এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।