মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০১:১৪ অপরাহ্ন

News Headline :
বাংলাদেশে নাবালিকা ধর্ষণ: একটি পর্যালোচনা নওগাঁয় নাতনিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দাদা গ্রেপ্তার আমাদের লড়াই শুধু হাসিনা নয়, যেকোন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে-রাজশাহীতে শিবির সভাপতি রাজশাহী পুঠিয়ায় ভাগ্নী’কে ধর্ষণ চেষ্টাকারী সিহাব গ্রেফতার হোসেনপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ ইট বৃষ্টির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ালেন শ্যামনগরের ইউএনও রণী খাতুন পাবনা ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডায় ৩ ইটভাটায় অভিযান ২ লাখ টাকা জরিমানা এবার রাজশাহীর বাগানগুলোতে ফুটছে আগাম আমের মুকুল সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের বাৎসরিক ফ্যামিলি ডে পালিত জব্দ ট্রাক ছাড়তে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী! ২০ হাজার টাকা দেওয়ায় হয়রানীর অভিযোগ গোদাগাড়ী থানার ওসি’র বিরুদ্ধে

রংপুরে স্কুলছাত্রী ইভা হত্যাকান্ড ‘কিলিং মিশনে’ অংশ নেয়া আরেক তরুণ গ্রেফতার

Reading Time: 4 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল:

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় স্কুলছাত্রী সানজিদা আক্তার ইভা হত্যার ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান পলাশ (২২) নামে আরো এক তরুণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে পীরগাছা উপজেলার ছোট কল্যাণী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই এলাকার মোক্তার হোসেন ড্রাইভারের ছেলে। সোমবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এঘটনায় জড়িত গ্রেফতারকৃত কথিত প্রেমিক শেখ মনিরুজ্জামান প্রিন্স ও মেহেদী হাসান পলাশের দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার কাউনিয়ার সিনিয়র আমলী আদালতের বিচারক তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এঘটনার পর থেকে ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের গ্রেফতার এবং ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করেছে ইভার সহপাঠি, এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা। বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশ, স্বারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেন। এদিকে স্কুলছাত্রী ইভার হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল কথিত তিন প্রেমিক। তিনজনই বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। এ হত্যাকা-ের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশও বিস্মিত হয়েছে। কারণ বছরখানেক আগে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতে চলা একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছিল। ওই সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তাদের স্বজনরা। আত্মীয়তার সম্পর্কই মূলত তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ তার সর্ম্পকে মামা-ভাগনি হতেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিমুর রহমান জানান, মূলত ইভার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিচ্ছেদে ক্ষুব্ধ হয়ে সায়েম, প্রিন্স ও পলাশ তিনজন মিলে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ইভাকে ঘুরতে নিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাউনিয়ার হরিচরণ লস্কর গ্রামে কুটিরপাড়-টেপামধুপুর সড়কের পাশে ধারালো চাকু দিয়ে ইভাকে জখম করে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান তারা। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে এ ঘটনায় ইভার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ইভা কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের গোড়াই গ্রামের ইব্রাহীম মিয়ার মেয়ে এবং পাশ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলার বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এর আগে ইভা হত্যাকা-ের মূলহোতা নায়েদুল ইসলাম সায়েমকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সায়েম এ হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে কিলিং মিশনে আরো দুইজন জড়িত থাকার কথা জানান। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার শেখ মনিরুজ্জামান প্রিন্সকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রোববার অভিযান চালিয়ে স্কুলছাত্রী ইভা হত্যাকা-ে অংশ নেয়া আরেক তরুণ পলাশকেও গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরো বলেন, মেহেদী হাসান পলাশ ও শেখ মনিরুজ্জামান প্রিন্স বন্ধু। পলাশকে সোমবার রংপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর প্রিন্সের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এদিকে নায়েদুল ইসলাম সায়েমের এমন কর্মকা-ে বাবা নুর হোসেন জানান, বছরখানেক আগে একজন পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় নিজেদের সন্তানদের সামলানোর মৌখিক সমঝোতা করেছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শেষের দিকে মেয়েটি নিজের মা-বাবার ফোন থেকে তার ছেলের সঙ্গে কথা বলতো। বড় ভাইয়ের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের সূত্রে তাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো মেয়েটি। আত্মীয়তার সূত্রে ছেলের সঙ্গে মামা-ভাগনির সম্পর্ক। পাশেই তার বড় ভাইয়ের বাড়ি। প্রায়ই ওই বাড়িতে বেড়াতে আসতো মেয়েটি। ওই বাড়ির টয়লেট ভালো না হওয়ায় তার বাড়িতে এসে গোসল করতো। ছেলের মা বলেন, মেয়েটাকে আদর করতাম, খাওয়াতাম। একবারের জন্যও এ পরিণতি হবে বুঝতে পারলে সাবধান হতাম। নিজের ছেলের সঙ্গে এভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে খুন হবে, নিজের সন্তানই তাকে খুন করবে, বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রতিবেশীরা জানান, মেয়েটি সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতো। বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকতো। বড়জোর রাস্তায় যেত। কখনো কেউ খারাপ কিছু দেখেনি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলের বাবা বলেন, ঘটনার পরদিন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যে চার বন্ধু চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে বেড়াতে যাবে বলে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আমার ছেলেটি। কিন্তু আগের দিনই নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ওই দিন রাতে ছেলে ডান হাতের তিনটি আঙুল অনেকখানি কাটা অবস্থায় বাসায় আসে। টিনে লেগে হাত কেটেছে বলে জানিয়েছিল সে। কিন্তু সন্দেহ হয়েছিল আমার। বাড়িতে ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বাড়িতে পুলিশ এলে ছেলেকে তুলে দেই। এ ঘটনায় আমার ছেলে হয়তো পরিস্থিতির শিকার। মেয়েটিকে খুন করতে আমার ছেলেকে কেউ বাধ্য করেছে বলে তিনি দাবি করেন। পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের কাছে নিজ হাতে প্রথমে স্কুলছাত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কথা স্বীকার করেছে প্রধান অভিযুক্ত স্কুলছাত্রীর সাবেক প্রেমিক নায়েদুল ইসলাম সায়েম।পুলিশকে সে জানায়, তিনজন মিলে মেয়েটিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের সময় তার হাতে থাকা ছুরিটি ভেঙে যায়। মূলত এ সময় তার হাত কেটে যায়। তার কাছ থেকে কিলিং মেশিনে অংশ নেয়া শেখ মনিরুজ্জামান প্রিন্স ও মেহেদী হাসান পলাশের নাম পাওয়া যায়। পরে তাদের গ্রেফতার করা করে পুলিশ। তবে প্রথমে গ্রেফতার হওয়া সায়েম ঘটনার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু প্রিন্স অপরাধের কথা স্বীকার করে কোনো জবানবন্দি দেয়নি। তিনজনই প্রেমে প্রতারিত হয়ে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত স্কুলছাত্রীর ডায়েরির ক্লু ধরেই প্রকৃত হত্যাকারীর কাছে তারা পৌঁছাতে পারে। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বারবার তারা বিস্মিত হয়েছেন। এব্যাপারে রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সি-সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম পলাশ জানান, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের যে কথাবার্তার আদান-প্রদান হয়েছে, সেসব প্রকাশযোগ্য নয়। মামলাটি নানা কারণে স্পর্শকাতর। উপরন্তু মামলার ভুক্তভোগী ও আসামিদের বয়সসহ নানা বাধ্যবাধকতায় ঘটনার অনেক কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গ্রেফতারকৃত প্রিন্স ও পলাশের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাদের জিঞ্জাসাবাদে আরও গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট দুপুরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সানজিদাকে রংপুর নগরীর শাপলা সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে নিয়ে আসেন সায়েম। সেখানে সানজিদার নতুন প্রেম নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। পরে সায়েম তার পূর্ব পরিচিত দুইজনের সাহায্যে কৌশলে সানজিদাকে মাহিগঞ্জে রেখে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর সায়েম সানজিদাকে মাহিগঞ্জ থেকে পীরগাছা আলী বাবা থিমপার্কে ঘুরতে নিয়ে যান। রাত হয়ে যাওয়ায় সানজিদা পার্ক থেকে বাড়ি ফিরে আসার জন্য সায়েমকে বারবার চাপ দিতে থাকেন। এরপর তারা পার্ক থেকে রংপুর-টেপামধুপুর সড়কের একটি ফাঁকা জায়গায় আসলে সানজিদাকে একাধিক প্রেম নিয়ে জেরা করা হয়। এ সময় তাদের মাঝে বাগবিত-া শুরু হলে সায়েমসহ তার অন্য দুই প্রেমিক ছুরি দিয়ে সানজিদাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ধারে পড়ে থাকার খবর পায় পুলিশ।এরপর সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশটি সানজিদার বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের ১৮টি চিহ্ন রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com