বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন ,শেরপুর :
শেরপুর জেলার সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত গারো পাহাড়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পাহাড়ের লুকোচুরি দেখতে ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। রোজার কারণে একমাস ফাঁকা ছিলো পাহাড় ঘেরা শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দর্শনার্থী অভাবে ব্যবসা করতে পারেনি পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ঈদের ছুটিতে সারা দেশ থেকে দর্শনার্থীরা পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আসছেন গজনী অবকাশ কেন্দ্রে ও মধুটিলা ইকোপার্কে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, গজনী অবকাশ কেন্দ্রে নতুন করে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক, ওয়াটার কিংডম ও প্যারাডোবা, ঝুলন্ত
ব্রিজ,রুফওয়ে, জিপলাইনার, ক্যাবলকার, প্যাডেল বোর্ড, সাম্পান নৌকা, ঝর্ণাধারাসহ আকর্ষণীয় রাইডস মন কাড়ছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এছাড়া সীমান্তের এপার ও ওপারের পাহাড়গুলোর লুকুচুরি খেলাতো আছেই। পাশাপাশি বন বিভাগ গড়ে তুলেছে মধুটিলা ইকোপার্ক নামে পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ওয়াচ টাউয়ার, পেডেল বোর্ড, মিনি চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন রাইডস। এছাড়াও শেরপুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ক্যাফে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত গারো পাহাড় এলাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ভিড় করছেন
পর্যটন কেন্দ্রে। বাস, লেগুনা, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে
আসতে দেখা যায় তাদের। যানবাহনগুলোর মধ্যে অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও লেগুনার সংখ্যা বেশি ছিল। আর এ যানবাহনের জট লেগে আছে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের বাইরের দুই কিলোমিটার রাস্তায়। নতুন নতুন রাইডস আর পাহাড়ের
সবুজের হাতছানি পেতে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। শ্রীবরদী থেকে আসা আফরা নাওয়ার হিলালী বলেন, ‘ঈদে বাবা- মার সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। অনেক লোকজন হয়েছে। পেডেল বোর্ডে ওঠলাম অনেক মজা করলাম।’ ঈশ্বরগঞ্জ থেকে আসা ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে গোটা গারো পাহাড়।
নানা গাছে ফুটেছে বিভিন্ন ধরনের ফুল। আগেরবারের চেয়ে নতুন অনেক রাইডস
হয়েছে। খুব ভালো লাগছে এসে।’ জাতীয় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
গীতা বলেন, ‘ঈদের পরেরদিন বন্ধুদের সঙ্গে কলেজ থেকে এক সঙ্গে ঘুরতে
এসেছি। নতুন নতুন অনেক রাইডসে উঠলাম। অনেক কিছু কেনা-কাটাও করলাম। দারুণ লেগেছে শেরপুরের গারো পাহাড়।’ ঢাকা থেকে আসা আহসান রুবেল বলেন, ‘প্রতি বছরই ঈদে বন্ধুর মিলে ঘুরতে আসি। অনেক ভালো লাগে গারো পাহাড়।’
পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ীদের দাবি, যেভাবে দর্শনার্থী আসছেন এটা অব্যাহত
থাকলে লাভবান হবেন তারা। স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী রাহিম বলেন, ‘এখন গরম তাই নতুন করে গরমের কাপড় তুলেছি। বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে। এমন করে কয়েকদিন লোকজন আসলে ভালো বেচতে পারবো। পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘শীতে মোটামুটি ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু রোজা এসে পড়ায় আবার একমাস বন্ধ ছিল। এখন ঈদে লোকজন আসা শুরু করেছে। যদি সপ্তাহ জুড়ে এমন লোকজন আসে তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’ পর্যটন কেন্দ্রের গারো মা ভিলেজের রাইডস ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘এবারের ঈদে অনেক পর্যটক আসা শুরু করেছে। সকাল থেকেই অনেক পর্যটক আসছে। এভাবে পর্যটকরা আসলে আমাদের জন্য ভালো। আমরা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারব।’ রাইডস ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা রাইডসগুলোকে নতুনভাবে সাজিয়েছি। এতে দর্শনার্থীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন। এক মাস বন্ধ থাকায় পাহাড়ের প্রকৃতিও সুন্দরভাবে সেজেছে। এবার ঈদে দর্শনার্থীর সমাগম বেড়েছে। আমরা রোজায় বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।’ শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ‘গজনীতে নতুন নতুন অনেক রাইডস সংযোজন হওয়ায় এবারের ঈদে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। আরও অনেক কাজ চলমান আছে। জেলা ব্যান্ডিং কর্ণার তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে শেরপুর জেলার ব্যান্ডিং করা জিনিসগুলা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীরা সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং জেলার পরিচিতি বাড়বে। আমরা গজনী অবকাশ কেন্দ্রের অনেকটাই উন্নয়ন করেছি। এখানে সারা বছর যেন দর্শনার্থীর সমাগম থাকে এজন্য আলাদা কিছু রাইডস করা হয়েছে। গারো পাহাড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদারে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।