শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মোঃ মাহমুদ উদ্দিন,জুড়ী:
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে কর্মরত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির উপ- সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীমের খুঁটির জোর কোথায়! এ প্রশ্ন এখন উপজেলার সবার মুখে মুখে! জুড়ীতে পিডিবির ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়মের রামরাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি। এমন নানা অভিযোগ উঠলেও তিনি থেকে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় একাধিক সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা ও পিডিবির সিলেট বিভাগীয় এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রায়ই সহকর্মীসহ সাধারণ গ্রাহকদের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগনেতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে আতঙ্কে রাখেন। অনেকের কাছে আবার নিজেকে পিডিবির চেয়ারম্যানের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটান। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিকবার বদলি হলেও অদৃশ্য ক্ষমতায় বদলি বাতিল করেন বারবার। এ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ সাধারণ গ্রাহকরা।জানা যায়, ২০১৪ সালের মে মাসে জুড়ীতে উপ- সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন এ কর্মকর্তা। যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় গ্রাহকদের চরম হয়রানি। ভুতুড়ে বিল নিয়ে শত শত অভিযোগ থাকলেও এসব আমলে না নিয়ে উল্টো গ্রাহককে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ আছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভুতুরি বিল থেকে রেহাই পেতে গ্রাহকরা মানববন্ধন করে অফিস ঘেরাও করলেও এ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হয়নি। যেসব গ্রাহক ভুতুড়ে বিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও অফিস ঘেরাও করেছে উল্টো তাদের কে চিহ্নিত করে বিভিন্নভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন পিডিবির উপ সহ- সহকারী প্রকৌশলী শামীম।অনুসন্ধানে জানা যায়, যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর তাকে পিডিবির ৫ জোনে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে স্ট্যান্ড রিলিজের তিন মাসের মাথায় অদৃশ্য হাতের ইশারায় আবার জুড়ীতে পদায়ন হয় পিডিবির এ কর্মকর্তার। সরকারি বিধি মোতাবেক একজন কর্মকর্তা এক উপজেলায় তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেনা এমন বিধান থাকলেও এ কর্মকর্তা ৯ বছর ধরে জুড়ীতে আছেন বহাল তবিয়তে। সম্প্রতি উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী আনসারুল যোগদানের ৬ মাসের মধ্যেই বদলির আদেশ আসলেও উপসহকারী শামীমের বদলির আদেশ অদৃশ্য হাতের ইশারায় ৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন একই উপজেলায় থাকায় অনেক প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতার সুযোগে একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের মধ্যে দেয়া ফ্রি বিদ্যুৎ সংযোগসহ মিটার প্রদানে পিডিবির এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মিটার ফি বাবদ সরকারি ভাবে ৮শ থেকে ৯শ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও জনপ্রতি ১৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অনেক চা শ্রমিক অভিযোগ করেছেন। গত কয়েকমাস আগে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পিডিবির এ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। আলোচনা সভায় খোদ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ পিডিবির এ কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।বিশাল অঙ্কের বকেয়া থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা এ কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক থাকার সুবাদে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আবার অপেক্ষাকৃত কম বকেয়া বিদ্যুৎ বিল থাকা সত্ত্বেও অনেক অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব মামলায় অনেকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করেও “সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর গ্রাহক নিজ উদ্যোগে সংযোগ নিয়েছেন” এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা দিয়ে নিয়মিত হয়রানি করছেন। মিথ্যা সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও গ্রাহক কর্তৃক পুনঃ সংযোগ খরচ বাবদ ৬০০ টাকা আদায় করছেন। পিডিবির এরকম হয়রানিমূলক মামলা চালাতে গিয়ে উপজেলার অনেক হতদরিদ্র পরিবার ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক গ্রাহকের বৃদ্ধ অসুস্থ পিতাকে বকেয়া বিলের জন্য জেল খাটিয়েছেন শামীম। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের পর দাবিকৃত ঘুষের পঞ্চাশ হাজার টাকা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। অভিযোগ করে তারা আরও বলেন ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ৩ বছর পর ২০২১ সালে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।অনেক গ্রাহকরা বৈধ মিটার পেতে আবেদন করলে তাদেরকে অনেক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পিডিবি অফিসে জমাকৃত পুরাতন মিটার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। পরে আবার এসব মিটার অবৈধ আখ্যা দিয়ে মামলা দিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করে।
এছাড়া এখানকার পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহের কমান্ড এরিয়ার বিভিন্ন স্পটে অসাধু বিদ্যুৎ গ্রাহকরা অটোরিকশা চার্জ করার নামে গ্যারেজ খুলে বসেছে।
গ্যারেজের মালিকরা প্রথমে দুই তারের বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমোদন নেন; পরে পিডিবি অফিসের অসাধু এ কর্মকর্তার যোগসাজশে মিটার বাইপাস করে ডি-২ তারে (তিন তারের লাইন) লাইনের অবৈধ সংযোগ নেয়। এর পাশাপাশি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে বেশ কিছু মুরগি ও গরুর খামারেও। আর এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোহারা নেয় পিডিবির এই অসাধু কর্মকর্তা।
একাধিক সেবা গ্রহীতা অভিযোগ করে বলেন, জুড়ীতে বিদ্যুৎ এর নতুন সংযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি, লাইন অপসারণ, মিটার বিকল, মিটার পরিবর্তন, লোড বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সেবায় গ্রাহক ভোগান্তি চরম আকারে পৌঁছেছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্ধারিত ফি জমা দিয়েও ঘুষ না দিলে গ্রাহকদের দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ যেন পিডিবি বিদ্যুৎ অফিস আর ঘুষ একাকার!
সম্প্রতি সময়ে আরো অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন অবৈধ করাতলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা নিচ্ছেন উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম।শামীমের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বারবার গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে একাধিক সাংবাদিক পিডিবির উপ সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীমের মুঠোফোনে ২০/৩০ বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। উল্টো সাংবাদিকদের ফোন বারবার কেটে দিয়েছেন। যার ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।পিডিবির সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, একই উপজেলায় আট বছর থাকার নিয়ম নেই। তবে লোকবল সংকটের কারণে জুড়ীর উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে এক জায়গায় দীর্ঘদিন রাখা হয়েছে। অন্যরা এই উপজেলায় আসলে থাকতে চায় না। অবৈধ করাত কলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াসহ উপ- সহকারী প্রকৌশলী শামীমের বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে একাধিকবার পিডিবির উপ সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীমকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। উল্টো সাংবাদিকদের ফোন বারবার কেটে দেন।