শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

News Headline :
কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ মান্দায় মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৩শো গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ

এখন সংক্রমণ বাড়ছে সীমান্ত জেলার বাইরে ও

Reading Time: 4 minutes

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নেই, দেশের এমন জেলাগুলোতেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, এমন ২২টি জেলার মধ্যে ৮টি জেলাই সীমান্তবর্তী নয়। সীমান্তের জেলাগুলোতে সংক্রমণ ঠেকাতে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো কার্যকর না হওয়ায় এখন অন্য জেলাতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের বিজ্ঞপ্তিতে কোন জেলায় দৈনিক কত শনাক্ত, সেটি থাকত না। ৫ জুন থেকে জেলায় দৈনিক নমুনা পরীক্ষা এবং শনাক্ত রোগীর তথ্য প্রকাশ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত এক সপ্তাহে (৫–১১ জুন) জেলাভিত্তিক নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত এবং শনাক্তের হারের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে প্রথম আলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে ২২টি জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি। এসব জেলা হচ্ছে নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী, নাটোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুর। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার নড়াইলে, ৬০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই জেলা সীমান্তবর্তী নয়। সংক্রমণ শনাক্তের হারে দ্বিতীয় সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলা। সেখানে শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

জেলাওয়ারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সীমান্ত জেলা না হলেও নড়াইল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, নাটোর ও ফরিদপুর—এই আট জেলায় গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। সংক্রমণ শুরুর দিকে শনাক্তের হার বেশি ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলায়। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল খুবই কম। এবার রোজার ঈদের পরে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করার পর থেকে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে শনাক্তের হার অনেক বেশি। একইভাবে এক সপ্তাহ ধরে উত্তর ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে মৃত্যুও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে মোট মৃত্যুর বড় অংশই চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যু আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাড়ছে সংক্রমণ
গত বছরের মার্চে দেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর চলতি জুনের ৫–১১ তারিখের সপ্তাহে ৩৯টি জেলার শনাক্তের হার জাতীয় শনাক্ত হারের চেয়ে বেশি ছিল। এসব জেলার মধ্যে ১৯টি জেলাই সীমান্তবর্তী জেলা নয়। সীমান্ত থেকে অনেক দূরের জেলাগুলোতেও গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে।

গত সপ্তাহে নড়াইল জেলায় নমুনা পরীক্ষা হয় ১৮৭টি। সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১১৪ জনের। আশপাশের অনেক জেলার তুলনায় নড়াইলে পরীক্ষার সংখ্যা বেশ কম। নড়াইলের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শফিক তমাল প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, এখন সে তুলনায় কম। কিছু গ্রামে সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিশেষ প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু প্রচার চালিয়েও পরীক্ষা করাতে উৎসাহী করা যাচ্ছে না। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি বৈঠক করেছে।

টাঙ্গাইল জেলায় গত এক সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৩৬ জনের। তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২৪৩ জনের। শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন আবুল ফজল মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, টাঙ্গাইল জেলার ওপর দিয়ে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ট্রাক, বাস যাতায়াত করে। এখানকার বিভিন্ন হোটেলে সীমান্তবর্তী জেলার বাসযাত্রীরা খাওয়াদাওয়া করেন। এই যাত্রীদের কারণে সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগামী সোমবার জেলার করোনা কমিটির সভা আছে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সীমান্তের জেলায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি
দেশে গত ৮ মে প্রথম করোনার ভারতীয় ধরন ‘ডেল্টা’ শনাক্ত হয়। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এক মাসের বেশি সময় পর গত মঙ্গলবার দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ায়। আর গত বুধবার দৈনিক শনাক্ত আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত দুই দিনই রোগী শনাক্তের হার ১৩ শতাংশের ওপরে ছিল।

গত এক সপ্তাহে ৩০০–এর বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪ জেলায়। সেগুলোর মধ্যে আটটি জেলা—রাজশাহী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, সিলেট, জয়পুরহাট ও কুষ্টিয়া সীমান্তবর্তী।

রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ সীমান্তবর্তী জেলার সংক্রমণের হার ২৪ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে। এর মধ্যে বাগেরহাটে ৪২, যশোরে ৩৯, ঠাকুরগাঁও ৩৭, চুয়াডাঙ্গা ৩৪ ও কুড়িগ্রামে ৩৩ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার।

উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় কেস ইনভেস্টিগেশন (রোগী অনুসন্ধান), কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং (রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা) এবং সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। ৮ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৪০টিতেই ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে। সরকারের এই গবেষণাতে ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ হিসেবে পরিচিত ভারতীয় ধরনের সামাজিক সংক্রমণেরও (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ বেড়েছে। অনেক হাসপাতালে শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন। শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। তাঁদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অনেক রোগী চাহিদা অনুযায়ী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সেবা পাচ্ছেন না।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা জেলা লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বিকেল থেকে রাজশাহী মহানগরেও সাত দিনের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে স্থানীয়ভাবে লকডাউনসহ বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব উদ্যোগ সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ততটা প্রভাব ফেলতে পারছে না।

করোনায় মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়াল
দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনায় আরও ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৩২ জনের। সর্বশেষ ১ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে ৩১ দিনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪৫৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৮ লাখ ২২ হাজার ৮৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আর এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৫৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

চার বিভাগের চেয়ে বেশি রোগী এক জেলায়
গত এক সপ্তাহে রাজশাহী জেলায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৬৯ জনের; যা রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও বরিশাল—এই চার বিভাগের এক সপ্তাহের মোট সংক্রমণ শনাক্তের চেয়ে বেশি। এই চার বিভাগে গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯০২ জনের।

গত এক সপ্তাহে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, ২ হাজার ৪৩৪ জন। কিন্তু এ সময় ঢাকায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫২ হাজার ৭০৮টি। অর্থাৎ সংক্রমণের হার ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় রাজশাহী বিভাগে, ৪ হাজার ২০৮ জন। ঢাকা বিভাগে ৩ হাজার ৬৬৬, খুলনা বিভাগে ৩ হাজার ১৯৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সবচেয়ে কম ২৫৬ জন রোগী শনাক্ত হয় বরিশাল বিভাগে।

বিভাগওয়ারি তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার সবচেয়ে কম। সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার খুলনা বিভাগে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রংপুর বিভাগে, এরপর রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক পরামর্শক মুজাহেরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যেখানে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি, সেখানেই কঠোর লকডাউন দিতে হবে, তাহলেই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। লকডাউন হলে তা নিশ্চিতভাবে কার্যকর করতে হবে। সীমান্তের উপজেলা ও জেলাগুলোতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। তিনি বলেন, উপজেলায় অক্সিজেন, অক্সিজেন মাস্ক, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলাসহ চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে সেখানে চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com