শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

চরম লোকশানে পাবনার পেয়াজ চাষীরা দ্রুত পেয়াজ আমদানী বন্ধের দাবি

Reading Time: 3 minutes

নিজস্ব সংবাদদাতা,পাবনা :
পেয়াজের ঝাজে নয়, কৃষক এবার কাঁদছে ন্যায্যমুল্য না পেয়ে। দেশের ২য় বৃহত্তম পেয়াজ উৎপাদনকারী জেলার আড়তগুলোতে পাইকার/ক্রেতা নেই বললেই চলে। কৃষক পেয়াজ বিক্রি করতে না পারায় হতাশায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। দ্রæত অবস্থার উন্নতি না হলে পেয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে পাবনার চাষীরা। আগামীতে পাবনায় পেয়াজের চাষ কম হলে দেশে পেয়াজের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
পাবনা দেশের ২য় বৃহত্তম পেয়াজ উৎপাদনকারী জেলা। জেলায় চারা পেয়াজ ৪৪ হাজার ১শ ১৬ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হলে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৮শ ১০ হেক্টরে। সুজানগর উপজেলা দেশের বৃহত্তম ও ১ম স্থান পেয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা। শুধু সুজানগরেই ১৭ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে পেয়াজ চাষ করা হয়েছে। পাবনার সুজানগর, বেড়া, সাঁথিয়া, ঈশ্বরদী ও পাবনা সদর উপজেলার পাশ দিয়ে বিস্তির্ন চরাঞ্চল। এই চরের জমিতে তাহেরপুরি, কিংস জাতিয় ও বিভিন্ন কোম্পানীর হাইব্রিড পেয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। সরকারী হিসাবে হেক্টর প্রতি সাড়ে ১৪মেট্রিক টন পেয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে কৃষকের দাবি এবারে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ৩০ মন পেয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এ বছরের পেয়াজের চারা রোপনের শুরুতে অতিবৃষ্টি পেয়াজের উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া পেয়াজের বীজ মানসম্মত না হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। এর ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা হতে পারে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এবারে পাবনায় ৬ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬শ ৮ মেট্রিকটন পেয়াজ উৎপাদন হবে জানিয়েছেন পাবনা কৃষি অফিস।

সুজানগর বনকুলা গ্রামের আহম্মেদ নামের এক কৃষক জানান, পেয়াজের উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও দাম নিয়ে আমরা ব্যাপক হতাশায় পড়েছি। যেখানে বিঘা প্রতি পেয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে গড়ে ১৮ থেকে ৩০ মন পেয়াজ। গড়ে প্রতিমন পেয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১১ থেকে ১২শত টাকা। বীজ, সার তেল ও শ্রমিকের মুল্য বৃদ্ধিতে পেয়াজের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। বর্তমানে পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৮শ টাকা। তিনি আরো জানান, তার মত বেশিরভাগ চাষিরা ঋন নির্ভর পেয়াজ চাষ করাই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। অনেকে ঋনের কিস্তির দায়ে বাড়ি ছেড়েছেন। সরকারী সহয়তা না পেলে বেশিরভাগ চাষীই ঋন খেলাপি হয়ে যাবে।

সুজানগর বনকোলা হাটের আড়তদার শফিকুল ইসলাম স্বপন মেলেটারি জানান, সুজানগরের বেশিরভাগ আড়তগুলো রয়েছে পাইকার বা ক্রেতা শুন্য। যেখানে মৌসুমে একটি আড়তে গড়ে ৮/১০ট্রাক পেয়াজ কেনা-বেচা হতো, সেখানে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ ট্রাক। আবার দেশের বিভিন্ন আড়তে পেয়াজ পাঠানো হলেও চালানের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কৃষক সঠিক দাম না পাওয়ায় পাওনাদারদের পাওনা মিটাতে কম দামে পিয়াজ বিক্রি করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যাচ্ছে। তিনি এও জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে চাষিরা পেয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। কৃষকের ন্যায্য মুল্য পেতে এখনই পেয়াজ আমদানী বন্ধ করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

আরিফপুর হাটের ইকবাল নামে এক কৃষক জানান, তিনি ১০মন পেয়াজ নিয়ে এসেছিলেন হাটে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলার আরিফপুর হাটের জনৈক আড়তদার জানান, পেয়াজের ব্যাপক আমদানী। সে তুলনায় পাইকার বা জেলার বাইরের ক্রেতা নেই বললেই চলে। আমরা পেয়াজ কিনে আড়তে ফেলে রেখেছি। দু’একদিনের মধ্যে যদি চাহিদা বাড়ে তাহলে বিক্রি করবো।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামার বাড়ি, পাবনার অতিরিক্ত উপপরিচালক শষ্য কৃষিবিদ মোঃ রোকনুজ্জামান জানান ৮০ভাগ পেয়াজ তোলা হয়েছে (শনিবার পর্যন্ত)। চলতি সপ্তাহে পেয়াজ উত্তোলন শেষ হয়ে যাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে। তিনি এও জানান, পাবনায় আধুনিক পেয়াজ সংরক্ষনাগার নেই। সরকারীভাবে একটি পেয়াজ সংরক্ষনাগার করা হলে কৃষকেরা সেখানে পেয়াজ সংরক্ষন করে পরবর্তিতে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ পাবে।
কৃষক,ব্যাপারীসহ পাবনার সচেতন মহল মনে করেন, পেয়াজ চাষীদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই পিয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে পাবনার চাষীরা পেয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে আগামীতে দেশে পেয়াজের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমদানি নির্ভর হয়ে পরতে পারে এই কৃষি পণ্যটি।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com