শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী:
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ড্রাম ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে শফিকুল ইসলাম (৩০) ট্রলির হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শফিকুল ইসলাম গোদাগাড়ী মডেল থানার কষাপাড়া গ্রামের মানিকের ছেলে। গত ২০ জানুয়ারী ভোর ৬ টার দিকে গোদাগাড়ী পৌরসভা ওয়াসা সংলগ্ন রাস্তায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ট্রাকের চালক পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি জব্দ করে নিয়ে যায় গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ। শুরু হয় গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিন এর ঘুষ বানিজ্য। ট্রাকের মালিক গাফ্ফার থানায় গিয়ে ওসির সাথে যোগাযোগ করলে ওসি বলেন, নিহত পরিবারের সাথে আপোষ-মিমাংসা করতে হবে এবং ট্রাক ছাড়াতে আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এরপর ট্রাক মালিক নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে একটি আপোষ-মিমাংসায় বসেন। আপোষ-মিমাংসায় নিহতের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নগদ অর্থ দিয়ে স্ট্যাম্পে এফিডেভিট করে আপোষ-মিমাংসা করেন। এরপর গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিন এর নিকট মিমাংসার বিষয়টি অবগত করেন ট্রাক মালিক। ওসি ট্রাক মালিক গাফ্ফারের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। ট্রাক মালিক ওসিকে একটি খামে ২০ হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে চলে যান। এদিন রাতে ট্রাক মালিকের চাচাতো ভাই ইব্রাহিম, সাংবাদিক আবির ও রাজশাহীর একজন সিনিয়র সাংবাদিক নিয়ে থানায় ওসির সাথে যোগাযোগ করেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ওসি ট্রাক মালিকের চাচাতো ভাইয়ের উপর খুদ্ধ হয়ে বলেন গাফ্ফারের সাথে আমার কথা হয়েছে তারপরে সাংবাদিক কেন ? এমন আচরণে রাজশাহী থেকে ওসির নিকট যাওয়া দৈনিক খোলা কাগজের সাংবাদিক মাসুদ রানা রাব্বানী হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি ওসিকে প্রশ্ন করেন, আমি আপনার সাথে কথা বলতে আসায় আপনি কি আমার উপর মন খারাপ করেছেন ? উত্তরে ওসি বলেন ট্রাক মালিকের সাথে কথা হয়ে যাওয়ার পরে আপনাদের আগমনের বিষয়টা বুঝলাম না। আগামীকাল ২১ জানুয়ারী ভুক্তভোগীর পরিবারের সাথে আপোষ-মিমাংসার এফিডেভিট কপি নিয়ে ট্রাক মালিককে থানায় যোগাযোগ করতে বলবেন আমি ট্রাক ছেড়ে দিব। ২১ জানুয়ারী ট্রাক মালিক গাফ্ফার ওসির সাথে যোগাযোগ করলে ওসি পুনরায় অবশিষ্ট ৩০ হাজার টাকার দাবী করেন এবং তার সাথে থাকা সাংবাদিক আবিরকে দেখিয়ে কটুক্তি করে বলেন হাফ সাংবাদিক সাথে নিয়ে এসেছেন কেন ? ট্রাক মালিক ওসির দাবীকৃত অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা দিতে অপারগতা জানালে ওসি নানা ধরনের হয়রানীমূলক কথা বলেন। যেমন- দূর্ঘটনা কবলিত স্থানে অন্যান্য যারা জখম হয়েছে তাদের সাথে আপোষ-মিমাংসা করে লিখিত কাগজ নিয়ে আসেন। এতে ট্রাক মালিক বেকায়দায় পড়েন। তিনি বলেন ঘটনাস্থলে আর যারা সামান্য আহত হয়েছিলেন তাদেরকেও চিকিৎসা খরচ দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে গেছেন, আমি তাদের চিনিনা। তাছাড়া তারা থানায় কোন অভিযোগও করেননি। এমনকি ভুক্তভোগির লোকজন থানায় উপস্থিত হয়ে তাদের কোন অভিযোগ নাই, তাদের কোন দাবী নাই বলে আপনাকে জানিয়েছেন। তারপরেও ট্রাকটি ছাড়তে কিসের সমস্যা ? এদিন সকাল থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ওসি ট্রাক আটকে রাখেন এবং ট্রাক মালিক ও সাংবাদিক আবিরের সাথে অসোভন আচরণ করেন। শেষে প্রতিকার পেতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রাজশাহী, মোঃ খাইরুল আলম এর মুঠো ফোনে ফোন দিয়ে সাংবাদিক মাসুদ রানা রাব্বানী ওসির হয়রানীর সার্বিক বিষয়গুলি অবগত করলে বিষয়টি দেখছি বলে আস্বস্ত করেন এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। এদিন রাত ১২ টায় উর্দ্ধতন কর্মর্তার হস্তক্ষেপে ট্রাকটি মালিকের জেম্মায় দিয়ে দেন ওসি।
হয়রানী এবং ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে ২০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে ওসির মুঠোফোনে জানতে চাইলে ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিন ঘুষ নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন। তবে হয়রানীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। উল্লেখ্য, রাজশাহীর গোদাগাড়ীকে বলা হয় হেরোইনের রাজধানী। সেখানে কোটি কোটি টাকার হেরোইন জেলা ডিবি র্যাবের হাতে আটক হলেও গোদাগাড়ী মডেল থানার কোন উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই এমনই দাবী স্থানীয়দের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয়রা এবং গোদাগাড়ী থানার দুইজন থানা পুলিশ জানায়, গোদাগাড়ীতে হেরোইনের ব্যবসা খোলামেলাই চলছে। আর এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের সাথে গোপন সখ্যতা রয়েছে ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিনের।