শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মোঃ মাহমুদ উদ্দিন,জুড়ী:
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে পিডিবির প্রকৌশলীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে করাত কলে অবৈধ মিটার সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত এ কর্মকর্তা হলেন জুড়ীতে কর্মরত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির উপ- সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম। এ অভিযোগের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো অভিযোগ। উপর মহল ও প্রভাবশালী সরকার দলীয় একাধিক নেতাকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে গেলেও তিনি থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।জানা যায়, উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কলাবাড়ী বাজারে সরকারি অনুমোদন না নিয়েই গড়ে উঠেছে অবৈধ সাব্বির স-মিল। বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফের ভাই সাব্বির আহমদ দুই/ তিন বছর আগে এ করাত কল শুরু করেন। প্রথমে জেনারেটর দিয়ে এর স-মিল চলছিল। পরে পিডিবির উপ- সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীমকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে একটি মিটার নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন সাব্বির। প্রায় দেড় বছর যাবত অবৈধভাবে এ মিটারটি চলে আসছে।সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শ্রমিক করাত কলে গাছ কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশেই সংযোগ মিটারটি বক্সের মধ্যে তালাবদ্ধ রয়েছে। সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে আসেন ম্যানেজার। করাত কলের লাইসেন্স ও মিটারের বৈধতা নিয়ে ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মালিক সাব্বির আহমেদ কে ফোন দেন। কিছু সময়ের মধ্যেই সাব্বির আহমেদ হাজির হন। তার কাছে করাত কলের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি হাইকোর্টের মামলা চলছে বলে জানান। অনুমোদন না নিয়ে এভাবে করাত কল চালানো যায় কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান সবাই যেভাবে চালাচ্ছে আমিও সেভাবে চালাচ্ছি। করাত কলের বৈদ্যুতিক মিটার কার নামে আছে বললে তিনি প্রথমে তার নিজের নামেই মিটার রয়েছে বলে জানান। পরে মিটার খুলে দিলে মিটারের নাম্বার ( ১০৩৩০০৩৩০৯৪, টিটিসি ) অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখা যায় মিটারটি রয়েছে দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের ইছাক আলীর নামে। এ মিটারটি একটি অটো রাইস মিলের ছিল বলে জানা যায়। ইছাক আলীর মিটার আপনার স-মিলে কিভাবে আসলো এমন প্রশ্নের জবাবে সাব্বির আহমেদ বলেন, পিডিবির উপ- সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম কাগজ পত্র দেখে মিটার দিয়েছেন। এটি কার মিটার শামীম সাহেব জানেন? বিদ্যুৎ বিভাগ আমার স-মিলে মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। এখানে বৈধ অবৈধ এর প্রশ্নই উঠে না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, অবৈধ করাত কল হওয়ায় বৈধ সংযোগ না পেয়ে পিডিবির উপ- সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম কে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে আরেকজনের অটো রাইস মিলের মিটার অবৈধভাবে সংযোগ নিয়েছেন সাব্বির আহমেদ।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির উপ- সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম বলেন, এ করাত কলের বৈধ কাগজপত্র থাকায় আমরা বিদ্যুৎ মিটার ও সংযোগ দিয়েছি। করাতকলের মালিক সাব্বির আহমদ কিন্তু মিটার ইছাক আলীর নামে কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন তারা মনে হয় নাম ট্রান্সফার করেছে। সাব্বির আহমেদ দেড় বছরেও নাম ট্রান্সফার করেননি এমন তথ্য প্রতিবেদক নিশ্চিত করলে তিনি বলেন, না করলে করে ফেলবে, আর কোন গ্যাপ থাকলে পূরণ করবে। আর অনেক জিনিস তো নজরেও আসে না। অটো রাইস মিলের মিটার করাত কলে কিভাবে সংযোগ দিলেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই এটি করেছি। অনুমতির কোন কাগজপত্র সাব্বির আহমেদ দেখাতে পারেননি এমন প্রশ্ন করলে তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ২ লক্ষ টাকা ঘুষের বিষয়ে তিনি বলেন এটি মিথ্যা।সাব্বির আহমেদের করাত কলের বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: আলাউদ্দিন জানান, এটি অবৈধ একটি করাত কল। আইন অনুযায়ী এ করাতকালে কোন বৈধ সংযোগ থাকার কথা নয়। এসব অবৈধ করাত কলের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব অবৈধ করাত কলের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন না।জুড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলী কবির আহমদ বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমার আসার মাত্র দুই মাস হয়েছে। এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে আমি দেখব। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী কুলাউড়া মোঃ রাসেল আহমদ বলেন, সমিল বৈধ না অবৈধ এটা আমার দেখার বিষয় নয়। এটা দেখবে রেঞ্জ অফিস। তবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোন মিটার বা সংযোগ প্রদান করা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। এখানে শামীম সাহেব না আরো অন্য কোন সাহেব জড়িত সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। যারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং গ্রাহকের বিরুদ্ধে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ মামলা করা হবে।