শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ মাহমুদ উদ্দিন,জুড়ী:
মৌলভীবাজার জেলার জড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নর অংশ জুড়ে রয়েছে জুড়ী নদী। গত ১৪ অক্টোবর ২০২৩ একটি দুষ্ট চক্র নদীতে বিষ দেয় বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম শেলু বিজিবির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করেন।তাছাড়া বছরে একাধিক বার নদীতে বিষ দিচ্ছে। বিষক্রিয়ায় মরছে নদীর মাছ ও জলজ প্রাণি। ধ্বংস হচ্ছে নদীটির চিরচেনা জীববৈচিত্র্য। আর এতে করে নদীটির ঐতিহ্য ধ্বংসের দোরগোড়ায়।জানা যায় দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছে ভরপুর ছিলো ঐতিহ্যবাহী জুড়ী নদীতে। শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে নানা জাতের মাছ ধরার উৎসব হত। নদী তীরের বাসিন্দারা হগরা,পলো,কুচা আর জাল দিয়ে মাছ ধরা উৎসবে অংশ নিতেন। এখনো সেই রেওয়াজ থাকলেও নেই আগের মত মাছ। নানা কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হল বছরে কয়েক বার বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন। ওই দুষ্ট চক্রের কবলে পড়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জুড়ী নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন গেল বছর নদীটি সংস্কার হয়। এতে তাদের প্রত্যাশা বাড়ে আগের মত মাছ ও জীববৈচিত্রের। কিন্তু নদীর উজানে একটি দুষ্ট চক্রের খপ্পেরে পড়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে জুড়ী নদী।জানা গেল নদীর ভাটিতে জালের ফাঁদ আর উজানে দেওয়া হয় বিষ। মরা আধমরা ছোট বড় মাছ ভেঁসে এসে আটকা পড়ে ওই ফাঁদে। এভাবেই পরিকল্পিত অপকৌশলে বিষ প্রয়োগে ধরা হচ্ছে মাছ। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির নানা প্রজাতির মিঠাপানির মাছ। আর লুট হচ্ছে হাজার হাজার টাকার মাছ। ওই দুষ্ট চক্রের কবলে পড়ে এখন মহাহুমকিতে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার অন্যতম জুড়ী নদী ও দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি হাওরের দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি।নদী তীরের বাসিন্দারা জানালেন প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে একটি দুষ্ট চক্র নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। কিন্তু এবছর অনেক আগে থেকে ওই চক্রটি বিষ দিয়ে মাছ নিধন শুরু করেছে।নদী তীরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান গেল প্রায় মাস দিন থেকে নদীর উজানে বিষ দিয়ে একটি দুষ্ট চক্র নদীর ভাটি এলাকায় বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে নানা কৌশলে মাছ ধরছে। এতে করে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের ছোট বড় মাছের পাশাপাশি নিধন হচ্ছে সাপ,ব্যঙ,কাঁকড়া,কুচিয়াসহ নানা জলজ প্রাণি। মহাহুমকির মুখে পড়ছে নানা জাতের জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদের খাবার ও বাসস্থান। বিষক্রিয়ায় নষ্ট হচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণির প্রাকৃতিক খাবার ও প্রজনন। ব্যহত হচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণির বংশ বিস্তার।নদীটির উৎস জুড়ী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব অংশের পাহাড়িয়া অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ধর্মনগর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এবং নদীটির শেষ ভাগ গিয়ে মিলিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকিতে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুড়ী নদী তীরের কয়েকজন বাসিন্দারা জানান ফুলতলা ইউনিয়নের কিছু দূষ্কৃতিকারী প্রতিবছরই নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। রাতের শেষ দিকে অথবা ভোরে নদীর উজানের দিকে বিষ দেয় ওই চক্র। আর ওই চক্রের সদস্যরা নদীর ভাটি অঞ্চলে জাল দিয়ে ও অন্যান্য কৌশলে মাছ ধরে। নদীতে মরা বা আধ মরা ও পঁচা মাছ দলবেঁধে ভাসতে দেখে নদী তীরের বাসিন্দারা বুঝতে পারেন নদীতে বিষ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন এভাবে নদীতে বিষ দেওয়ার ফলে ছোট বড় মাছ মরে যাওয়াতে নদীতে এখন আর আগের মত মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। মহাহুমকিতে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি ও এর আশপাশের অনেক ছোট ছোট গাঙ ও খাল বিলের মাছ ও জলজ প্রাণি। তারা বলেন মৎস্য বিভাগ যদি জোরালো প্রদক্ষেপ নিত তা হলে ওই রকম নির্দয় ভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ সাথে জলজ প্রাণিও নিধন হতনা।এবিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম সেলু বলেন জুড়ী নদীর সাথে ফুলতলা ইউনিয়নের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। জুড়ী নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন । তিনি দেশীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতা চান। এবং জুড়ী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেন না অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।