শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

ঝালমুড়ি বিক্রি করে স্বাবলম্বী তিন ভাই

Reading Time: 3 minutes

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর :

বিনা পুঁজিতে প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকার লোভনীয় স্বাদের ঝালমুড়ি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিন ভাই। এই ব্যবসার টাকায় জমি কিনে বাড়িও করেছেন তারা। ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা ও বিয়ে দিয়েছেন এই ঝাল মুড়ির ব্যবসার টাকাতেই। এরা হলেন- জীবন কৃষ্ণ তুরাহা, পরান কৃষ্ণ তুরাহা ও মদন কৃষ্ণ তুরাহা। তাদের বাড়ি শেরপুর জেলা শহরের রাজবল্লভপুর এলাকায়। তারা ওই এলাকার মৃত রঙ্গিলা তুরাহার ছেলে। পরান কৃষ্ণ তুরাহা জানান, আজ থেকে ৪০ বছর আগে শুরু হয় এই ঝালমুড়ির ব্যবসা। এর আগে তিনি ও তার অন্য দুইভাই বাইসাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। এ থেকে যা আয় হতো ওই টাকায় তার সাত সদস্যের পরিবার চালানো অনেক কষ্ট হয়ে যেত। কখনো এক বেলা খেয়েও দিন পার করতে হতো। পরবর্তীতে মোটরবাইকের যুগ চলে আসায় ওই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা শুরু করেন পান, বিড়ি ও সিগারেট বিক্রির ব্যবসা। জেলা শহরের গৃদ্দানারায়নপুর এলাকার সত্যবতী সিনেমা হলের উল্টো পাশে ছোট্ট একটি দোকান ভাড়ায় নিয়ে চলছিল এই ব্যবসা। কিন্তু এ ব্যবসাতেও ভালো কিছু করতে পারছিলেন না। যে কারণে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কোনো রকমে জীবন কাটাতে হচ্ছিল। তিনি আরো জানান, এ অবস্থায় শহরের গোয়ালপট্টি মোড়ে স্থানীয় সম্ভু নাথের ঝালমুড়ির দোকান দেখে তিনিও এই ব্যবসা শুরু করার মনস্থির করেন। পুঁজির সংকট থাকায় ঝালমুড়ি তৈরি করার সকল উপকরণ বিভিন্ন দোকান ঘুরে বাকিতে সংগ্রহ করে শুরু করেন ব্যবসা। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খাদ্য মান ও এর স্বাদ অটুট থাকায় দিন দিন এই দোকানের নাম বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে। আর বাড়তে থাকে ক্রেতা সমাগম। পরান কৃষ্ণ তুরাহা জানান, তার দোকানে পঁচা-বাসি খাবার বিক্রি হয় না। ঝালমুড়ি তৈরি করার প্রধান উপকরণ মুড়ি, খাঁটি সরিষার তেল, ডাল, ছোলা, বেগুনি, দেশি পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, ডিম ও সয়াবিন তেল প্রতিদিন কেনা হয়। ওইসব পণ্য বাকিতে কিনে ব্যবসা শেষে রাতের বেলা সব বকেয়া পরিশোধ করা হয়। আর এ খাবারগুলো টাটকা তৈরি করা হয় সেজন্য এর চাহিদাও বেশি থাকে।
আরেক ভাই মদন কৃষ্ণ তুরাহা বলেন, এক সময় আমরা প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত একটা পর্যন্ত ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় আগের মতো পরিশ্রম করতে পারি না। এখন সন্ধ্যা থেকে দোকান খোলা হয়। এর পরপরই ক্রেতা সাধারণের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৮০০-৯০০ জন ক্রেতা এখানে ঝাল মুড়ি খেতে আসেন। সর্বনি¤œ ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা প্লেট মূল্যের মুড়ি বিক্রি হয়। আর চাহিদা অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন ১০-১২ কেজি ছোলা, ৭-১০ কেজি ডাল, ৪-৬ কেজি বেগুনী, ৯-১২ কেজি পেঁয়াজ, ১০-১২ কেজি মুড়ি ও শতাধিক ডিমের প্রয়োজন পড়ে। গড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকার ওপর ঝাল মুড়ি বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন, এক সময় এই দোকান সত্যবতী হলের সামনে থাকলেও বিভিন্ন কারণে দুইবার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। বর্তমানে শহরের মাধবপুর এলাকার শনি মন্দিরের উল্টোপাশে ব্যবসা করছি। এই দোকানটি নিতে মালিককে আড়াই লাখ টাকা সিকিউরিটি মানি দিতে হয়েছে। আর প্রতিমাসে ভাড়া ছয় হাজার টাকা।
বড় ভাই জীবন কৃষ্ণ তুরাহা বলেন, গরমকালে ঝালমুড়ি বিক্রি কিছুটা কম হলেও শীতের সময় এই ব্যবসা তিনগুণ বেড়ে যায়। তখন দোকানে বসার জায়গা থাকে না। তখন মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খায়। এই দোকানে গরিব, ধনী সবাই ঝালমুড়ি খেতে আসে। অনেক সময় আমরা বিনা পয়সায় গরীব মানুষদের মুড়ি খাওয়াই।
সদর উপজেলার কুসুমহাটি এলাকার কৃষক আইনউদ্দীন মোল্লা বলেন, প্রায় দিন কোনো না কোনো কাজে শহরে আসতে হয়। সারাদিন কাজ শেষে ফেরার পথে এই দোকানের লোভনীয় স্বাদের ঝালমুড়ি খেয়ে বাড়ি ফিরি। গত ৮-১০ বছর যাবত এই দোকানে যাতায়াতের ফলে ওই তিন ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয়ে গেছে।
শেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সোলায়মান বলেন, একবার বন্ধুদের সঙ্গে পার্শববর্তী জামালপুর শহর থেকে শেরপুর ফেরার পর ভীষণ খিদে পেয়ে যায়। তখন এই দোকানে ঝালমুড়ি খেতে আসি। এর স্বাদ আর ভুলতে পারিনি। এখন প্রায় দিনই এখানে আসি। পরান কৃষ্ণ তুরাহা বলেন, এক সময় অর্থাভাবে অনাহারে থাকতে হতো। কিন্তু এখন আর ডাল আর ভাতের অভাব নেই। নয় সদস্যের পরিবার নিয়ে ভালো আছি। এই ঝালমুড়ির ব্যবসার টাকা দিয়ে জমি কিনে বাড়ি করেছি। এক ছেলে প্রদীপ তুরাহা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছে। সে এখন সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরেক ছেলে দীপ কৃষ্ণ তুরাহা শেরপুর সরকারি কলেজে বিবিএ বিষয়ে পড়াশোনা করছে। আর এক মেয়ে পূজা রানী তুরাহা পঞ্চম শ্রেণিতে। এছাড়া অন্য ভাইদের ছেলেরা পড়াশোনা করছে। আর এক ভাতিজির বিয়ে হয়েছে। সরকারি কোনো অনুদান বা সুবিধা চান কিনা এমন প্রশ্নে পরান কৃষ্ণ তুরাহা মুচকি হেসে বলেন, ঈশ্বর আমাদের অনেক ভালো রেখেছে। আমার কোনো কিছু চাওয়ার নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com