শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, নীলফামারী:
নীলফামারীর ডিমলায় ভুল চিকিৎসা ও আল্ট্রাসনোগ্রামের রির্পোটে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (৫ মার্চ/ ২৩) রাতে উপজেলা সদরের লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রসূতির আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ভুল তথ্য এসেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাথরখুড়া গ্রামের সজীব ইসলামের স্ত্রী প্রসূতি রোজিফা আক্তার লাইফ কেয়ার হসপিটালে পরামর্শের জন্য গেলে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বলেন দ্রুত সিজার করতে হবে।এরপর রাত দশটার দিকে কোন ধরনের পরীক্ষা না করেই ক্লিনিকের ডাক্তার আইনুল হক প্রসূতিকে সিজার করে একটি অপরিপক্ক ছেলে বাচ্চা প্রসব করান। জন্মের পরেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। মৃত নবজাতকের দাদা নজরুল ইসলাম জানান, গত ১০ ফেব্রু/২৩ মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছেলের স্ত্রী প্রসূতি রোজিফাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। রিপোর্টে সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ ৩ মার্চ /২৩ বলে উল্লেখ করা হয়। এরআগে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আরও তিনবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়েছিল রোজিফার। সেখানেও প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ একই উল্লেখ করা হয়েছে।এদিকে, সম্ভাব্য তারিখের ২ দিন পরেও রোজিফার প্রসব বেদনা ছিলোনা। পরে (৫ মার্চ/২৩ ) তাকে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। হাসপাতালের দায়িত্ব রত নার্স হাসিনা বেগম আলট্রাসোনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে প্রসূতিকে দ্রুত লাইফ কেয়ার হসপিটালের সিজার করানোর পরামর্শ দেন। পরে তাকে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ম্যানেজার তাইজুল ইসলাম জানান রোগীর ডেলিভারির সময় হয়ে গেছে। রোগীকে সিজার করা না হলে ক্ষতি হবে। মৃত নবজাতকের মা রোজিফা বেগম বলেন, আমি যখন ওই ক্লিনিকে পরামর্শের জন্য যাই তখন পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম। হসপিটালের লোকজন নতুন করে আল্ট্রাসনোগ্রাম না করেই বলে আজকেই আপনাকে সিজার করতে হবে, নয়তো সমস্যা হবে। সমস্যার কথা শুনে ভয়ে আমরা রাজি হই। তারা সময় পরিপূর্ণ না হতেই শুধু টাকার জন্য আমার সিজার করেছে। তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে আমি এর বিচার চাই। রোজিফার অস্ত্রপচার করা চিকিৎসক আইনুল ইসলাম বলেন, প্রসূতির আল্ট্রাসনোগ্রামের রির্পোট অনুযায়ী অপারেশন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রিপোর্টে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দেখানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন,নিয়ম অনুযায়ী আরো কিছুদিন পর ডেলিভারি হওয়ায় কথা।কিন্তু চারবারের আল্ট্রাসনোগ্রামের রির্পোটে একই সময় উল্লেখ থাকার কারণে তারা প্রসূতির আর কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা করেননি। রোগীর স্বজনরাও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মানিক ইসলাম বলেন, তাদের রির্পোর্টে ভুল থাকতেই পারে । কিন্তু এক মাস আগের আলট্রাসোনোগ্রাম রিপোর্ট দিয়ে ওই ক্লিনিক কেন সিজার করাবে। এর দ্বায়ভার আমাদের নয়। সিজার করার আগে, আলট্রাসোনোগ্রাম করার নিয়ম রয়েছে। এটা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গাফিলতি বলেন তিনি। আল্ট্রাসনো র রির্পোট প্রদানকারী ডাক্তার আলিফ লায়লার সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ওই ক্লিনিকের কয়েক জন নার্স ও মৃত নবজাতকের পরিবার বলছে, মৃত বাচ্চাটি দেখে যথেষ্ট অপরিপক্ক মনে হয়েছে। অন্তত আরো দু’মাস গর্ভে থাকার কথা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,অনুমোদনহীন লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় উপজেলা প্রশাসন লাইফ কেয়ার হসপিটাল সিলগালা করে দিয়েছিল। এর আগেও প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুর ঘটনায় একাধিকবার ক্লিনিকটি সিলগালা করেছে প্রশাসন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে বারবার তারা পার পেয়ে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।