রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

News Headline :
কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ মান্দায় মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৩শো গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ

দশানি নদীর ভাঙন অব্যাহত,আতঙ্কে চরাঞ্চলের মানুষ

Reading Time: 4 minutes

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
দশানি নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছেন শেরপুরের চরাঞ্চলের মানুষ। গত ২০ বছরে ৭ নম্বর ও ৬ নম্বর চর এলাকায় নদীগর্ভে চলে গেছে শত শত একর আবাদি জমি ও বাড়িঘর। কিন্তু ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বছর নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এবার হুমকির মুখে পড়েছে বাজার, দুই তলা মসজিদ, মাদরাসা, শহীদ মিনার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান। এতে চরম আতঙ্ক আর হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।শেরপুর সদরের কামারের চর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ছাইফুদ্দিন মন্ডল (৬০)। দুই বছর আগে দশানি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় তার বসতভিটা ও বাড়িঘর। ফের নতুন করে বাড়ি করেন নতুন জায়গায়। কিন্তু এবারও নদী ভাঙতে ভাঙতে ইতোমধ্যে তার উঠান ও টিউবওয়েল নিয়ে গেছে। এখন টিকে আছে শুধু বসত ঘর। যেকোনো সময় তাও নদীতে চলে যাবে। একই অবস্থা মোহাম্মদ কাইম উদ্দিনের (৬৫)। বাড়ির সামনে দিয়ে হাটে যাওয়ার ১ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি সম্পূর্ণ গত দুই সপ্তাহে নদীগর্ভে চলে গেছে। ৭নং চরে গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় দশানি নদীর ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। বসতভিটা, কবরস্থানসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।সপ্রতি ৭নং চরে গিয়ে দেখা যায়, এবার ভাঙনের তোড়জোর বেশি। গেল দুই সপ্তাহে অন্তত ৫০ একর আবাদী জমি, ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে হারিয়ে গেছে গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। প্রতিবছরই নদী ভাঙন দেখা দেয়, কিন্তু দেখা মেলে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে। ফসলি জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে ভুক্তভোগীরা।স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, আমার বাবার বয়স ৯০ বছর। আমার বাড়ি এ নিয়া চারবার নদী নিয়া গেছে। এখন বয়সও শেষ আর জমিও নেই যে, আরেক জায়গায় ঘর তুলবো । জমিও নদীতে চলে যাওয়ায় আবাদ করার আর জায়গা নেই। অনেক কষ্টে আছি। ৭নং চরের পূর্ব পাড়ার বাছিল উদ্দিন, শামছুদ্দিন, হাসমত আলী, ছংকু মিয়া, নওশের ব্যাপারীর ফসলি দশানি নদীর গর্ভে চলে গেছে। তারা জানান, আমাদের ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। একরের পর একর জমি এভাবে প্রতিবছর নদীতে বিলিীন হচ্ছে। কিন্তু এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে কোনদিন দেখেনি। আবাদি জমি হারিয়ে এখন আমরা নিঃস্ব। ফসল ফলানোর মতো জায়গা ত নদীতে চলে গেছে, তাই আবাদ করার আর জায়গা নেই। অনেক কষ্টে আছি। আগুনে পুড়লে মাটি থাকে কিন্তু নদীতে ভাঙলে কিছুই থাকে না। নদীর গতিপথের ব্যাপারে একই এলাকার আলহাজ্ব শের আলী (৮০) বলেন, আগে নদীটি অন্তত বর্তমান অবস্থান থেকে কমপক্ষে দেড়শ ফিট দূরে ছিল। ওপারে নদী ভরাট হয়ে এপারে প্রতি বছর ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে নদীর গতিপথ পুরো পাল্টে গেছে। ৭নং চরে গিয়ে আরও দেখা যায়, ভাঙ্গনের হুমকিতে আছে ৭নং চর বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ মিনার, কবরস্থান, হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও ৭০লাখ টাকা ব্যায়ে নব নির্মিত দুতলা জামে মসজিদ। দ্রত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে এসব প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নদীতে ভেঙে গেলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে প্রত্যন্ত এ পল্লীর নতুন প্রজন্ম। ৭নং চর বটতলা বাজারের ব্যবসায়ী পল্লী চিকিৎসক বাদশাহ মিয়া বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী আমাদের এ বাজারটি। স্থানীয় বিভিন্ন চরের মানুষ এখানে আসে বেচাবিক্রি করতে। কিন্তু দশানি নদীটি এখন বাজার হতে মাত্র ১শ ফিট দূরে আছে এবং ভাঙন অব্যাহত আছে। জরুরি একটা ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় বাজারটি নদীগর্ভে চলে যাবে। আরেক পল্লী চিকিৎসক জহুরুল হক বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাজারটি তিন যুগ ধরে আশেপাশের কয়েক হাজার মানুষের বেঁচাবিক্রির কেন্দ্রস্থল। এ বছর নদীর ভাঙনের তোড়জোড় খুব বেশি। নদীটি বাজারের কাছাকাছি এসে গেছে। দ্রæত বাঁধ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানাচ্ছি।স্থানীয় সমাজসেবক ফুল মামুদ, হামিদুর রহমান, আক্কাস আলী, শফিউল আলম বলেন, ৭নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ ফিট দূরেই নদীটি চলে এসেছে। দ্রত ভাঙন ঠেকানো না গেলে স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের এখানে বেশিরভাগ লোক দরিদ্র কৃষক, একেতো আবাদি জমি হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। আবার যদি স্কুলটিও নদীতে চলে যায় তাহলে তাদের ছেলেমেয়েদের দূরের কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পারব না। যার ফলে বেশিরভাগ শিশু শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়ে পড়বে। ৭নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শফিউল আলম বলেন, এটা একটি গরিব এলাকা। এখানে একটি স্কুল। এ স্কুলটি নদী যদি নিয়ে যায়, তাহলে শিক্ষাগ্রহণের আর উপায় থাকবে না। ব্যবস্থা না নিলে নতুন করে জমি দিয়েও স্কুল দেয়ার মতো ব্যবস্থা নাই।৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ ইসলাম শিপন, হাবিবুর রহমান হাবি, সোহাগ মিয়া, সুলাইমান শেখ, সাদিয়া জাহান ও শারমিন আক্তার বলেন, দশানি নদীটি আমাদের স্কুলের খুব কাছে এসে গেছে। কেবল একটি বাড়ি আছে মাঝখানে। যেভাবে ভাঙছে রাক্ষুসে নদীটি, এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রæতই আমাদের স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, স্কুলটি যেন রক্ষা করতে নদীতে পাইলিং বা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকায়। যদি স্কুলটি না থাকে তা হলে আমরা কোথায় পড়তে যাবো। আমরা গরিব মানুষ, দূরে পড়ার মতো টাকা আমাদের বাবামার নেই।৭নং চর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের খতিব ও স্থানীয় মদিনাতুল উলুম নূরানিয়া হাফেজিয়া কওমী মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা ছানাউল্লাহ বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় এ গ্রামে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুইতলা একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। একটি কওমী মাদ্রাসাতে সব মিলিয়ে শতাধিক বাচ্চা পড়াশুনা করতেছে। দশানি নদীর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এ দুটি প্রতিষ্ঠান। নদীটি আগে অনেক দূরে থাকলেও এখন ভেঙে অনেকটাই কাছাকাছি এসে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। দ্রæত একটি পদক্ষেপ নিলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে।স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর মন্ডল মেম্বারের বাড়ি হতে বাজারে আসার এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নদীতে চলে গেছে। সঙ্গে ১০-১২ টি বাড়িও ভেঙে গেছে। এখন বাজার, স্কুল, শহীদ মিনার, মসজিদ ও মাদরাসাটা রক্ষা করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দশানি নদীর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ৭নং চরের বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ মিনার, মসজিদ ও মাদ্রসা। পাশাপাশি অনেক আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আশা করি দ্রত সময়ের মধ্যেই এ ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা বলেন, কামারের চরের ৭নং চরের বাজার, স্কুল ও মসজিদ ভাঙনের মুখে আছে। সেখান থেকে ১শ থেকে ১শ৫০ ফুট দূরে আছে মাত্র। এ ভাঙন যদি রোধ করা না যায়, তাহলে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে আমাদের। আর ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, আবাদি জমি, সড়ক নদীতে হারিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিলে এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কামারের চরের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। ৭নং চরের বাজারসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকিতে আছে। ব্যাপারটি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। দ্রæত সময়ে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।পানি উন্নয়ন বোর্ডের শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ভাঙন এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে আমরা তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলীকে অবগত করেছি। এবং ২শ মিটার কাজের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com