রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের নান্দিগ্রামে ১৪৪ ধারা অমান্য করে তিন ফসলি কৃষি জমিতে চলছে পুকুর খননের মহাউৎসব। এঘটনায় ফসলি জমিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন বন্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক কৃষক। উপজেলার নান্দিগ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর মৃধা রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী হয়ে তিনি এ মামলাটি করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা আদেশ দেন। (২২মে) রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানার আদালতে এ আদেশ দেন। এদিকে,স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, থানা পুলিশকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে পুকুর খননকারীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে কোন কিছু তোয়াক্কা না করে সাধারণ কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে চলেছে। স্থানীয় কৃষকরা দুর্গাপুর থানার ওসিকে পুকুর খননের কাজ বন্ধে ফোন করলে দায় সারা বিট পুলিশ অফিসারকে দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। পরে ওই বিট পুলিশ অফিসার কৃষকদেরকে উল্টোপাল্টা বলে ভয় দেখান বলে জানান কৃষকরা। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা। তাদেরই একটি চক্র ১৫মে রাতে গোপনে সবার অজান্তে তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খননের জন্য ভেকু মেশিন নিয়ে যায়। এমনকি তারা ফসল নষ্ট করে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করতে গেলেবিক্ষুব্ধ কৃষকরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন কাজ বন্ধ করেন। পুকুর খননের অতি মুনাফা লোভী ব্যক্তিদের এমন কর্মকান্ডে পরিবেশের উপর চরম ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল। অভিযোগে আরো জানা যায়, পুকুর খননকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ কৃষকদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এ ঘটনায় গত ২৩মে নান্দিগ্রামের আব্দুল গফুর বাদী হয়ে রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিনা সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে পাঁচজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত ফসলি জমিতে কুকুর খনন বন্ধ করে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৪/১৪৫ ধারা ঘটনা স্থলে জারি করার নির্দেশ দেন দুর্গাপুর থানায়। আদালতের এমন আর্দেশের বলে দুর্গাপুর থানা পুলিশ সরজমিনে গিয়ে আদালতের দেওয়া আদের্শ জারি করে আসেন। এমনকি আদালতের পরবর্তী আর্দেশ না পাওয়া পয়র্ন্ত ঘটনাস্থলে কোন প্রকার খনন কাজ করা যাবে না। নওপাড়া ইউনিয়নের নান্দিগ্রাম কৃষক মিজানুর রহমান জানান,আমাদের এই বিলে বছরে তিন থেকে চারটি কৃষি ফসল হয়। এই বিলের উপর নির্ভর করে গ্রামের প্রায় কয়েক শত কৃষক জীবিকা নির্বাহ করে চলেন। আমাদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি যা আসে হচ্ছে অনন্তকান্দি বিল হতে। এই বিলে পুকুর হলে গ্রামের প্রায় কয়েক শত পরিবার অনাহারে থাকবেন বলেও জানান। শুধু তাই নয় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত গ্রাম উন্নয়ন অবকাঠামো রাস্তাগুলো দিয়ে মাটি পরিবহন করে নষ্ট করে চলেছেন। সেই পাকা রাস্তা শুধু মাটি খেকোদের মাটি বহনের জন্য রাস্তাগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন আর ওই রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না। নওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জানান, কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে সাধারণ কৃষকরা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এতে আদালত ১৪৪ ধারা আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়টা আমি শুনেছি। তবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সরকারী অনুমতি প্রয়োজন। তাছাড়া সমতল ধানী জমি এভাবে কেটে পুকুর খনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও একটি সিন্ডিকেট সমতল জমিতে পুকুর খনন করছেন। এতে করে পুকুর খননকারীরা লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে পরিবেশ ও আশের পাশের জমির মালিকদের। তাছাড়া কয়েক বছর আগে বানানো রাস্তা গুলো অধিক ভারের কারণে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সরকার সাধার মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা বানালেও কিছু অসাধু ব্যক্তিদের স্বার্থের কাছে সরকারের কোটি কোটি টাকা আজ নষ্ট হতে বসেছে। দুর্গাপুর থানার অফিসা ইনর্চাজ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, নান্দীগ্রাম বিলে কোন পুকুর খনন হচ্ছে না। এমনকি তিনি একবার বলেন চাবি আমি নিয়ে এসেছি আরেকবার বলেন ভেকুর চাবি এসিল্যান্ড নিয়ে এসেছে। আপনি এসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করুন। ১৪৪ ধারার জারির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি উল্টো সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন ১৪৪ ধারা সম্পর্কে আপনি কি জানেন।