admin
- ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩ / ১০৬ Time View
Reading Time: 2 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার, ধুনট বগুড়া :
বগুড়া ধুনট উপজেলায় শাহপরান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাকলী রানী (৮) নামে এক শিশুর ভুল অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত কাকলীরানী ধুনট পৌরসভা এলাকায় চরধুনট গ্রামের কাতার প্রবাসী কাজল হাওলাদারের একমাত্র সন্তান।
নিহতের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, কাকলীরানী দীর্ঘদিন ধরে গলায় টিউমার জনিত রোগে ভুগছিল। একারণে প্রতিবেশী এক নারীর মাধ্যমে ধুনট হাসপাতাল সড়কের শাহ পরান (রঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খন্ডকালীন ডাক্তার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজল হক মামুনের নিকট চিকিৎসাধীন ছিল। কাকলীরানীর দাদা ধীরেন্দ্রনাথ হাওলাদার জানান, তার নাতনির গলায় অপারেশন করতে হবে বলে ডাঃ মাহফুজল হক ১০হাজার টাকা নিয়ে শাহপরান (রঃ) হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে তারা তার নাতনিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় এবং রাত ২টার দিকে ডাঃ মাহফুজুল হক বেরিয়ে এসে বলেন তার নাতনির জ্ঞান ফিরছে না। তাকে বগুড়ায় নিয়ে যেতে হবে। তারপর আমরা এ্যাম্বুলেন্স করে এবং ডাক্তার তার নিজের গাড়িতে করে বগুড়ার উদ্দেশ্য রওনা দেই। বগুড়া পৌঁছার পরপরই ডাঃ মাহফুজল অন্য রাস্তা দিয়ে সটকে পরে, আর আমরা হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি – কাকলীরানী ধুনট অপারেশন থিয়েটারেই মারা গেছে। তার গলা কাটা, মুখে ও গোপনাঙ্গের ভিতর প্লাস্টিকের পাইপ প্রবেশ করানো হয়েছে আমরা তখন দেখতে পাই। ধীরেন্দ্রনাথ হাওলাদার আরোও জানান, এমতাবস্থায় আমরা বৃহস্পতিবার ধুনট শাহপরান (রঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে মৃত্যুর কারন জিজ্ঞেস করতে চাইলে দারোয়ান আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে গেট লাগিয়ে দেয়। পরে কয়েকঘন্টা এই হাসপাতালের সামনে নাতনীর লাশ নিয়ে বসে থেকে কোনো সৎউত্তর না পেয়ে নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। ধীরেন্দ্রনাথ হাওলাদার বলেন, এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত কোনো অপারেশনের ব্যাবস্থা না থাকলেও তারা আমার নাতনিকে টাকার লোভে ভুল অপারেশন করে মেরে ফেলেছে। তাই এ ঘটনায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
উল্লেখিত ঘটনা সম্পর্কে ডাঃ মাহফুজল হক এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ মন্ডল বলেন, অপারেশনের পর রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে বগুড়ায় পাঠানো হয়েছিল। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও অপারেশন ব্যাবস্থা না থাকার কারন এবং এ অবস্থায় কেনো এখানে এ ধরনের অপারেশন করা হলো জানতে চাইলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শাহপরান (রঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানাযায়, হাসপাতালের মালিকানায় রয়েছেন ২৫ জনের শেয়ার। অপারেশন সহ আধুনিক ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যাবস্থার যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার চিকিৎসা ও অপারেশন দেওয়ার দুঃসাহসিক কাজ করে যাচ্ছে।
খণ্ডকালীন ডাঃ সম্পর্কে জানতে চাইলে জানাযায়, ১০/১৫ দিন পরপর একদিনের জন্য বাহির হতে একজন ডাঃ নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসাসেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো নজরদারি বা তদারকি না থাকায়, ধুনট সরকারি হাসপাতালের সামনেই গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি হাসপাতাল / ক্লিনিক তাদের চিকিৎসাসেবা ব্যাবসায় পরিনত করে জমিয়ে ব্যাবসা করে যাচ্ছে। ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টিএসও ডাঃ আশরাফুল ইসলাম এ ব্যপারে বলেন, ভুল চিকিৎসায় কোন রোগী মারা গেলে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে – তা তদন্ত করে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিশু কাকলীরানীর মৃত্যুর বিষয়টি, ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলাম মৌখিক ভাবে বৃহস্পতিবার শুনেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।