রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার , ধুনট বগুড়া :
ধুনট উপজেলা সহ সারা বগুড়ায় হাসতে শুরু করেছে মরিচ চাষীরা। মরিচের মত লাল হাসিতে ভরে উঠতে শুরু করেছে চাষীদের মনও। বগুড়ায় এবারও মরিচের বাম্পার ফলন পেতে যাচ্ছে চাষীরা। কৃষি বিভাগ বলছে চলতি বছর জেলায় এবার প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মরিচ উৎপাদন হবে। বগুড়ায় ভাল মরিচের ফলন পেতে চাষীরা রোদে শুকিয়ে নিচ্ছে মরিচ। ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় চাষীরা সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ করে থাকে। এখন সেই চাষের পর মরিচ রোদে শুকিয়ে নিচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে সেসব বাজারে তুলে বিক্রি করা হবে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, অর্থকরী ফসল মরিচ চাষ করে কৃষক লাভবান হয় বলে মরিচ চাষে তারা প্রতিবছর আগ্রহ দেখায়। চলতি বছর জেলায় ৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। ফলন পাওয়া গেছে প্রতি হেক্টরে ২.৫ মে.টন করে। সেই হিসেবে ফলন পাওয়া যাবে এবছর ১৮ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে জেলায় মরিচ চাষ হয় ৭ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে। ফলন পাওয়া যায় প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি অফিস বলছে, মরিচ চাষে প্রতি বিঘায় ফলন পাওয়া যায় ৮ থেকে ৯ মন। জমি উর্বরা হলে ১০ মন মরিচ পাওয়ার সম্ভবানা থাকে। জমি থেকে লাল মরিচ উঠে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মন। সেই মরিচ শুকিয়ে ১০ মন পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা হাজার টাকা। শুকনা মরিচ এবছর বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা মন। জেলার মরিচ চাষীদের উঠানে এখন মরিচ শুকানোর কাজ চলছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৃষি অফিসার মো: আসাদুজ্জামান বলেন , ধুনটে এবার ৩০০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে ।হাইব্রিড-১৬০,উফসি-১৪০ হেক্টর ।ফলন হয়েছে ৭৪৩৯ম:ট: কাচা ,শুকনা-১৮৬০ মে:ট: ।কাচা অবস্থায় দাম কম ছিলো এখন শুকনা মরিচে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে।সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ আহমেদ জানান, বগুড়ার সোনাতলায় এবার ১৩৬০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। ওই উপজেলার কৃষকেরা তিনটি হাইব্রিড জাতের মধ্যে সনিক, ১৭০১ ও বিজলী প্লাস এবং স্থানীয় উন্নত জাতের মরিচের আবাদ ব্যাপক করেছে। এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। মরিচের বীজ বপনের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ৬০-৭০ দিনের মধ্যে কৃষক গাছ থেকে মরিচ উত্তোলন শুরু করে। এটি একটি অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল। এই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে রাক্ষুসী যমুনা ও বাঙালী নদী। তাই বন্যার পর চরাঞ্চলে এবং অন্য জমিতে পলি জমায় প্রতিবছর সেগুলো জমিতে মরিচের বাম্পার ফলন হয়। প্রতিবিঘা জমিতে ১২/১৫ মন মরিচ উৎপন্ন হয়। প্রতিমন কাচা মরিচ হাটে বাজারে ১৬শ টাকা থেকে ১৮শ টাকায় বিক্রয় করতে দেখা গেছে। আবার টোপা ও সুট মচির ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার ধুনট গোসাঁই বাড়ি, সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ও বালুয়া হাট সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক তাদের উৎপাদিত কাঁচা মরিচ ও শুকনা মরিচ বাজারজাত করণ করছে। সোনাতলায় উৎপন্ন মরিচ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেচা বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এবার কৃষক ভালো দাম পেয়ে নগদ অর্থ ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। বগুড়ার ধুনট গোসাঁই বাড়ি জোড়খালি গ্রামের হায়দার আলী বলেন ,শুকনা মরিচ বিক্রি না করলেও কাচামরিচ বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছে ।সোনাতলার খাবুলিয়া এলাকায় সাইদুর রহমান জানান, এবার তিনি ৬/৭ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। প্রতিবছর তিনি ওই পরিমাণ জমিতে মরিচ চাষ করেন। মরিচ চাষে লাভ ভাল হয়। এমনকি সারাবছর খাওয়া চলে। সোনাতলার পাকুল্যা এলাকার কৃষক ছলিম উদ্দিন জানান, এবার তিনি ৫/৬ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এতে তিনি মোটা অংকের টাকা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ঠাকুরপাড়া এলাকার বুলু প্রামানিক জানান, এবার তিনি ৬/৭ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ বপন করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। ইতিমধ্যেই তিনি প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা মরিচ বিক্রি করেছেন। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ জানান, চলতি বছর জেলায় ৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। ফলন পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত প্রতি হেক্টরে ২.৫ মে.টন করে। ফলন পাওয়ার গড় একই থাকলে জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হবে। তবে ধুনট গোসাঁই বাড়ি ইউনিয়নের জোড়খালির মরিচ আবাদি কৃষক হায়দার আলী বলেন , মরিচ আবাদে কোন ধরনের কীটনাশক ব্যাবহার করবে জানেন না , অনেক ধরনের কীটনাশক ব্যাবহার করেছেন কিন্তু তেমন কাজ হয়না । সংশ্লিষ্টদের তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।