বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
দেশের অন্যতম নাকুগাঁও স্থলবন্দরে দেড়মাস যাবত পাথর আমদানি ও অন্যান্য রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা। কাজ না থাকায় কর্মহীন হয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। তবে বন্দর কর্পতৃক্ষ জানান মাঝে মধ্যে দুই এক ট্রাক ভুটানের পাথর আসলেও এ থেকে ব্যবসা কিংবা কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।সুত্রে জানা গেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে গত দুই মাস আগেও ভারত থেকে পাথরভর্তি ট্রাক আসত। এসব ট্রাক লোড-আনলোড, পাথর ভাঙা মেশিনের শব্দ ও শ্রমিকের পদভারে মুখোরিত ছিলো জেলার একমাত্র এই বন্দরটি। এতে দৈনিক হাজিরা শ্রমিক ও লোড আনলোড শ্রমিকসহ প্রায় ৫ হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মনে ছিলো প্রাণচাঞ্চল্য। গত ৯ জুলাই থেকে ভারতের ব্যবসায়ীরা রাস্তা মেরামতের নামে হঠাৎ করে পাথর রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এই ঘোষণা এক সপ্তাহের জন্য দেওয়া হলেও প্রায় দেড়মাস অতিবাহিত হতে চলেছে এখনো ভারতীয় পাথর আসছে না এই বন্দরে। ভারতের পাথর রপ্তানিকারক সমিতি বন্ধের বিষয়টি মৌখিকভাবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অবগত করা হলে ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেন। কিন্তু দীর্ঘ দেড়মাস ভারত থেকে কোনো পাথর বোঝাই ট্রাক না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। এমনকি বন্দর ডিপোতে জমানো পাথরও শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। একইসাথে কর্মহীন হয়ে পড়েছে তারা। তবে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি ট্রাক ভুটানের পাথর নিয়ে আসলেও তা খুবই কম পরিমানের।শেরপুর বড়িং এন্ড কনশট্রাকশনের সত্তাধীকারি আলহাজ্ব মো. আজাদ মিয়া জানান, এলসি করা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটি টাকার পাথর আটকে আছে ভারতে। কয়েক দিনের মধ্যেই পাথর আসা শুরু হয়ে যাবে এমন আশ্বাস দিয়ে আসছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই ভারত সরকারের সাথে জরুরীভিত্তিতে কথা বলে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করার ব্যবস্থা করা হোক। এই সমস্যার সমাধান হলে বন্দরের প্রাণ চা ল্য ফিরে আসবে বন্দরের। ব্যবসায়ীরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন।বন্দর শ্রমিক আয়নাল হক, বিবি খাতুন ও নেকবর আলী বলেন, এই বন্দরে আমরা পাথর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাই। কিন্তু প্রায় দুই মাস যাবত পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় আমরা খুব কষ্ট করে দিন পার করছি। তাই দ্রæত এই বন্দরের কার্যক্রম চালুর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই।
নাকুগাঁও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম মিয়া বলেন, প্রায় এক বছর আগে থেকেই কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুধু মাত্র ভুটান ও ভারতের পাথরের উপর নির্ভর করে টিকে আছে নাকুগাঁও বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন বন্দরের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। তিনি আরো বলেন, এ বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করা ছাড়াও অন্যান্য পণ্য আমদানি করার সুযোগ করে দিলে শ্রমিকরা কাজ করে চলতে পারতেন। অসহায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসায়ী এবং সরকারের উচিত দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া।নাকুগাঁও আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, ভারতের ব্যবসায়ীরা রাস্তা মেরামতের নামে দেড়মাস যাবত পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় আমাদের কোটি কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে। এতে লসের মুখ দেখতে হচ্ছে আমাদের। তবে তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাথর আসা শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। নাকুগাঁও স্থলবন্দরটি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসান এবং শ্রমিকরা কর্মহীন হওয়ার পাশাপাশি সরকারও প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।এ ব্যাপারে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (এডি) পার্থ ঘোষ বলেন, গত জুন মাসে এ বন্দরে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। আর জুলাই ও চলতি আগষ্ট মাস পর্যন্ত দুই মাসে ভুটানের কিছু পাথর আসায় অল্প পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া ডলার সংকট না থাকলে আর আমদানি কার্যক্রম চালু থাকলে এ বন্দরে দুই মাসে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় দেড় কোটি টাকা। পাশাপাশি শ্রমিকরাও কাজ করে তাদের সংসার চালাতে পারতেন। তাই দ্রæত সময়ের মধ্যে ভারতীয় পাথর আমদানির ব্যাপারে আমরা সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।