রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
শেরপুরে নার্গিস বেগম নামে এক কৃষাণী তার বাড়ির পরিত্যক্ত দুই শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন পুষ্টি বাগান। এতে তার পরিবারের সদস্যদেরকে পুষ্টি খাদ্য নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। বাজার থেকেও পয়সা দিয়ে কীটনাশকযুক্ত পুষ্টি সবজিও কিনতে হচ্ছে না। নার্গিস তার বাগানে বিষমুক্ত জৈব সার ব্যবহার করে পুঁইশাক, লালশাক, কলমিশাক, ডাটাশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন। এসব সবজি চাষের জন্য ইতোমধ্যে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রামের কৃষাণী নার্গিস বেগম স¤প্রতি সরকারের ‘স্মার্ট নিউট্রিশন মডেল গ্রাম (মডেল পুষ্টিগ্রাম)’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে বদলে ফেলেছেন। সোমবার (২১ আগস্ট) শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের হলরুমে অনুষ্ঠিত ‘কৃষি বিষয়ক বাজার সম্পর্কীয় অংশীজনদের নিয়ে কর্মশালায়’ উপকারভোগী হিসেবে এই পুষ্টি বাগানের গল্প শোনান নার্গিস।প্রান্তিক মানুষের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের সহজলভ্যতা নিশ্চিতে জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনার আওতায় জেলা পুষ্টি পরিকল্পনার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তিনটি গ্ৰামকে মডেল হিসেবে ধরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির উদ্যোগটি বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করছে সরকারের কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকারসহ ২২টি সরকারি সংস্থা। সহযোগিতা দিচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘ।নার্গিসের মতো সূর্যদীর আরও ১১৯ জন নারী-পুরুষ এ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সূর্যদীসহ পাশের দুই গ্রাম ডোবারচর ও চরকারচর নিয়ে পরীক্ষামূলক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে ১২০ জন করে ৩৬০টি পরিবার যুক্ত হয়েছে এ প্রকল্পে।নার্গিস বেগম জানান, দুই বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়েই তার সংসার। কৃষিজমি থেকে আসা ফসল, গরু-ছাগল আর হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে একাই সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। বাড়ির আঙিনার পরিত্যক্ত দুই শতকসহ চার শতাংশ জমিতে করেছেন সবজি বাগান। এ বাগানে সার-ওষুধ ব্যবহার না করে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শাকসবজি উৎপাদনে বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তারা। গরু-ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির ঘর এখন নিয়মিত জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছেন। এর আগে হাঁস-মুরগি পাললেও এত কিছু জানতেন না তিনি। সরকারের ‘স্মার্ট নিউট্রিশন মডেল গ্রাম (মডেল পুষ্টিগ্রাম)’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেকে বদলে ফেলেছেন তিনি।প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অন্যতম অংশীদার শেরপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হুয়ামুন কবীর জানান, সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিতে সরকার বহু খাতভিত্তিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে মডেল পুষ্টিগ্রাম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পুষ্টি বাগান, গবাদি পশু পালন, মাছ চাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা নির্বাচিত পরিবারকে পুষ্টি বাগান করতে উপকরণ, বীজ, সার, চারা, বেড়া এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি লালন-পালন নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তেমনি মৎস্যসম্পদ বিভাগ মাছ উৎপাদনে কাজ করছে।জামালপুর ও শেরপুরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়ান এনজিও কো-অপারেশন প্রোগ্রামের সহ-অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ভিশনের নেতৃত্বে উন্নয়ন সংঘ, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-হার্ভেস্ট প্লাস ও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ টু এনহান্স নিউট্রিশন সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (বিংস) শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ সাল থেকে বাস্তবায়িত হয়েছে।বিংস শীর্ষক প্রকল্পের ম্যানেজার মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, মডেল পুষ্টিগ্রাম উদ্যোগটি জেলা ও উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি সঠিকভাবে তদারকি করছে। এটি জাতীয়ভাবে সারাদেশে বাস্তবায়িত হলে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
বিংস প্রকল্পের টিম লিডার ডা. মেরী রশীদ বলেন, আমাদের প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন সরকারের উদ্যোগে বাস্তবায়িত মডেল পুষ্টিগ্রাম প্রকল্পটি আশা করি শুধু পুষ্টি নয়, মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে সহায়তা করবে। ছয় মাস মেয়াদি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমটি সফল হলে আমি আশা করব, সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে বহু খাতভিত্তিক এ উদ্যোগটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে।