এ হামিদ সরকার , নীলফামারী :
নীলফামারীর ডিমলায় কৃষিজমি ও ফসল নষ্ট করে বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের জলাধার খনন করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ২৭- ফেব্রু/২৩ দুপুরে উপজেলার বুড়িতিস্তা ব্যারেজ এলাকার কুঠিরডাঙ্গা গ্রামে খনন কাজে বাঁধা দেয় এলাকাবাসী। এ সময় পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে এলাকাবাসীর মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ডিমলা থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক মমিনুর রহমান খানসহ আট জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে ডোমার সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়,কৃষি জমিতে জলাধার খনন নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে খনন কাজে বাধা দেয় গ্রামবাসী। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। এতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আট জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, পৈতৃক ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া কৃষকদের বৈধ কৃষিজমি দখলে নিয়ে জলাধার খনন করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।অপরিকল্পিত জলাধার খননের নামে তিন ফসলী জমি ও ফসল নষ্ট হচ্ছে । এতে বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন কমে যাবে। এছাড়া জোরপূর্বক জলাধার খনন করতে শত শত গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এদিকে পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, জলাধার নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর এই জলাধার খননে জমির সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে পাউবো ও ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ছয় শতাধিক ব্যাক্তিকে আসামি করে মামলা করে পা উ বো। নীলফামারী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ১ হাজার ২১৭ একর জলাধারের প্রথম পর্যায়ে খনন করা হচ্ছে ৬৬৭ একর। এতে ব্যায় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি টাকা।খনন কাজে দরপত্রের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়। একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার জলাধার খননের কাজ শুরু করে। কৃষকদের ভাষ্য মতে, ১৯৬৮ সালে বুড়ি তিস্তা নদীর ওপর প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এসময় কালিগঞ্জ নামক স্থানে ৩০০ ফুটের একটি ব্যরেজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে সময় পাঁচটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর জমিতে জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাধারের ওই জমি সরকার অধিগ্রহণ করেনি।এ অবস্থায় জমির মালিকরা দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদ করে আসছে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বলে দাবি করছেন। তারা জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জমির মালিকানা দাবি করে আবার জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এলাকার কৃষকরা নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে এসব মামলা চলমান আছে। কৃষকরা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,যেসব জমিতে সারা বছর তিনবার ফসল হয় সেসব জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। অথচ তারা জোর পূর্বক তিন ফসলি জমিতে জলাধার খনন করছে। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। পচার হাট গ্রামের বাসিন্দা তছিরুল ইসলাম বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এই ফসল উঠিয়ে মেয়ের বিয়ে দেব।আমার জমির ওপর জলাধার খনন করা হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আমার মত শতশত পরিবারের ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর উপায় থাকবে না। তছিরুল গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন, তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালান। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ছিলেন প্রতিকার পেতে। কিন্তু সহযোগিতা পাননি। উল্টো তাঁকে মামলার আসামি করেছে। দুই মামলা সামলাতে তাঁর অন্তত এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মশিয়ার রহমান,তবিবুল, মফিজার রহমান সহ অন্তত ২০ জন কৃষক বলেন,কাগজপত্র অনুযায়ী, আমরা জমির মালিক। গ্রামের মানুষ বাপ-দাদার আমল থেকে ওই জমিতে কৃষি কাজ করে আসছেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ধরণের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে ওই জমি তাদের বলে দাবি করছে। তারা বলেন, খনন কাজে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো প্রকার আলোচনা করা হয়নি।ফসলের ক্ষতিপূরণ ও জমি অধিগ্রহণও করা হয়নি। আর কয়েক দিন পরই ভুট্টা কাটা হবে। সেই ভুট্টা খেত সহ বোরো ধান, আলু ও বাদাম খেতের ওপর দিয়েই জলাধার খনন কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া বুড়ি তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ কম। শুকনো মৌসুমে এই জলাধার কোন কাজেই আসবেনা। ইউপি সদস্য বাদল মিয়া স্বপন বলেন , বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইনি কোন প্রক্রিয়া না মেনে তিন ফসলি জমিতে জলাধার খনন করছে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেই একের পর এক মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। এই সুযোগে তারা জমি দখল করছে। তিনি জানান , জমির সীমানা নির্ধারণের কথা বলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মিথ্যাচার করেছে। তারা গ্রামবাসীকে মামলার ফাঁদে আটকে খনন কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে নীলফামারী পাউবো র নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার বলেন,যারা সরকারি সম্পত্তি দখল করে আছেন তাঁরাই অতর্কিতভাবে বাধা সৃষ্টি করে হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলমান। ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।