শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
রিপন কান্তি গুণ,নেত্রকোনা:
নেত্রকোনার চার উপজেলার (জেলা সদর, পূর্বধলা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর) সংযোগস্থল সিধলী বাজারের ক্যাপ্টেন চৌহান সড়ক নামে পরিচিত সড়কটি স্বাধীনতার পর থেকে পাকাকরণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে চার উপজেলার লাখো মানুষ।বাজারটিতে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হলেও আজো বাজারের সড়কটি কাঁচা কেন? এই প্রশ্নের জাবাবে এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, অনেক অভিযোগ দেওয়ার পরও বাজারের এই সড়কটি নিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধিই সড়কটির প্রতি কোন সুনজর দিচ্ছেন না। অথচ নির্বাচনের সময় ভোট পেতে প্রতিবারই আশ্বাস দিয়ে যান প্রার্থীরা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলাধীন কৈলাটি ইউনিয়নে অবস্থিত সিধলী বাজার। এ বাজার দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম জুড়ে ভোগান্তির শিকার হন এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় ফলে, গাড়ি চলাচল করতে পারে না এমনকি স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।উপজেলার সিধলী বাজারের উপর দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটি জেলা সদর উপজেলা সহ চার উপজেলার সংযোগ সড়ক। এসব উপজেলার সড়কগুলো পাকা থাকলেও শুধুমাত্র বাজারের অংশটি আজও কাঁচাই রয়েগেছে। স্থানীয়রা মাঝে মাঝেই স্বউদ্যোগে রাস্তায় ইট, বালু সুরকি ফেলে চলাচল করেন। বর্ষায় সড়কের এক পাশ দিয়ে চলাচল করায় অর্ধেক সড়কে ঘাস উঠে যায়। ফলে হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের।সিধলী বাজারের ব্যবসায়ী জামাল মিয়া বলেন, চারটি উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য সিধলী বাজার এলাকার প্রায় দেড়শ মিটার সড়কটি পাকাকরণের উদ্যোগ কেউ নেয় না। ফলে, বর্ষাকালে এই রাস্তা দিয়ে আমাদের চলাচলে দুর্ভোগের সীমা থাকেনা।তিনি আরও বলেন, বাজার ঘিরে ইজারাদারের কোটি কোটি টাকা ও সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হলেও মানুষের ভোগান্তি যেন নিত্য দিনের সঙ্গী। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপি কারোরই এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, বারবার চেষ্টা করেও সড়কের কাজ এখনও করাতে পারেননি। তবে স্থানীয় সরকারের নির্বাহী প্রকৌশলী এবার সড়কটি করার আশ্বাস দিয়েছেন।স্বাধীনতা সংগ্রামে এই সড়কটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। যুদ্ধের সময় চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই সড়কটি। মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদেরকে নেতৃত্বদানকারী ক্যাপ্টেন চৌহান এদিক দিয়ে চলাচল করায় এই সড়ককে ক্যাপ্টেন চৌহান সড়ক হিসেবেও চেনেন পুরোনো মানুষেরা।তারা বলেন, বাজারের এতটুকু জায়গা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হওয়ার পরও পাকা হয় নাই। জেলার চার উপজেলায় যাওয়ার সব কয়টা রাস্তা ভাঙা হলেও পাকা। কিন্তু বাজারের যে অংশটি দিয়ে সবদিকে যেতে হয় সে রাস্তারই এমন বেহাল অবস্থা। ফলে বর্ষায় খুব কষ্ট করে এদিকের মানুষ চলাচল করে। কয়েকমাস অন্যদিক দিয়ে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হয় সবাইকে।নেত্রকোনা ও কলমাকান্দার নাজিরপুর ভায়া সড়ক হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কিছু করার সুযোগ নেই। ডিপিপি লাগে উল্লেখ করে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের প্রায় ছয় মাস বাজারের অবস্থা বেহাল থাকে। এই সময় মানুষকে ঘুরে অন্যদিক দিয়ে চলাচল করতে হয়। তিনি নিজেও চলাচল করতে পারেন না। বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেও তিনি কিছু করতে পারছেন না। বেশ কয়েকবার তিনি এ নিয়ে স্থানীয় এমপির কাছে গিয়েছেন বলেও জানান।এদিকে নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম (শেখ) জানান, নাজিরপুর সিধলী ভায়া নেত্রকোনা সড়কের এস্টিমিট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১১০০ মিটার সিধলী বাজারের কাজটিও ধরা আছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই কাজ হবে। তবে বছরের পর বছর কেন হয়নি এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার চার উপজেলার সংযোগস্থল সিধলী বাজারটি ২০২২ সালে ৪৮ লাখ টাকায় ইজারা দিলেও এবছর মাত্র ২৪ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস।