রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা,কুষ্টিয়া:
গতকাল শনিবার ২৬ শে আগস্ট বিকেল চারটায় পুলিশের উপস্থিতিতে আলামাত গায়েব এর অভিযোগ এবং মামলা পিবিআই’তে তদন্তের দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কুষ্টিয়া নার্সিং ইন্সটিটিউটের নিহত ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি’র পরিবারের সদস্যরা ।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি’র বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস তাসনিম । লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২২ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখে আমার বোন তুলি’কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত, ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে তবুও কোনো আসামি প্রেফতার হয়নি। আপনারা দেখেছেন এবং আমরাও দেখেছি সেটা।সংবাদ সম্মেলনে তাসনিম বলেন, আমাদের বোনকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখলাম ০৩:৩৯ মিনিটে ওই বাড়িতে ঢুকতে। কিন্তু সেই ঘাতক সুমন কেন আমাদের ৬:৩০ মিনিটে জানালো যে আমার বোন তাদের বাসায় গেছে আর তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসতে? এই তিন ঘণ্টা কেন দেরি হল?সংবাদ সম্মেলনে তাসনিম দেশবাসী এবং প্রশাসনের কাছে জানতে চান, ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে তুলি কিভাবে ফাঁসিতে ঝুলে পড়ল? গলায় দড়ি নিলে কি মৃতব্যক্তি হাত দিয়ে নিজের গলার দড়ি ধরে রাখতে পারে? রুমের লাইট কে বন্ধ করল? তুলি কি গলাতে দড়ি লাগানোর পর নিজেই লাইটের সুইচ বন্ধ করেছিল? নাকি অন্যকেউ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রুমের মধ্যে লুকিয়ে ছিল? পুলিশতো কোনো সার্চ করলো না? নাকি সমস্ত ঘটনাটিই একটা সাজানো নাটক ছিল? উপস্থিত কারোর মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখলামনা কেন? তুলির মোবাইল/ব্যাগ কেন আলামত হিসাবে জব্দ করা হলো না? আমরা ও আপনারা ভিডিও ফুটেজে দেখেছেন যে যখন ঝুলন্ত অবস্থায় আমার বোনকে বিছানায় রাখা হয় তখন ও পাশেই ওর ব্যাগ ও টিফিন বাটির ব্যাগ দেখা যায় তাহলে সেই সকল আলামত কেন লাপাত্তা? তাহলে অবশ্যই সেই ব্যাগের মধ্যে এবং ওর ফোনের মধ্যে বিশেষ কিছু প্রমাণ ছিলো! এতগুলো আলামত পুলিশের উপস্থতিতে কিভাবে গায়েব হলো? তাহলে এর সাথে তদন্তকারী পুলিশ জড়িত? পুলিশ ডেড বডি নামালোনা কেন? এখানে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া কেন মানা হলো না? খালিহাতে লিখা আছে? শরীর কি এভাবে টানাহেঁচড়া করে নামানোর কোনো নিয়ম কোথাও আছে ? এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাতে সেখানে উপস্থিত পুলিশের এত এত উদাসীনতা, এত গাফিলতি কেন? তবে কি পুরোটাই আগে থেকেই সাজানো ছিল?আমরা দেখলাম, যেই পুলিশের এসআই হাসিমুখে অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে, সেই এসআই এর সরাসরি উপস্থিতিতে তুলি হত্যার অপরাধীরা পালিয়েছে। এখানে, আলামতগুলো এবং অপরাধীদের পলায়নে পুলিশের শতভাগ সমর্থন ও সহযোগিতা দৃশ্যমান। এজন্য এখনো অদৃশ্য, অজানা কারণে এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ যদি চাইতো, তখনি তাদের হেফাজতে নিতে পারতো। তাহলে কেন এমনটা করা হলো? যেই পুলিশ কর্মকর্তা তুলি’র হত্যাকারীদের সার্বিকভাবে সাহায্য। করেছে তাকেই কেন তদন্ত ভার দেওয়া হল ? আপনারাই বলুন, এই লোক কি আদৌ সঠিক তদন্ত করতে পারবে? কতটুকু বিশ্বাস করা যায় তাকে? আমরা তার তদন্তের উপর আমরা বিশ্বাস রাখতে পারছিনা। এজন্য আমরা নিরপেক্ষ পিবিআই তদন্ত চাই। ঘটনার সময় এখানে যারা উপস্থিত ছিলো সবাই তাদের লোক এবং পুলিশ । বাড়ির মালিক হয়তো সমস্ত কিছু জানে। ঘটনার সময় উপস্থিত কাওকে পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। ঐ বাসায় তুলি ঢোকার সময় থেকে বের হওয়া পর্যন্ত সমস্থ সিসি টিভি ফুটেজ তদন্তের স্বার্থে জনসম্মুখে আনার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমার সঠিক বিচার পাবো না। আপনার সবাই জানেন যে তিনি একজন আইনজীবি। তাই সকল আইনজীবিদের কাছে অনুরোধ থাকবে সবাই আমার বোনের পাশে এসে দাঁড়াবেন। আমরা বড়ই অসহায়। আমার ন্যায্য বিচার চাই। আর এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কমনা করছি সেই সাথে সকল দেশবাসিকে আমাদের পাশে দাঁড়ানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি এবং সার্বিকভাবে আমরা আপনাদের এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাহায্য কামনা করছি।লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে জান্নাতুল ফেরদৌস তাসনিম ও তার মা শরিফা বেগম বলেন, তুলি’র গায়ের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহৃ আছে । মূল আসামী আইজীবি ও প্রভাবশালী হাওয়ার কারণে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি তারা বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করতে পারে ।উল্লেখ্য মঙ্গলবার ২২ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের সামনের গলির মফিজউদ্দিন লেনের নবী ও মিতা দম্পত্তির পাঁচ তলা বাড়ীর তিন তলার একটি ফ্লাট থেকে আনুমানিক সন্ধা ছয়টার পরে টেনে হিচড়ে নামানো হয় জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি’কে । এর পর সন্ধা ছয়টা ৩২ মিনিটে মোবাইল ফোনে ফোন করে খবর দেওয়া হয় তুলি’র ভগ্নিপতিকে । সন্ধা আনুমানিক সাতটার দিকে তুলি’র পরিবারের লোকজন ঘটনা স্থলে পৌঁছান এবং তারপর তুলি’র নিথর দেহ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি’কে দেখা মাত্রই মৃত বলে ঘোষনা করেন ।ইতিপূর্বে গত ২৪ শে আগস্ট সকাল ১১ টায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে কালেক্টরেট চত্ত¡রে জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি’র হত্যার বিচারের দাবী করে তার স্বজন ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন করেছে । মানববন্ধনে তারা তুলি’কে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে ”কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চক দৌলতপুর গ্রামের মৃত তক্কেল আলী’র পুত্র পেশায় আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুমন’কে দায়ী করেছেন । এই বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় তুলি’র মা শরিফা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে ২৩ আগস্ট একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ।