বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নুরুজ্জামান লিটন,নওগাঁ :
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ওমান প্রবাসী এক ছেলেকে প্রেমের জালে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাত ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে জামালপুরের এক নারীর বিরুদ্ধে।উক্ত নারী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার গৃহবধূ বলে জানা গেছে।
গত ১৯ নভেম্বর,২০২৪ ইং,মঙ্গলবার দেশের কয়েকটি প্রেসক্লাবে লিখিত এই অভিযোগ করেন তিনি প্রতারণার শিকার সেই ওমান প্রবাসী যুবক।
ভুক্তভোগী সে ছেলের নাম সাহাব উদ্দিন (৩৪)।তিনি ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ওমানে অবস্থান করছেন। আর অভিযুক্ত সে নারীর নাম বিথি (৩৭)।তিনি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডালবাড়ী গ্রামের আফসার আলীর মেয়ে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,অভিযুক্ত নারী বিথির সাথে তার প্রথম পরিচয় হয় ২০১৯ সালের ২৬ শে মে।সিলেটের সাহাব উদ্দিন (সিহাব) নামের ছেলেটি ওমান থেকে কাতারে যাচ্ছিল আর প্রতারক মেয়েটি জর্ডান থেকে যায় কাতারে।
বিমানে মেয়েটির পিছনের সিটে বসেছিলেন ছেলেটি।টুকটাক কথা হয়।পরিচয় হয়।ফোন নাম্বার লেনদেন হয়।এর পরে কাতার এয়ারের বড় এক ফ্লাইটে ঢাকায় পৌছায় বিথি আর সাহাব উদ্দিন (সিহাব)।দেশে আসার পরে সাহাব উদ্দিনকে ফোন দেয় মেয়েটি।সে জানায়,৭-৮ বছর সে জর্ডানে ছিলো,এখন দেশে এসেছেন।তার মা নেই। একটি ছেলে আছে।স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে।বিথির মায়াবী কথায় ছেলেটি তার প্রেমে পড়ে যায়।এরপর আবার ও ওমানে চলে যান সাহাব উদ্দিন।
সাহাব উদ্দিন ওমানে থাকা অবস্থায় দেশে থাকা বিথির সাথে তার তার কথা চলতে থাকে।বিথির জীবন চলতে থাকে সাহাব উদ্দিনের টাকায়।একদিন মেয়েটি বলে আপনি আমাকে ওমানে নিয়ে যান।আমি আপনার কাছে থাকবো।আমি দেশে থাকবো না, আপনাকে ছাড়া বাঁচবোনা,আপনাকে না পেলে গলায় দড়ি দিবো।
এসব কথা শুনে ছেলেটি বিপদে পড়ে বলে যে, তোমার আমার বিয়ের কাগজ নেই।তাহলে কীভাবে এ দেশে আনবো।তখন মেয়েটি দেশে ভিসা পাঠাতে বলে।ছেলেটি এ বিষয়ে কিছু না বুঝলেও আরেকজনের চেষ্টার ভিসার ব্যবস্থা করে ওমানে নিয়ে যান।আর বিথি যে নতুন পাসপোর্ট বানায় সেখানে কৌশলে স্বামী হিসেবে সাহাব উদ্দিনকে ঢুকিয়ে দেয়।
বিথিকে ওমানে নিয়ে যাওয়ার পরে বিথির নেতিবাচক কার্যকলাপের কারণে সিহাব তাকে ওমানে রাখা নিরাপদ মনে করেনি।যার কারনে পরবর্তীতে তিনি বিথিকে দেশে পাঠাতে বাধ্য হন।এবং শিহাব ওমানে যেখানে আরামে কাজ করতো বিথির কারণে সেই চাকরিও তাকে ছাড়তে হয়।
এরপর নানা নাটকীয়তায় মেয়েটি সাহাব উদ্দিনের শিহাবের কাছে বিগত ছয় বছরে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করে। শেষে সেই মেয়ে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুরের বিবাহিত ছেলে সুজন ওরফে জিহাদকে কথিত স্বামী বানিয়ে ঘর সংসার করছে।সেই জিহাদের ও রয়েছে আয়েশা নামের এক স্ত্রী।তাকে ছুঁড়ে ফেলে জিহাদ হাত ধরেছে বিথির।সেজন্য জিহাদ ও বিথির বিচার চান আয়েশা।
এ ব্যাপার ওমানে অবস্থানরত সিলেটের বিশ্বনাথের সিহাব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান,ঐ মেয়ে (বিথি) আমার সাথে প্রতারণা করে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার প্রবাস জীবনের ছয় বছরের সব কষ্টার্জিত ইনকাম সে বিভিন্নভাবে আত্মসাৎ করে আমার সাথে ওর যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।বিথির কথিত স্বামী জিহাদ, বিথির ভাই মাসুদ ও বিথির ছেলে তার এই প্রতারণার সাথে জড়িত।তারা আমাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছে। আমি বিদেশে থাকায় ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছিনা।প্রশাসনের কাছে অনুরোধ ঐসব প্রতারক মেয়েদের ও তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক।যাতে করে এমন প্রতারণার করতে আর কেউ সাহস না পায়।
এ বিষয়ে বিথির কথিত স্বামী জিহাদের প্রথম স্ত্রী আয়েশা জানান,ঐ কুচক্রী নারীর জন্য আমার স্বামী আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার একটা ছোট ছেলে আছে তার খরচ পর্যন্ত আমার স্বামী আমাকে দেয়না।আমি কাজের চাপে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ করতে পারিনি।আমি এ-র আইনগত ব্যবস্থা নিবো।আমি তাদের বিচার চাই।
সরেজমিনে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউপির বিথির বর্তমান স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বিথিকে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি তা অস্বীকার করে জানান এসব মিথ্যা কথা।আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সাহাব উদ্দিন (সিহাব) এর অভিযোগের ব্যপারে সুষ্ঠু বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সিলেট জেলা শাখার কো-অর্ডিনেটর মোঃ রহিম চৌধুরী ফরহাদ বলেন,মেয়েটি যা করেছে তা সত্য হয়ে থাকলে তা খুবই অন্যায়।এর বিচার হওয়া উচিত।প্রবাসীরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা।তারা কোন ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে বা সহায়তা চাইলে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।
এ ব্যপারে সিলেটের বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: রুবেল মিয়া বলেন,এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি।আপনার কাছে শুনলাম।অভিযোগ ও প্রমাণাদি পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।