সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার, ধুনট বগুড়া:
বৌদ্ধবিহার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণে বগুড়ার শিবগঞ্জে চলছে উন্নয়নমূলক কাজ। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ‘পো-শি-পো’ হিসেবে যে বিশ্ববিহারের বর্ণনা দিয়েছেন সেই ভাসুবিহার ও তার কাছাকাছি বিহার ধাপে এ উন্নয়নকাজ চলছে। তত্ত্বাবধানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।এই দুই প্রত্নস্থলে প্রায় এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী ( সীমানা প্রাচীর) তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজ শেষে সেখানে নতুন করে দর্শনার্থী ছাউনি ও শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। ভাসুবিহারে একটি নিদর্শনী গ্যালারিও নির্মাণ করবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তিন দিকে কৃষিজমি ও এক দিকে লোকালয় ঘেরা বিস্তৃত এক প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ এখনো বিদ্যমান। হিউয়েন সাং ৬৩৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি এই অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ বিরণীতে একটি বিশ্ববিহারের কথা উল্লেখ করেছেন। তার বিবরণীতে ‘ পো-শি-পো’ হিসেবে উল্লেখ করা সেই বিশ্ববিহারটিই বর্তমানের এই ভাসুবিহার।স্যার আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভাসুবিহার পরিদর্শন করে এটিকে হিউয়েন সাং বর্ণিত সেই বিশ্ববিহার বলে নিশ্চিত করেন। হিউয়েন সাং তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেন, পু-্রবর্ধনের চার মাইল পশ্চিমে ‘ পো-শি-পো’ নামের বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন।সেখানে তিনি একটি বিরাট সংঘারাম দেখতে পান। বুরুজ ও টপম-পের উচ্চতার কারণে এই বিহারের খুব সুখ্যাত ছিল্ তিনি এখানে ৭০০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে অধ্যয়নরত অবস্থায় দেখেন এই স্থানে গৌতম বুদ্ধ কিছুদিন অবস্থান করে দীক্ষা দেন এবং বিশ্রাম গ্রহণ করেন। সেখানে গৌতম বুদ্ধের পদচিহ্ন সংরক্ষিত ছিল। ভাসু বিহারের এই প্রাচীন ধ্বংসস্তূপটি ১৯৭৩ সালে প্রথম খনেনর আওতায় আসে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেখানে প্রথম দফা টানা তিন বছর খনন করে এবং বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বেরিয়ে আসে।২০১৫ সালে সেখানে পুনরায় খনন শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ওই সময় সেখানে বেরিয়ে আসে একিট বুদ্ধমন্দিরের সম্মুখ ভাগ, সিঁড়িপথ ও নিদর্শন। ২০১৮ সালে খননে সেখানে চারটি বৌদ্ধ স্তূপার সন্ধান মেলে। ১৯৭৩ সাল থেকে ভাসুবিহাররে কয়েক দফা খননের ফলে যে প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়, এর মধ্যে ব্রোঞ্জের তৈরি কয়েকটি মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, মাটির তৈরি মূর্তি উল্লেখযোগ্য।প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, একটি চত্বরে একই সঙ্গে তিনটি বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ চারটি বুদ্ধমন্দিরের নিদর্শন এবং চারটি স্তূপা একমাত্র ভাসুবিহার ছাড়া উত্তরাঞ্চলের আর কোনো প্রত্নস্থলে উম্মোচিত হয়নি। প্রায় ১৮ একর আয়তনের এই প্রত্নস্থলের সামান্য অংশ উঃখননেই এত স্থাপনা বেরিয়ে এসেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো খননের আওতায় এলে আরো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উম্মোচিত হবে।