শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

News Headline :
পাবনায় “তারুণ্যের উৎসব ২০২৫”: আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে নবাগত জেলা প্রশাসকের কর্মদিবস শুরু!! গোবিন্দগঞ্জে ত্যাগী নেতাদের মাঝে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ১২০ শিক্ষার্থীদের পথচলা পুরাতন কাঠের তৈরি সাঁকো ভাঙ্গলেই সমস্যা হবে শেরপুরে নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের আগুন লাগানোর চেষ্টা মাদক সমাজের ক্যান্সার এটা প্রতিরোধে প্রশাসনের অনিহা-শিমুল বিশ্বাস গণমাধ্যমে বিকৃত তথ্য প্রচার ইসলামপুরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদী ব্রিফিং কৃষি অফিসের সামনে থেকে প্রণোদনার সার-বীজ পাচার রাজনৈতিক দলের পদধারী কেউ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো পদে থাকতে পারবে না-সারজিস আলম গাবতলীতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ এই জনপদকে যারাই পদদলিত করেছে বাঙ্গালি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে-শিমুল বিশ্বাস

বনৌষধি গাছের ব্যবসায় হামিদুরের সফলতা

Reading Time: 3 minutes

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
এক সময় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যুবক হামিদুর হোসেনের (৩৭) লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে দাদার রেখে যাওয়া বনৌষধি গাছের ব্যবসার হাল ধরে এখন তিনি প্রতিমাসে লাখ টাকা আয় করছেন । তার বাড়ি শেরপুর জেলা শহরের পুরাতন গরুহাটি এলাকায় । বিবাহিত জীবনে হামিদুর দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।
হামিদুর জানায়, তার দাদা মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ভারতের বেঙ্গালোরে দীর্ঘদিন বনৌষধি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পরে ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে নানা জায়গা থেকে ঔষুধি বৃক্ষ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কেন্দ্র। নাম দেন ভান্ডারি দাওয়াখানা। যার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার-৭৫৮। পরবর্তীতে তার বাবা দেলোয়ার হোসাইন ও চাচা আঙ্গুর মিয়া ময়মনসিংহ ইউনানী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে বৈদ্যের কাজ শুরু করেন। ওই সময় থেকেই জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নকলা থেকে আসা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতেন তারা। চিকিৎসা সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের টাকায় তাদের কোনো রকমে সংসার চলতো। এক পর্যায়ে চাচা আঙ্গুর আলাদা হয়ে শহরের ঢাকলহাটিতে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন।
যুবক হামিদুর বলেন, তিনি শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০০৩ সালে তার আরেক চাচা রিপনের সাথে মোটরসাইকেলে ভ্রমণে বের হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই ঘটনায় তারা দুজনেই গুরুতর আহত হন। পরে চাচা রিপন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আঘাত পান বাম হাত ও পায়ে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পরও তার বাম হাত ও পায়ের ঘা কোনভাবেই শুকাচ্ছিল না। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ওই হাত এবং পা কেটে বাদ দিতে। অন্যথায় পচন সারা শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন। পরে তার বাবা ও চাচা হাত-পা কাটার অনুমতি না দিয়ে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। শুরু করেন দুর্লভ প্রজাতির বনৌষধি দিয়ে চিকিৎসা। প্রায় দেড় বছর চিকিৎসা শেষে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই সময়ে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সুস্থ হওয়ার পরও আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। এক সময় চিন্তা করেন বনৌষধির মাধ্যমেই যেহেতু তার জীবন রক্ষা হয়েছে। তাহলে এই আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র নিয়েই নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করবেন এবং পিতার কাছ থেকে তালিম নিয়ে মানুষের সেবা করে যাবেন।
হামিদুর আরো বলেন, টানা ষোল বছর আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের দুস্প্রাপ্য বনৌষধি গাছ সংগ্রহ করেন। এছাড়া এলোভেরা, শিমুলের মূল, শতমূলী, ঈশ^রমূল, উলটকম্বল, তেতুুলবীজ, আলকুশি বীজ, ত্রিফলা, মণিরাজ, শুঠ, মেনী, আমদা, শুরখই, অপরাজিতা, কাইজগুটা, পর্ণা, মুনামুনি, মনঝুড়ি, কড়ি শাপলা, কুজ বীজ, সর্দিগোটা ও ধুতরাসহ অন্তত ২ হাজার ৭শ প্রজাতির ঔষুধি গাছ, গাছের রস, ছাল ও ফল জোগার করেন। এর বেশীর ভাগ বৃক্ষই তিনি স্থানীয় নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করেন। এছাড়া কিছু গাছ কুষ্টিয়ার হাট খোলাবাড়ি ও নাটোর থেকেও আনেন। বর্তমানে তার দোকানে কমপক্ষে ৭৫ লাখ টাকার বনৌষধির সংগ্রহ রয়েছে। যে কারণে জেলার পাঁচ উপজেলা ছাড়াও পাশর্^বর্তী জামালপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রংপুর ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ক্রেতারা ঔষধি বৃক্ষের লতা, পাতা, ফল ও ছাল নিতে আসেন। ওইসব ঔষধি গাছ তিনি পাইকারি ও খুচরা হিসাবে বিক্রি করেন। প্রতিদিন অন্তত ২০-২৫ হাজার টাকার মাল ক্রেতারা নেন। সে হিসাবে মাসে গড়ে ৭ লাখ টাকার বনৌষধি মালামাল বিক্রি হয়। হামিদুর জানান, ২০০৭ সাল থেকে তার দোকানের নাম-ডাক চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে তিনি যখন এই ব্যবসা শুরু করেন তখন পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত গরুহাটির নিজস্ব দোকানে সামান্য কিছু ঔষুধি বৃক্ষ রাখেন। এ সময় কেউ কেউ কবিরাজি ব্যবসাকে ফটকাবাজি, ধান্ধাবাজি আবার কেউ প্রতারণার কৌশল বলে তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দিতেন। পরবর্তীতে ওই এলাকারই লোকজন তার বাবার দেয়া ওষুধ খেয়ে যখন সুস্থ হতেন, তখন তারাই আবার অন্য দশজনকে এই দোকান থেকে বনৌষধি নেয়ার পরামর্শ দিতেন। আর এভাবেই প্রশারিত হতে থাকে ব্যবসার পরিধি।হামিদুর বলেন, তিনি যেহেতু পড়াশোনা বেশী দূর করতে পারেননি। তাই শেরপুরে তিনি একটি ইউনানী মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চান। এজন্য তিনি জমিও কিনেছেন। যদি সরকারি সহযোগীতা পাওয়া যায় তাহলে দ্রæতই তিনি এ কাজে হাত দিতে চান। তার ইচ্ছা এখান থেকে শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে ইউনানী বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে মানুষের সেবায় কাজ করবে। হামিদুর জানান, দেশের বিভিন্ন ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজের শিক্ষার্থীরা শুধু বই পুস্তক পড়ে নানা জাতের গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারে। এখন ওইসব কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ স্বচক্ষে দেখতে তার এখানে আসেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com