শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কাতিলা গ্রামে জনসাধারণের ব্যবহার্য পাঁচটি পুকুর বিধিবহির্ভূতভাবে লিজ দেওয়ায় বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
গত বুধবার (২৫ আগস্ট) বাগমারা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের ০৬/১৮ অ.প্র. মামলায় আদালত এই আদেশ দেন সিনিয়র সহকারী জজ মারুফ আল্লাম।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০ টার দিকে নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের মামলার আইনজীবী মোছা. শাহিন আরা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কাতিলা গ্রামে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ৫টি পুকুর রয়েছে। স্থানীয় জনগণ তাদের কৃষিজমিতে সেচকাজের প্রয়োজনে এই পুকুরগুলো ব্যবহার করে। সরকারি জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী এই পুকুরগুলো সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য, যা লিজযোগ্য নয়। তারপরও ২০১৮ সালের দিকে ইউএনও সরকারি বিধির তোয়াক্তা না করেই পুকুরগুলো লিজ দেন। এতে সেখানকার স্থানীয়রা বেশ সমস্যায় পড়েন। পরে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন বাগমারা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ‘প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা’ দায়েরপূর্বক ইউএনওর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চান।
গত বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে আদালত ইউএনওর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মূল মোকদ্দমাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় বাগমারা থানার কাতিলা মৌজার আরএস ২৯১২, ২৭৩১, ২৬৩৪, ৩০২৫ দাগের পুকুরগুলো লিজ প্রদান করা কিংবা জনসাধারণের ব্যবহারে বাধাবিঘœ সৃষ্টি করা থেকে বারিত করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।
নিষেধাজ্ঞার আদেশে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে এই সম্পত্তি যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বরাবর লিজ প্রদান করা হয়ে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সেই লিজগ্রহীতাগণও এই নিষেধাজ্ঞা আদেশ দ্বারা বারিত বলে গণ্য হবেন। সেই সাথে চলতি বছরের ১২ অক্টোবর মামলাটির চূড়ান্ত শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বাদীর আইনজীবী দাবি করেন, এই মামলাটিতে ইতিপূর্বেও ইউএনওর বিরুদ্ধে আদালত অন্তর্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছিলেন। তারপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইউএনও পুকুরগুলো লিজ দেন এবং পুকুর লিজ নেওয়া ব্যক্তিবর্গ পুকুর দখল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আদালতের অন্তর্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের কারণে গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালের শেষ ভাগে কাতিলা গ্রামের স্থানীয়রা বাগমারা আদালতে লঙ্ঘনের আরেকটি মামলা (ভায়োলেশন মামলা) দায়ের করেন। বর্তমানে এই মামলাটি শুনানি পর্যায়ে আছে বলে আদালতসূত্রে জানা গেছে।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ লিজ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আসলে আমাদের বাগমারায় জলমহালের ওপর যে রেজিস্টার বই আছে সেটা দেখেই এই লিজ প্রদানের সিন্ধান্তগুলো গৃহীত হয়। তবে কাতিলা গ্রামের ওই ৫টি পুকুরের বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তবে আদালত থেকে যদি এমন নির্দেশনা এসে থাকে তবে অবশ্যই আমাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রদেয় লিজগুলো বাতিল করে দেওয়া হবে। কারণ, সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের যাওয়ার এখতিয়ার নেই।’
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে একেবারেই অবগত নয়, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পারলাম। তাছাড়া আদালত থেকেও এই বিষয়ে কোনো প্রকার নথিও প্রাপ্ত হয়নি। তবে বাগমারা ইউএনও’র বিষয়ে আদালত কোনো প্রকার আদেশ জারি করে থাকলে সেই আদেশ আমরা মানতে বাধ্য। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।