বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাতৃভাষা নাকি রাষ্ট্র ভাষা দিবস
~নাঈম ইসলাম বাঙালি
২১শে ফেব্রুয়ারী আসলেই আমরা আনন্দ আর উদযাপনায় মেতে উঠি। স্মরণ করি প্রত্যেক ভাষা শহীদদেরকে এবং তাদেরকে বসন্তের ফাগুন রাঙ্গা ফুলের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন জানাই শহীদ মিনারে গিয়ে। প্রত্যেক জাতির কাছেই তার ভাষা শ্রেষ্ঠতর প্রিয়। নিজ ভাষায় কথা বলতে কার ভালো না লাগে। একটি নির্দিষ্ট ভাষার মাধ্যমে তার আবেগ অনুভূতি সবকিছু প্রকাশ পায়। নিজ মাতৃভাষা বা রাষ্ট্র ভাষা সকলের কাছেই প্রিয়। ভাষা হলো মনের ভাব প্রকাশের কিংবা শিল্প সংস্কৃতির প্রধান বাহক। একটি ভাষা মানুষের অনুভূতি ও চিন্তাশক্তিকে ফুটিয়ে তুলে, ভাষাকে শিল্পের একটি বৃহত্তম অংশা বলা যেতে পারে।
পৃথিবীর অন্য অন্য ভাষার চেয়ে বাংলা ভাষার ইতিহাস ব্যতিক্রম। পৃথিবীর অন্য অন্য ভাষার জন্য কারও প্রাণ দিতে হয় নাই। বাংলা এমন একটি ভাষা যে ভাষার জন্য বাঙালিদের প্রাণ দিতে হয়েছে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আর হ্যাঁ পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য বাঙালিই প্রথম প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু আমরা বাঙালি অনেকেই এই ভাষার ইতিহাস জানি না বা এই ভাষার সুষ্ঠু ব্যবহার করি না। বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার বছর এবং পৃথিবীতে ৩০ কোটি মানুষ এই বাংলা ভাষায় কথা বলে। ভাষা ব্যবহারের তুলনায় বাংলা পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। যেখানে পৃথিবীতে মোট সাড়ে তিন হাজার ভাষা রয়েছে। বাংলা ভাষাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একজন বাঙালি অবশ্যই এই ভাষার জন্য গর্বিত। কিন্তু বাংলা ভাষা আজ কোনদিকে যাচ্ছে এটার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কেউ চিন্তা করি না।
যদি ১৯৫২ সালের ইতিহাসে আসি, যারা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছেন বা শহীদ হয়েছেন তাদের স্লোগান ছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এমন। সেখানে কিন্তু কেউ বলে নাই যে ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই’। মাতৃভাষার জন্য কেউ আন্দোলন করেন নাই বা শহীদও হন নাই। তাদের দাবী ছিল বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু একদল শিক্ষিত সমাজ এটার অপপ্রচার বা ভুল তথ্য দিয়ে যাচ্ছে, শুধু এমনেই না এটার ব্যবহার এমনভাবেই বাড়ছে যা পাঠ্যপুস্থক বইয়ের মাঝেও বলা আছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কথা। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ভুল তথ্য কেন দিচ্ছি? মাতৃভাষা হলো মায়ের কাছ থেকে শিখা ভাষা এই ভাষার জন্য কোনো স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়া কারও অধিকার নেই। কারণ একজনের মুখের ভাষার আবার অন্যজনে কিভাবে কেড়ে নেয় এটা কিভাবে সম্ভব। সে ছোট সময় থেকে যে ভাষা শুনে আসছে এবং এই ভাষায় কথা বলছে সে ভাষা কোনো ক্রমেই ভুলার নয়। তবে হ্যাঁ একটা রাষ্ট্রের জন্য একটা নির্দিষ্ট ভাষার প্রয়োজন আছে এবং সেটার স্বীকৃতিও দরকার। মূলত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বাঙালিরা আন্দোলন করেছে এবং অনেকেই শহীদ হয়েছেন।
তৎকালীন সময়ে মাতৃভাষা নিয়ে কোনো ইস্যু ছিল না।
আমরা যদি ৫২র আন্দোলনের কিছু দুর্লব চিত্র দেখি তাহলে সেখানে দেখা যায় কিছু ব্যানার বা ফেস্টুন মানুষের হাতে হাতে এবং সেই ব্যানারে কিছু লেখা রয়েছে যা আমরা সকলেই দেখেছি এবং সেই লেখাও পড়েছি। সেখানে লেখা ছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। এরকম কোনো লেখা কোনো জায়গায় ছিল না যে, মাতৃভাষা ভাষা বাংলা চাই। তাই ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা না বলে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রভাষা বলা প্রয়োজন। ৫২র ২১ শে ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের মূলসূত্র মাতৃভাষা নয় রাষ্ট্রভাষা। কাজেই আমরা যদি রাষ্ট্রভাষার পরিবর্তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি তাহলে ইতিহাস বিকৃত হয় এবং নিজরদেরকেই নিজেরা ছোট করে দেখা হয়।