বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
কামরুল হাসান, মহম্মদপুর মাগুরা :
করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্থ দেশ। এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সারা দেশে চলমান কঠোর ‘লকডাউন’ ঈদের পর থেকে আরও ২ সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কাজ না থাকায় একরকম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন মহম্মদপুর উপজেলার অসহায় দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু এই অসহায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগেও পাশে নেই মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ দুই নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মহামারির সময় অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি বারবার আহ্বান জানালেও মহম্মদপুরে চোঁখে পড়ছেনা উপজেলা আওয়ামীলীগের কোন কার্যক্রম। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ সরকারি পর্যায়ে অসহায় মানুষকে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ দেওয়া হলেও তালিকা প্রণয়নে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের দেড় বছর পার হলে পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা না হওয়ায় কমিটিতে আসতে ইচ্ছুক নেতৃবৃন্দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা মনে করছেন আওয়ামীলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় দুই নেতার স্বেচ্ছাচারিতায় দেশের এই দু:সময়ে সংগঠনটি অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে পারছে না।
২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মহম্মদপুর আমিনুর রহমান কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত ত্রি-বাষিক সম্মেলনে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. তোতা মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন (এমপি), মাগুরা-১ আসনের সাংসদ আলহাজ¦ সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা-২ আসনের সাংসদ ড. শ্রী বীরেন শিকদার প্রমুখ। সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন সাবেক সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, মোছা. নাজনীন রব্বানী ও জাফর সাদিক। সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দীতা করেন, মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটন, মো. কামরুল হাসান, মো. তরীকুল ইসলাম (তারা মিয়া), মো. মফিজুর রহমান মিনা। কাউন্সিলারদের প্রত্যক্ষ ভোটে এ্যাডভোকেট আব্দল মান্নান সভাপতি ও মোস্তফা সিদ্দিকী লিটন সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্ত সম্মেলনের পর ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন নির্বাচিত এই দুই নেতা।
উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষিত না হওয়া ভেঙ্গে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে। দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা মুল কর্মীর চেয়ে বেশী হওয়ায় এবং সুভিধাবঞ্চিত ত্যাগী নেতারা ঝিমিয়ে পড়েছেন। জাতীয় দিবসগুলোতে নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতি এবং সাংগঠনিক কোন কার্যক্রম না থাকায় বিতর্কের মুখে পড়েছে উপজেলা কমিটির নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। উপজেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় হচ্ছেনা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি।
অন্যদিকে করোনা মহামারিতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দলীয় কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সব মিলে দলীয় কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ দু’টি ধারায় বিভক্ত। ফলে পূর্ণাঙ্গ গঠনে নেতা ঠিক করতে একমত হতে পারছেন না সভাপতি সাধারন সম্পাদক। আবার প্রতিদন্দি প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করছেন কমিটি গঠনে স্থানীয় এমপি’র একাধিক পদ প্রত্যাশীর সুপারিশ থাকায় দ্বিধাদন্দে ভুগছেন সম্মেলনে নির্বাচিত দুই নেতা। পদ প্রত্যাশি একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের অস্বস্তি ও হতাশার বিষয়টি জানা গেছে। সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী জাফর সাদিক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি জানতে পেরেছি উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি একটি পকেট কমিটি করা হচ্ছে। এ রকম কিছু করলে দলীয় ভাবমূর্তি নষ্টো হবে। সংগঠন তার গতিশীলতা হারাবে। সাধারন সম্পাদক প্রাথী মো. মফিজুর রহমান মিনা বলেন, মুল আওয়ামলীগ বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে কমিটি করলে সেই কমিটি আমরা কোন ভাবেই মেনে নেব না।
এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, পূর্নাঙ্গ কমিটি চুড়ান্ত করা হয়েছে। সিনিয়র নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলোচানা করে শ্রীঘ্রই জেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করা হবে। তবে একটু সময় লাগতে পারে।
সাধারন সম্পাদক মোস্তাফা সিদ্দিকী লিটন বলেন, কমিটি গঠনের পক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। করোনা মহামারির জন্য আমাদের একটু দেরি হয়েছে। খুব শ্রীঘ্রই আমরা জেলা কমিটির কাছে সুন্দর একটি পূর্নাঙ্গ কমিটি জমা দেব। মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পংকজ কুমার কুন্ডু বলেন, আমরা নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কে দ্রুত একটি পূর্নাঙ্গ কমিটি জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, অনুপ্রবেশকারী বা বিতর্কিত কাউকে কমিটি অন্তর্ভূক্ত করলে সে কমিটি কখনো জেলা কমিটি অনুমোদন করবে না।