রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর :
চলতি মৌসুমে শেরপুরের নকলায় এবার মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, পঠাকাটা, উরফা, টালকী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ বেশি হয়েছে। নামে মাত্র সময় ও শ্রম এবং খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা । এ কারণে এই বারোমাসি সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা। দিন দিন বাড়ছে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ। এবার উপজেলায় বাম্পার ফলনের পাশাপাশি চাষিরা ভালো দাম পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারসহ পার্শবর্তী জেলা-উপজেলার বাজারে।
শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রæয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়। সবজি ভান্ডার খ্যাত নকলা উপজেলায় সুস্বাদু সবজি মিষ্টি কুমড়া সারা বছরই পাওয়া যায়। এই এলাকায় মিষ্টি কুমড়া ছাড়াও মৌসুমী সবজি গোলআলু, পটল, শিম, বেগুন, লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙা, বেগুন, চিচিংগা, টমেটো ও করলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। মৌসুমভিত্তিক নিরাপদ শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও পতিত জমিতে শাক সবজি আবাদে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সবজির আবাদ দিন দিন বাড়ছে ।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলায় ২শ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার অপেক্ষাকৃত অনুর্বর শত একর জমিতে চাষ করা গোলআলু ক্ষেতে এই কুমড়ার আবাদ করা হয়েছেন। এমনকি প্রতিটি বাড়ির গৃহিণীরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পরিবারের চাহিদা মিটাতে ২-৪ টি করে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রোপণ করেছেন। এতে সবমিলিয়ে আরো অন্তত ৫০ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় চাষিরা ।
এ বছর নকলা উপজেলার অনেক চাষি মিষ্টি কুমড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমন এক চাষি হলেন চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকার মো. সুরজত আলীর ছেলে গোলাপ জল। তিনি এবছর ৯০ শতাংশ জমিতে আবাদ করা গোল আলুর ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেছিলেন। আলু ক্ষেতে কুমড়া চাষ করায় বাড়তি কোনো খরচ করতে হয়নি। ৯০ শতাংশ জমিতে ১৪ প্যাকেট মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ২ বার হালকা সেচ, একবার নিড়ানি ও সামান্য পরিমাণ জৈব সার দিতে হয়েছে। এতে করে সব মিলিয়ে তার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ৯০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া পাইকারি বিক্রি করেছেন। আর এলাকার বাজারে আরো অন্তত ২০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া খুচরা বিক্রি করা হয়েছে । এখনো যে পরিমাণ ফলন রয়েছে তা থেকে আরো অন্তত ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হবে ।
গোলাপ জল বলেন, আমাদের এলাকার সব গোল আলু চাষি তাদের আলু ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেন। এতে এক জমিতে একই সাথে দুটি ফসল পাওয়া যায়। আলু ক্ষেতে কুমড়ার আবাদ করে অধিক মুনাফা অর্জনের মতো সহজে টাকা আয়ের আর কোন উপায় আছে বলে আমার জানা নেই। আরেক কৃষক আকবর আলী বলেন, আমাদের অনুর্বর জমিগুলোতে আগে না বুঝে অনেক কিছু চাষ করতাম, তাতে লাভ কম হতো। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে কয়েক বছর ধরে এসব জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করি। এতে লাভ বেশি হওয়ায় এখন সবাই মিষ্টি কুমড়ার দিকে ঝুঁকেছেন। তাছাড়া উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিচ্ছেন। এতে দাম কিছু কম পেলেও, সময় ও শ্রম বেঁচে যাওয়ায় লাভ বেশিই পাচ্ছি । শুরুতে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। এখন পুরোপুরি মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে । নারায়নখোলা পশ্চিম পাড়া এলাকার মোকসেদ আলীর ছেলে সবজির পাইকার আব্দুল হালিম বলেন, তিনি এখানকার মিষ্টি কুমড়া পাইকারি কিনে নিয়ে রাজধানী ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারসহ পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলার বাজারের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার কাছে অল্প লাভে বিক্রি করেন। তিনি মিষ্টি কুমড়ার গাছসহ ২০ কাঠা (১০০ শতাংশ) জমি ৭০ হাজার টাকায় চুক্তিতে মিষ্টি কুমড়া কিনেছেন। এই চুক্তির ক্ষেত থেকে সবমিলিয়ে তার অর্ধলাখ টাকা লাভ থাকবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো জানান, ৭ বছর ধরে তিনি মৌসুমী শাক সবজির পাইকারি ব্যবসার সাথে জড়িত। এতে যে লাভ হয় তা দিয়েই তার সংসারের সব খরচসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে। পরিবারের সব খরচ বাদে বছরে অন্তত ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা তার সঞ্চয় থাকে। সঞ্চয়ের টাকায় তিনি ঘর-বাড়ি নির্মাণ করাসহ সাবকওলা মূলে ১০ শতাংশ জমি কিনেছেন, বন্ধক রেখেছেন আরো ৩০ শতাংশ আবাদি জমি।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে দাম ভালো থাকায় চাষিরাও খুশি। মৌসুমভিত্তিক নিরাপদ শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করাসহ দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। চলতি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার ফলন ও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় আগামীতে অনেক কৃষক এই সুস্বাদু সবজি চাষের দিকে এগিয়ে আসবে ।