রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:
আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০ জুনের পরিবর্তে ১০ জুন থেকে রংপুরের ঐতিহ্যবাহি হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছ থেকে পারা শুরু হবে। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ের ১০ দিন আগেই বাজারে আসছে বিষমুক্ত ও অতি সুমিষ্ট আঁশহীন হাঁড়িভাঙা আম। রংপুর জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত বুধবার এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেছে।
এদিকে টেকসই অর্থনীতির জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ হাঁড়িভাঙাকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান আমচাষি, ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন ও পরিবহন এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবিও করেন। এরআগে সোমবার আম পারার সময় এগিয়ে নেয়ার জন্য রংপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন চাষিরা। তাতে তারা দাবি করেছিলেন হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাতে ২০ জুনের পরিবর্তে ১০ জুন করা। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, অনাবৃষ্টির কারণে আম পাকা শুরু হয়েছে, আম পরিপুষ্ট হয়েছে। আমের সাইজও ছোট হয়ে যাচ্ছে। আম বাগানে রাখা যাচ্ছে না। সেকারণে সরকার নির্ধারিত ২০ জুন যদি আম বাজারজাত শুরু হয়, তাহলে অনেক আম বাগানেই পেকে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আম চাষি, বাগানি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়বে। ফলে তারা তারিখ এগিয়ে আনার দাবি জানান। এদিকে রংপুরের জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি পাওয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। তারা সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে ২০ জুনের পরিবর্তে এবার হাঁড়িভাঙা আম ১০ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত করা হবে। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণের এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আমচাষি, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। হাঁড়িভাঙা আমচাষি পরিষদের সভাপতি আব্দুস সালাম সরকার জানান, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে বাজারজাতের তারিখ ২০ জুনের পরিবর্তে ১০ জুন করার দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন আমাদের আবেদনটি বিবেচনায় নিয়েছেন, এ জন্য আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে কৃতজ্ঞ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর, আখিরাহাট, পদাগঞ্জ, মাঠেরহাট, খোড়াগাছ, রুপসি, লালপুকুর, তেকানি, সর্দারপাড়া, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, নাটারাম, রংপুর নগরীর বড়বাড়ী, সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউপির পালিচড়া, নয়াপুকুর, কাটাবাড়িসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হাঁড়িভাড়া আমের ব্যাপক চাষ হয়েছে। এবার জেলার এসব এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আম। এবার জেলায় আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আম। আবহাওয়া ভালো থাকলে শুধু হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করে ২০০-২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারবেন এ জেলার আমচাষিরা। এদিকে, চলতি বছর হাঁড়িভাঙা আমের ফলন ভালো হলেও অনাবৃষ্টি-অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে গতবারের তুলনায় এবার পাওয়া যাবে ছোট আকারে আম। তবে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন ও পরিবহন এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবি এই অঞ্চলের আম চাষিরা। তারা টেকসই অর্থনীতির জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবি করেন।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলাসহ এ অঞ্চলে হাঁড়িভাঙার ফলন ভালো হয়েছে। তবে অনাবৃষ্টির কারণে আম আকারে কিছুটা ছোট হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। সারা দেশে জনপ্রিয়তার তালিকায় থাকা এ আম আবহাওয়া ভেদে এবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। একারণে বাগান মালিকরা এবার গাছ থেকে হাঁড়িভাঙা আম ১০ জুন থেকে পাড়তে পারবেন। তখন থেকে বাজারজাতও করা যাবে বলেও তিনি জানান।