শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

News Headline :
সিরাজগঞ্জে ইজিবাইক চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই আটক দুই কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার পাবনা জেলার ১৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে কাগজে গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বাজারের আগুন: ত্রিশালের কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া বিপাকে সাধারণ মানুষ কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সতর্ক বার্তা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে ৪টি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী গ্রেফতার নওগাঁ সোসাইটির নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষের ঘর দখলের অভিযোগ অপরাধী ও দুষ্টু লোকদের স্থান বিএনপিতে হবে না বলে তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: কেন্দ্রীয় যুবদল সম্পাদক নয়ন পাবনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে ওসির ইন্ধনে সাংবাদিকের খোজে সন্ত্রাসীরা মতিহারে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সোহেল গ্রেফতার

রংপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন তবুও শঙ্কায় কৃষক ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি

Reading Time: 3 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো :
রংপুর মহানগরীসহ জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন চাল অতিরিক্ত থাকবে। তবে ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। উৎপাদন বেশি হলে কম দামে ধান-চাল বিক্রি করতে হয় তাদের। এতে মাঠের হাসি হাটেই শেষ হওয়ার শঙ্কা থাকে বেশি। এছাড়াও শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরিও তাদের ভোগাচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তার থেকে আরো ৩০৪ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বি আর-২৮, বি আর-২৯, বি আর-৮১, বি আর-৮৮, বি আর-৮৯ জাতের ধান ছাড়াও হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে। রংপুর নগরীসহ জেলায় চলতি বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন। জেলায় চালের চাহিদা আছে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন হবে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল অন্য জেলার চাহিদা মেটাবে। গত বছর ছিল ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন। এবার গত বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার ৪০৯ মেট্রিক টন ধান বেশি হবে। এবার প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। রংপুর মহানগরীর তামপাট, কেরানীরহাট, দর্শনা, পশুরাম, হারাগাছ, মাহিগঞ্জ, বড়বাড়ি, নাজিরেরহাট, সদর উপজেলার জানকী ধাপেরহাট, পালিচড়া, পাগলাপীর, মমিনপুর, হরিদেবপুর, পানবাজার, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ, ভাংনী, ভক্তিপুর, রানীপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, যতদূর চোখ যায় বৈশাখের হালকা বাতাসে ধানের শীষে দোল খাচ্ছে সবুজ-হলুদ বর্ণ বোরোর চাদর। যেন সোনালী ধানে ভরপুর ফসলি মাঠ। বর্তমানে বোরো ধান কোথাও সতেজ হয়ে সবুজ, আবার কোথাও হলুদ রং ধারণ করেছে। বিস্তীর্ণ ধানখেতে সবজু-হলুদ বর্ণে দোল খাচ্ছে সেচনির্ভর বোরো ধান। কিছু কিছু এলাকায় আগাম রোপণ করা বোরো ধান কাটা হয়েছে। বৈশাখের মাঝামাঝি এ সময়ে রংপুরে প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আর অল্প কিছু দিন পর পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব বলে কৃষকরা জানিয়েছে।
রংপুর নগরীর তামপাট এলাকার কৃষক নুর ইসলাম, ইছার আলী ও হুমায়ন রশিদ শাহিন জানান, তারা জমি বর্গা নেওয়া জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানখেতে তেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় খুশি তারা। সময়মতো খেতে পানি, সার দিয়েছেন। কিছু ধান আগাম পেকেছে তাই ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। তারা জানান, অনেকেই স্বল্প পরিসরে হাট-বাজারে ধান বিক্রি করছেন। বাজারে যে দামে ধান-চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না। এমনকি সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তাতেও পোষাবে না। আবার উৎপাদন বেশি হলে কম দামে ধান-চাল বিক্রি করতে হবে। এর ফলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে বলে এই কৃষকরা জানিয়েছেন। রংপুর নগরীর সাতমাথা বীরভদ্র এলাকার কৃষক সুজন পাটোয়ারী জানান, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সারের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিজেলসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে। বর্তমানে ধান রোপণ করা থেকে কাটা পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি বেশি। ধান চাষ করতে এবার অনেক বেশি খরচ হয়েছে। এসবের মাঝেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর এলাকার কৃষক মজনু মন্ডল ও আলীপুর গ্রামের আততাব হোসেন। তারা এসেছেন উপজেলার জায়গীরহাটে ধান ধান বিক্রি করতে। এসময় তারা বলেন, বর্তমানে হাটে অল্প পরিমাণে ধান বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে দাম ভালোই আছে। ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। আরও মাসখানেক পর পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। তখন ধান বেচাকেনা জমবে। তারা আরোও বলেন, হাটে বর্তমানে প্রতিমণ মোটা ধান আট শ থেকে নয় শ টাকা এবং চিকন ধান এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। একর প্রতি ২০ হাজার লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দাম নিয়ে শংষ্কার কথাও তারা জানান। কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলছেন, উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না গেলে ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে কৃষকরা। এতে সামগ্রিক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করার উপায় বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এব্যাপারে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানিয়েছেন, চলতি বছর প্রকৃতি এখনো অনুকূলে রয়েছে। প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকেরাও প্রতিনিয়ত দক্ষতা অর্জন করেছেন। এসব নানা কারণে চলতি মৌসুমে অন্য জেলার চাইতে রংপুরে বোরো ধানের ফলন অসম্ভব ভালো হয়েছে। এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরকেও ছাড়িয়েছে। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com