বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর ব্যুরো:
# আলুর চাষাবাদ হুমকির মুখে, আলুবীজ পাচ্ছেন না রংপুরের চাষিরা\ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা # বাড়ছে অতিরিক্ত ব্যয়।
অবরোধের ফাঁদে পড়েছে পরিবহণ খাত। তাই এবার রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে আলুর চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবহণ সংকটে আলুবীজ সরবরাহ করতে পারছেন না ডিলাররা। ফলে আলুচাষিরা বীজআলু চাহিদামতো ও সময়মতো পাচ্ছেন না। নভেম্বর মাসের শুরুতেই চাষিরা আলুবীজ রোপণ শুরু করেন। অনেকে আগাম চাষ হিসাবে অক্টোবর মাসেও রোপণ করে থাকেন। তবে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে আলু চাষ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও চাষিরা। রংপুর অঞ্চলে বিএডিসির ২০২৩-২৪ বিতরণ বর্ষে ডিলারদের জন্য আলুবীজ বরাদ্দের বুকিংয়ের শেষ তারিখ ছিল গত ৫ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে ৭৪৯ জন ডিলার বীজের জন্য বুকিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু চলমান অবরোধের মতো রাজনৈতিক নানা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির কারণে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে অবস্থিত কোল্ড স্টোরেজ থেকে নির্ধারিত সময়ে বীজআলু সংগ্রহ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিবহণ সংস্থা ও ব্যক্তিগত পরিবহণ মালিকরা সড়কে বর্তমান অগ্নিসংযোগ পরিস্থিতির কারণে আলু পরিবহণে অপারগতা জানিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী খাবার আলু বীজআলু হিসাবে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে মানসম্পন্ন বীজের অভাবে আলু চাষাবাদে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আগেই বিশেষ ব্যবস্থায় আলু পরিবহণের দাবি করেছেন আলু চাষিরা। জানতে চাইলে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিএডিসি ডিলার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আলুর জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা বুকিং দেওয়ার পরও তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দূরের বা কাছের যে কোনো কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজআলু পরিবহণ করতে পারছেন না। রংপুর নগরীর বিএডিসির ডিলার মো. ফিরোজ আলম বলেন, আলুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় স্বাভাবিকভাবে এই মৌসুমে আলুবীজের চাহিদা বেশি থাকবে। তাই তিনি আশায় ছিলেন আলুবীজ বিক্রি করে লাভবান হবেন। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু পরিবহণে ট্রাক ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই নভেম্বর মাসে কৃষকরা না পেলে অবিক্রীত থেকে যাবে আলুবীজ। বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক (বীজ বিপণন)-এর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে আলুবীজের মোট বরাদ্দ তিন হাজার ১৪৫ দশমিক ৯১৫ মেট্রিক টন। ডিলার মূল্য হচ্ছে প্রতি কেজি আলুবীজ (এস্টারিক্স) সাড়ে ৫৩ টাকা (এ-গ্রেড) এবং ৫২ টাকা (বি-গ্রেড) এবং কৃষক পর্যায়ে যথাক্রমে ৬০ টাকা ও সাড়ে ৫৮ টাকা। এ ছাড়াও অন্য জাতগুলো প্রকার ভেদে ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে ৪ থেকে ৭ টাকা কমবেশি থাকে।
গত বছর (২০২২-২৩) বিতরণ বর্ষে আলুর বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৫৬৭ দশমিক ৯৬৯ মেট্রিক টন। এ ছাড়া গত বছর প্রতি কেজি বীজ আলু ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে বর্তমানের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করেছে বিএডিসি। বিএডিসি (বীজ বিপণন) রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. মাসুদ সুলতান বলেন, অবরোধের কারণে পরিবহণ সংকটে ডিলাররা দূরের কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজ আলু পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়েছেন। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুর বিভাগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। তার পরও শুধু আলুবীজ নয়, যে কোনো ব্যবসায়ী যদি আমাদের কাছে নিরাপত্তাসহ যে কোনো সহযোগিতা চান আমরা সাধ্যমতো সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। এমনকি বাইরের জেলায় যদি সহায়তা প্রয়োজন হয় আমরা তাও দিতে প্রস্তুত। জেলায় পর্যাপ্ত বীজআলু মজুদ আছে বলে কৃষকদের নিশ্চিত করেন তিনি। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর এবং আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন।