রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
রংপুর নগরীসহ রংপুর অঞ্চলে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। এবারের শীতে আলু নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে চাষিদের। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এই আবহাওয়া আলুর জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। এটি কাটিয়ে উঠতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের উদ্বিগ্ন না হয়ে নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষিকাজ নির্ভর পরিবারগুলো। রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলার চরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের এই হানায় কৃষকের ধানের বীজতলা থেকে শুরু করে প্রভাব পড়েছে আলুসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে। বিশেষ করে আলু চাষিরা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শীত আর ঠান্ডা বাতাস এবং সূর্যের তাপ না থাকায় চলতি মৌসুমে আলুর ঢগায় পচারি রোগের দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা চাষিদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে শাক সবজি ১১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর, সরিষা ১১ হাজার ৫৮০ হেক্টর, বোরো ধানের বীজ তলা আছে ৫ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমি।এদিকে বিদেশে আলু রপ্তানির জন্য উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে ৪০০ কৃষককে রপ্তানি উপযোগী আলু চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ৮০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেবে কৃষি বিভাগ।সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, দর্শনা, তপোধন, পশুরাম, রাজেন্দ্রপুর, সদরের পালিচড়া, ধাপেরহাট ও পীরগাছা উপজেলার পারুল, অন্নদানগর, পাওটানা, কান্দিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চাষিরা আলুর ক্ষেত আর বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও পানি দিচ্ছে, কেউ ঔষধ দিচ্ছে আবার কেউ আগাছা পরিস্কার করছে।
নগরীর তামপাট এলাকার আলু চাষি নুর ইসলাম ও আশরাফুল আলম বলেন, যেহারে শীত বাড়ছে, তাতে চাষাবাদ করা মুশকিল। সার, বীজ, সেচ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সেই সাথে দিনমজুরও পাওয়া যায় না। ধার দেনা করে আলু চাষ করছি, কিন্তু শীতের কারণে যদি আলুর পচারি রোগ হয় তাইলে আমরা শেষ। পীরগাছা উপজেলার পাওটানার চরে আলু চাষ করেছেন সোহাগ হোসেন ও আজগর আলী। তাদের বাড়ি নগরীর বড় রংপুর এলাকায়। তারা প্রতিবছর ওই এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেন। তারা জানান, এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। শুধু তারা নন, তাদের মতো আরও অনেকেই এমন আশঙ্কা করছেন।নগরীর কেরানীরহাট এলাকার বিন্ন্যাটারি গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, যেভাবে শীত ও হিম বাতাস রয়েছে, তাতে আলুর পচারি রোগের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই আবহাওয়া বেশিদিন থাকে তাহলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবার আলুর বীজ, সারসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বেড়েছে। তার উপরও যদি এই আবহাওয়ায় আলুর পচারি রোগ দেখা দেয় আর্থিকভাবে আরও ক্ষতি হবে।রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে আলুর চাষাবাদ এখন মধ্যবর্তী সময়ে। শীতে আলুর তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শীতের সঙ্গে দিনের সূর্যের আলো যদি না থাকে এবং ঠান্ডা বাতাস বিরাজমান থাকে তবে কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুরে এবার তাপমাত্রা আট থেকে এগারোর মধ্যে উঠানামা করছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি। তবে রাতের তাপমাত্রা কমলেও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।