মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন

News Headline :
কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ মান্দায় মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৩শো গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ

রাজশাহীতে প্রায় বিলুপ্ত ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

Reading Time: 2 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা জাতির অবদান। বাংলাদেশ রূপ বৈচিত্রের দেশ। এ দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝায়। এজন্য মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা হয়। যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জরিত তাদের বলা হয় কুমার।
প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার মেয়েদের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। কাঁচামাটির গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না। হাটবাজারে আর মাটির তৈজসপত্রের পসরা বসে না। এখন মাটির জিনিসপত্র শুধু বিশেষ দিনগুলোতে, বা বিশেষ কারণেই ব্যবহার হয়। কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎ শিল্প। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলার বহু বছরের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।
শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এসব তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন আবেদন হারাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। রাজশাহীর ঐতিহ্যগত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এক সময় রাজশাহী শহরে কুমারপাড়ায় তৈরি হতো মাটির শিল্প। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মাটির তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা লোপ পাওয়ায় নগরীর কামারেরা ছেড়েছেন তাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের পেশা। এখন নগরীতে একটি ঘরেও হয় না মৃৎশিল্পের কাজ। মাটির এ শিল্পটি যেনো মাটিতেই গেছে।
এ শিল্পের অবস্থা জানতে গিয়ে কথা হলো মৃৎশিল্পী প্রশান্ত পালের সাথে। তিনি জানান, আগের মত এখন মাটির জিনিসপত্রের তেমন চাহিদা নেই। তবে পহেলা বৈশাখে এবং রথের মেলায় কিছুটা ব্যবসা হয় তাদের। সে সময় বাইরে থেকে পন্য নিয়ে এসে বিক্রি করেন তিনি।
মৃৎশিল্পী ফটিক পাল বলেন, সারাবছর তেমন বেচা-কেনা হয় না। পূজায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল কাজে লাগে, তাই সেই সময় বেচা-বিক্রি হয় একটু। আবার মিষ্টির দোকানে দইয়ের পাতিল, ফুলের টব বিক্রি হয় তাই চলতে পারি। তবে তিনি ও এগুলো তৈরি করেন না বাইরে থেকে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। মাটির পাত্রের ব্যবহার নিয়ে একজন ক্রেতা বলেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্র আমাদের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। আমরা এখন প্লাস্টিক, মেলামাইনর তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার করি। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় এই শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়লেও নতুন করে মৃৎশিল্পের আর একটি শাখা উন্মোচিত হয়েছে। সেটি হলো নান্দনিক মৃৎশিল্প। এ শাখার মৃৎশল্পীরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিনসামগ্রী ও শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন, ইংরেজিতে একে বলা হয় পটারি শিল্প। এরা টেরাকোটা বা মৃৎফলকে খোদাই করে সুন্দর সুন্দর শোপিস তৈরি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তি, অলঙ্কার, নকশি পাত্র, ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করছেন। রাজশাহীর অনেক দোকানে এসব শৌখিন মৃৎসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সঠিক নজরদারি। সরকারের পক্ষ থেকে কুমার স¤প্রদায়দের জন্য সহজ ঋণ, কাঁচামাল প্রদান, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাহায্য করলে, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com