বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
টমেটোর রাজ্য রাজশাহীর গোদাগাড়ী। এই উপজেলায় রাজশাহীর সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়। বছরে এই উপজেলা থেকে ১১০ কোটি টাকার বেশি টমেটো কেনাবেচা হয়। যার সাথে সরাসরি কৃষক জড়িত। ফলে টমেটো কৃষকদের কাছে অর্থকরি ফসল রূপে পরিগণিত হয়েছে। টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টমেটো জমিতে উৎপাদন হচ্ছে, জমি থেকেই বিক্রি। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টমেটো চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে প্রতিবছরই এই উপজেলায় বাড়ছে টমেটো চাষের জমি। তবে এ বছর অসময়ের বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা কমেছে টমেটোর চাষ। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় তা পুষিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
এবছর রাজশাহী জেলায় টমেটো চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। যা উপজেলার হিসেবে সিংহভাগ গোদাগাড়ী উপজেলায়। গত বছর (২০২২) মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর এবং ২০২১ সালে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল। তবে জেলায় মোট ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির মধ্যে গোদাগাড়ীর চাষ বাদ দিলে বাকি ২০০ হেক্টর সব উপজেলা মিলে চাষ হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রাকিব জানায়, টমেটো গেল ৬/৭ বছর ধরে এই অঞ্চলে চাষ হচ্ছে। আগে বাণিজ্যিকভাবে তেমন চাষ হতো না। বর্তমানে গোদাগাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ হচ্ছে। টমেটো চাষের পরে বিক্রির সুবিধা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জমিতেই টমেটো কিনে নেন। গোদাগাড়ীর গোপালপুরের শ্রী বলরাম কর্মকার বলেন, চাষীরা এবার বেশির ভাগ ৬৪২ প্রজাতির টমেটো চাষ করেছে। এছাড়া অনেকেই অন্য জাতের টমেটোও চাষ করেছেন। তবে এবছর তুলনামূলক গাছে টমেটো কম। টমেটোর ভালো ফলন হয়নি। তবে ও দাম মোটামুটি ভালো। টমেটো ব্যবসায়ী শামসুল আলম বাবু জানান, গত ১৫ দিন আগেও টমেটোর বেশি দাম ছিল। এখনও ভালো দাম আছে। তিনি প্রতিদিন এক ট্রাক করে টমেটো পাঠান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লায় ট্রাকে করে টমেটো পাঠান তিনি। তার দাবি তুলনামূলক ভালো দাম এই বাজারগুলোতে।
তিনি আরো বলেন, টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্ম হয়েছে। এই শ্রমিকরা জমি থেকে টমেটো তোলে, পরিবহনে এবং রৌদে শুকানো ছাড়াও বিভিন্ন কাজে লাগে। তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ জানান, টমেটো নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে দু’বার টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো রয়েছে। এই টমেটোর বেশি দাম পানচাষীরা। এবছর এই টমেটোগুলো ১৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে বাজারে। তিনি বলেন, এবছর গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে টমেটোর উৎপাদন ধরা হয় ২৫ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে এবছর টমেটো উৎপাদন হবে ৫৬ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন। এই টমেটোর গড় মূল্য ২০ টাকা কেজি ধরা হলে দাম দাঁড়ায় ১১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এতে ধরা যায় ১১০ কোটি টাকার বেশি টমেটো কেনাবেচা হয়। শুধু তাই নয়, টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে টমেটোর উৎপাদন ধরা হয় ২৫ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে এবছর টমেটো উৎপাদন হচ্ছে ৫৬ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন। দামের হিসেবে টমেটোর গড় দাম ২০ টাকা কেজি। এতে মোট দাম দাঁড়ায় ১১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এবছর কৃষি অফিস ধারণা করছে ১১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার টমেটো কেনাবেচা হবে শুধুমাত্র গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে। সাধারণত আউশ ধান কেটে নেয়ার পরে টমেটোর চাষ শুরু হয়। এ উপজেলায় ১৭ থেকে ২০ জাতের টমেটোর চাষ হয়। যার মধ্যে বেশির ভাগ হাইব্রিড। তবে অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক।