শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
জীবন ধারণের জন্য মানুষ কতো রকমই না কাজ করে থাকেন। দিনমজুর থেকে শুরু করে উচ্চ বৃত্তদের নানা কজের শেষ নেই। তবে বিশ্বায়নের কারণে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে স¤প্রতি নতুন নতুন কাজ সৃৃষ্টি হয়েছে। তেমনি একটি কাজ বা পেশা মধ্যরাতে ভ্যান নিয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ওপর কাঁচা বাজারের ব্যবসা করা। অর্থাৎ ভ্যানের মধ্যে খাঁচা বসিয়ে আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, লাউ, পটোলসহ নানা শাকসবজি ও তরিতরকারীর পসরা নিয়ে শহরজুড়ে ঘুরে ঘুরে তাদের সেই পণ্য বিক্রি করে থাকে। এদের মধ্যে শেরপুর জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী নয়আনী বাজার কলেজ রোড এলাকায় নিয়মিত বসে এ ভ্যান বাজার। তবে তা অন্য এলাকার চেয়ে একটু ভিন্ন রূপ। এ বাজারটি মূলত বসে রাত ১০টার পর এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা থাকেন রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত। এছাড়া শহরের রঘুনাথ বাজার নিউমার্কেট মোড় থেকে থানা মোড় সড়কেও বেশ কিছু ভ্যান বাজার লক্ষ্য করা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভ্যান ও তরিতরকারি পাওয়া যায় ওই নয়আনী বাজার এলাকার ভ্যান বাজারে।শেরপুর জেলা শহরের ওই মধ্যরাতের ভ্যান বাজারে ঘুরে জানা গেছে, এখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ভ্যান নিয়ে আসেন সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লার প্রান্তিক ক্ষুদ্র কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী। তারা মূলত প্রতিদিন বিকেল বেলা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সবজি ক্ষেতে এবং বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে তাদের পছন্দের টাটকা শাকসবজি ক্রয় করে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরে। পরে তারা ওই শাকসবজি ধোয়ামোছা করে তাদের ভ্যানে তোলেন। এরপর সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে পড়েন শহরের উদ্দেশ্যে। শহরের বিভিন্ন দোকানপাট রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে শহরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে সবশেষে রাত ১০ টার পর জড়ো হন নয়ানী বাজার কলেজ রোড এলাকায়। সেখানে শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সময় ওই ভ্যান বাজারে গিয়ে বাজার শুরু করেন। ভ্যান বাজারের ভ্যান মালিকরাও তাদের মালামাল শেষ না হলেও সর্বশেষ রাত ২টার দিকে তারা তাদের ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। এরপর ঘুমিয়ে পড়ে পরের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের সাংসারিক কাজকর্ম শেষ করে রাখেন। এরপর দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন পাইকারি বাজার এবং প্রত্যন্ত গ্রামের টাটকা সবজি ক্ষেতের সন্ধানে।এ বিষয়ে শহরের মীরগঞ্জ মহল্লার ভ্যান ব্যবসায়ী আনোয়ার জানান, ‘আমরা সারাদিন নিজেদের বিভিন্ন কাজকর্ম শেষ করে রাতের বাজারের জন্য প্রস্তুতি নেই। ভ্যান নিয়ে সন্ধ্যার পর বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে বেচাবিক্রি করে ভোর রাতে, কখনও বা সকাল বেলা বাসায় ফিরি। এখানে আমাদের মাত্র ২০ টাকা বাজারের টোল দিতে হয়। এছাড়া আমাদের কোনো খরচ নেই।’কসবা ভাটিপাড়া গ্রামের রহুল আমীন জানান, ‘প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার সবজি ও তরিতরকারি কিনে তা প্রায় ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এতে লাভ হয় প্রায় এক হাজার টাকা। এ টাকা দিয়েই তার সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে যায়।’শহরের নয়আনী বাজার মহল্লার আলম বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী কাইয়ুম জানান, আমরা সারাদিন ব্যবসা করে দোকানপাট বন্ধ করে এই ভ্যান বাজার থেকেই বাজার করে থাকি। এখানের তরিতরকারী ও সবজিগুলো বেশ সতেজ থাকে বিধায় আমরা এখান থেকেই বাজার করে থাকি।এ বিষয়ে নয়আনী বাজারের ইজারাদার আব্দুস সাত্তার জানান, শহরের অন্যান্য বাজারে অনেক বেশি ইজারা টোল আদায় করা হলেও আমাদের এখানে বিশেষ করে রাতের ভ্যান বাজারের ভ্যান মালিকদের কাছ থেকে মাত্র ২০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়। যাতে গরীব ভ্যান মালিকদের কোনো সমস্যা না হয়।