শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
ভোরের আলো ফোটার আগেই শেরপুরের ব্রিজ বাজারে শুরু হয়ে যায় সবজি ও ফলের পাইকারি পণ্য সামগ্রী বেচাঁ-কেনা। এই বাজারটির অবস্থান জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারি ইউপির সাতপাকিয়া গ্রামের শেরপুরের শেষ সীমানায়। বাজারের আড়তদারা বলেন, প্রায় সারা দেশ থেকেই পাইকাররা এই বাজারে আসেন সবজি ও ফল কিনতে। আর পাইকাররা বলেন, সবজির ভান্ডারখ্যাত শেরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এই বাজারের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বাজারটির সার্বিক উন্নয়নে সরকারি সহায়তা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
সরেজমিনে ব্রিজ বাজারে গেলে দেখা যায়, কারো দম ফেলার ফুসরত নেই, সবাই মহা কর্মব্যস্ত। পুরো বাজার কোলাহলে পূর্ণ। একদিকে পাইকাররা কৃষক এবং আড়তদারের সাথে পণ্যের দাম নিয়ে দর কষাকষি করছেন। অন্যদিকে ট্রাক, লড়ি, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও পিকাপে শ্রমিকরা পণ্য লোড-আনলোড করছেন। বাজার ঘিরে গড়ে ওঠা টং দোকানগুলোতেও চা, পান, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা।
ওই বাজারের জমির অন্যতম মালিক লাল মামুদ বলেন, ২০১৫ সালে তিনি নিজে এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য আকবর আলী, শফিকুল ইসলাম, ডালিম মিয়া, খোকন মিয়া ও সাইদুল মিয়া মোট ৪৫ শতাংশ জমি ভাড়ায় পাইকারি হাট চালুর জন্য আড়তদারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে ৫৩ জন আড়তদার স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই বাজারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশ। আর বাড়তে থাকে পাইকারদের আনাগোনা। পরে স্থান সংকুলানের জন্য আশপাশ থেকে আরো ৯৯ শতাংশ জমি ওই হাটের সাথে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে সেখানে পাইকারদের বিশ্রামাগার, যানবাহন রাখার স্থান এবং আধুনিক মানের টয়লেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।ঈশ^রদীর পণ্য সরবরাহকারি জসিম উদ্দীন বলেন, গত ছয় বছর যাবত মৌসুম অনুযায়ী ব্রিজ বাজারের মাইশা সবজি ভান্ডারসহ আরো বেশ কয়েকটি আড়তে তিনি ফল সরবরাহ করেছেন। এ বছর তিনি ১৯৬ গাড়ি আম, ৭০ গাড়ি কাঁঠাল, ৮৪ গাড়ি লিচু সরবরাহ করেছেন। বর্তমানে নানা জাতের কলা দিচ্ছেন। তার মতো আরো অনেকেই ফলসহ আরো অন্যান্য নিত্য পণ্য-সামগ্রী সরবরাহ করেন বলে তিনি জানান। আব্দুস সাত্তার নামে এক আড়তদার বলেন, তিনি এখন চীন থেকে গাজর এবং ভারতে থেকে টমেটো আমদানি করছেন। ওইসব পণ্য ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, লালমনিরহাটসহ প্রায় সারা দেশে সরবরাহ করছেন।মাস্তুরা ট্রেডার্সের মালিক খুস মাহমুদ বলেন, তার দোকানে প্রতিদিন ২০ বস্তা পেঁয়াজ, ১০ বস্তা আলু ও ১৫ বস্তা রসুন বিক্রি হয়। লেনদেন হয় লক্ষাধিক টাকা।সবজির আড়তদার ইদ্রিস আলী বলেন, শেরপুরের চরাঞ্চলের সবজির ভান্ডার। সদর উপজেলার কামারিয়া, কামারের চর, চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়াসহ ৬টি ইউনিয়নের হাজারো কৃষক তাদের নিজ নিজ ক্ষেতের সবজি ট্রাক ও পিকাপে করে ভোর ৫টার মধ্যে বাজারে চলে আসেন। এছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও বিপুল পরিমাণ সবজি আসে। তিনি আরো বলেন, ঠিক একইভাবে প্রায় সারা দেশের পাইকাররা আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ মৌসুম ভিত্তিক নানা ফল এই বাজারে নিয়ে আসেন। তারা আবার ফেরার সময় চাহিদা মাফিক করলা, পেঁপে, বরবটি, ঝিঙ্গা ও বেগুনসহ ১৭-১৮ প্রকারের সবজি ট্রাক ও পিকাপে ভরে নিয়ে যান। সকাল ৮টার মধ্যে সব পাইকার পণ্য সামগ্রী কিনে নিয়ে আবার তাদের নিজ এলাকার বাজার ধরেন। এই তিন ঘন্টার বাজারে কোটি টাকার সবজি আর ফল হাত বদল হয়। আর বাজারটি ঘিরে আয়ের পথ খুলে গেছে হাজার হাজার কৃষক পরিবারের।হাজী এন্টারপ্রাইজের মালিক ও ব্রিজ বাজার কমিটির সভাপতি আবুল মিয়া বলেন, তিনি এক সময় জামালপুর শহরের সকাল বাজারে আড়তদারির ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে ব্রিজ বাজার চালু হওয়ার পর ওই বাজারটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে তিনি এখানে চলে আসেন। তার ব্যবসায় আবারও চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ব্রিজ বাজারের অবস্থান পাশের জামালপুর জেলাকে সংযুক্ত করেছে। আর দুই জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। এখান থেকে সারা দেশে পণ্য সামগ্রী সহজে আনা-নেয়া করা যায়। এসব কারণে বাজারটির নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বাজার হওয়াতে শেরপুরের চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে।চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, ব্রিজ বাজারের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বাজারের উন্নয়নের জন্য শেরপুর সদর আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।