বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর :
স্বল্প খরচে অধিক ফলন, ঔষধি গুণ, দেশীয় আখের চেয়ে মোটা, অধিক রসালো এবং দ্বিগুণ লম্বা আকৃতির হওয়ায় ফিলিপাইনের কালো রঙের আখ চাষে ঝুঁকছেন শেরপুরের কৃষকরা।
জানা গেছে, জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা গ্রামের কলে জশিক্ষক আব্দুর রহিম তার গ্রামের বাড়িতে গত বছর ৫০ শতাংশ জমিতে ১২ হাজার এবং সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের কেন্দুয়ারচর গ্রামের দুই বন্ধু প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ও সোহেল আহমেদ যৌথভাবে তাদের মালিকানাধীন তালুকদার এগ্রো ফার্মের ৩০ শতাংশ জমিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফিলিপাইনের কালো আখের চারা রোপণ করেন।
আখ চাষি প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, এ আখের নানা গুণের পাশাপাশি চাষেও রয়েছে ভিন্নতা ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটি চারার গোড়া থেকে এক থেকে অন্তত ১০টি নতুন চারা গজায়। আর প্রতিটা গাছ লম্বা হয় ১৬-২০ ফুট পর্যন্ত। সার-পানি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। এছাড়া একবার চারা রোপণ করলে পরবর্তী তিন বছর নতুন করে আর রোপণের প্রয়োজন পড়ে না। কেটে ফেলা গোড়া থেকে নতুন করে আখের চারা গজিয়ে ওঠে। সেইসঙ্গে পরবর্তী বছর আবারো ফলন পাওয়া যায়।
আব্দুল মান্নান আরো বলেন, প্রতিটি আখ গাছ থেকে প্রায় তিন লিটার রস পাওয়া যায়। আর এই রসের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হতে পারবেন। বাজারে প্রতি পিস আখ ৫০-৭০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করা যায়। তবে খুচরায় বিক্রি হয় ১শ টাকা।তিনি বলেন, স্বল্প খরচে অধিক ফলন, ঔষধি গুণে ভরপুর, দেশীয় আখের চেয়ে মোটা, অধিক রসালো এবং দ্বিগুণ লম্বা আকৃতির হওয়ায় শেরপুরে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফিলিপাইনের কালো রঙের আখ চাষ। শ্রীবরদীর আখ চাষি রহিম মিয়া বলেন, ফিলিপাইনের এই কালো আখ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের উত্তরপ্রদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স¤প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা বিভাগের পক্ষ থেকে শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এই আখ মাত্র ৮-১০ মাসের মধ্যে পরিপক্ক হয়, এটি রসালো ও প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে এ আখ চাষে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। রহিম মিয়া জানান, তিনি ফিলিপাইনের আখের চারা প্রথমে রাজশাহী থেকে নিয়ে আসেন। এরপর কলমের মাধ্যমে আরো চারা উৎপাদন শুরু করেন। এ আখে পোকামাকড় বা রোগবালাই নেই বললেই চলে। শুধু সামান্য জৈব সার এবং শুষ্ক মৌসুমে কিছু সেচের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আশপাশের কৃষকরা এই আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠায় এর চারার চাহিদা বেড়ে গেছে।
শেরপুর সদর উপজেলার তালুকদার এগ্রোর পরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা দিনাজপুর থেকে চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক চাষ করে বেশ সফল হয়েছি। দামও ভালো পাচ্ছি। এই আখ বেশ সুস্বাদু। তাই আগামীতে আরো বেশি জমিতে আবাদ করার চিন্তা করছি।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ফিলিপাইনের বø্যাক সুগার জাতের বা কালো আখ এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। এটি ২০১৮ সাল থেকে নটিফাইট ফসল হিসেবে গবেষণা চলছে এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর গবেষণার ডাটা হাতে আসলে এবং ভ্যারাইটি যাচাই-বাছাই শেষে বাণিজ্যিকভাবে যখন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন এ আখ চাষে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন কৃষকরা।