শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন

News Headline :
সিরাজগঞ্জে ইজিবাইক চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই আটক দুই কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার পাবনা জেলার ১৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে কাগজে গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বাজারের আগুন: ত্রিশালের কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া বিপাকে সাধারণ মানুষ কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সতর্ক বার্তা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে ৪টি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী গ্রেফতার নওগাঁ সোসাইটির নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষের ঘর দখলের অভিযোগ অপরাধী ও দুষ্টু লোকদের স্থান বিএনপিতে হবে না বলে তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: কেন্দ্রীয় যুবদল সম্পাদক নয়ন পাবনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে ওসির ইন্ধনে সাংবাদিকের খোজে সন্ত্রাসীরা মতিহারে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সোহেল গ্রেফতার

শেরপুরে চাষ হচ্ছে শরীফা,রাম্বুটান ও এলাচ ফসল

Reading Time: 3 minutes

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
শেরপুরে পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চমূল্যের ফসল শরীফা, রাম্বুটান ও এলাচ চাষ শুরু হয়েছে। জেলা সদরের লছমনপুর ইউপির কাজীর চর এলাকায় উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান গড়ে তুলেছেন ওই বাগান। তার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর চরপক্ষীমারী ইউপির সাতপাকিয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত. আব্দুস সালামের ছেলে।উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান জানান, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যবিদ হিসেবে টানা ২৮ বছর চাকরি শেষে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এরপর যোগ দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে। বর্তমানে তিনি পাশের জেলা জামালপুরে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এক সময় চিন্তা করেন উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের কৃষিতে আকৃষ্ট করা গেলে বিপুল পরিমাণ উদ্যোক্তা এবং খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ওই ভাবনা থেকে তিনি ভারতের কেরালা রাজ্য এবং শ্রীলংকা সফর করেন। সেখান থেকে তিনি শরীফা এবং এলাচের চাষ পদ্ধতি রপ্ত করেন। আর কেরালা থেকে সংগ্রহ করেন ওই দুই ফসলের চারা।মনিরুজ্জামান বলেন, বাগান করার জন্য ২০২০ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছ থেকে শেরপুর সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের কাজীর চর এলাকার ১৮ বিঘা জমি লিজ নেন। চরাঞ্চলের ওই জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগী করার জন্য সেখানে প্রথমে ক্যাপসিকাম, লাউ, স্কোয়াশ, পেঁপে ও গাজর আবাদ করেন। পরবর্তীতে ভিয়েতনাম থেকে আনা বীজ বিহীন বারোমাসী জাতের ১ হাজার ৬শ’ লেবু চারা, ২৫০টি বারোমাসী জাতের কাটিমন আম, ৬০টি বল সুন্দরী জাতের বড়ই, ১৫৫টি বারি মাল্টা-১, ১৪টি সুপার টেন জাতের পেয়ারা, ১৪৪ টি শরীফা এবং ৪টি রাম্বুটানের চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া এলাচের পর্যাপ্ত চারা তৈরি করা হয়েছে যা আগামী বছরের প্রথম দিকে শরীফা ফল গাছের নিচে ছায়ায় রোপণ করা হবে। আর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জাতের ফলের চারা সংগ্রহ করতে ১২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। ওই বাগানের পরিচর্যাকারী মুন্নাফ মিয়া জানান, ওই বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকার লেবু ও বড়ই বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া মাল্টা গাছে থোকায় থোকায় বিপুল পরিমাণ ফল এসেছে। এখন অন্তত ৯শ’ কেজি মাল্টা বিক্রির উপযোগী হয়েছে। পাইকাররা ঘুরাঘুরি করছেন মাল্টা কেনার জন্য। পাশাপাশি কাটিমন আম গাছেও একদিকে ফল আসছে অন্যদিকে মুকুলও দেখা যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কিছু আম বিক্রি যোগ্য হবে। আর পেয়ারা গাছেও ফল আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি রাম্বুটান ফলের গাছ অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে ওইসব গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া শরীফা গাছে এবার প্রচুর ফুল আসলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফল ধরেনি।উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান বলেন, শরীফা ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার লক্ষ্য রয়েছে। ফলটা আমাদের জন্য নতুন তাই পরিচর্যা শেখার ঘাটতি, সঠিক পরাগায়ন এবং গাছের খাদ্যের মিশ্রণ ঠিক না থাকায় এবার পর্যাপ্ত ফলন পাওয়া যায়নি। যেহেতু একটি শরীফা গাছ থেকে বছরে দুইবার ফলন পাওয়া যায় সে কারণে সকল ভুল ভ্রান্তি দূর করে পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ ফলনের আশা করছি।তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পর ওই শরীফা গাছের নিচে সাথী ফসল হিসেবে এলাচের চারা রোপণ করা হবে। বিদেশে ঘুরে এই প্রযুক্তি শিখে এসেছি। আমাদের দেশেও শরীফা এবং এলাচ একত্র চাষে বিল্পব সংঘটিত হতে পারে। এভাবে আবাদে প্রতি একর জমিতে বছরে ৩০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। ওই সময়ে যেকোনো শিক্ষিত সচেতন তরুণ-তরুণীরা কৃষি প্রজেক্টে আগ্রহী হবে। তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থানের পথ।মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের শেরপুর-জামালপুর অংশের কৃষকরা কৃষিতে স্বনির্ভর হতে পারছে না। সে কারণে ধান, পাট, আলু ও বেগুনসহ নানা প্রচলিত ফসলের বাইরে দীর্ঘ মেয়াদী অপ্রচলিত উচ্চ আয়ের ফসল জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এর আরো অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে ২৭ লাখ শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়। এর মধ্যে ৯ লাখ শিক্ষার্থী নানা মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। আর বাকি শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কৃষিতে আকৃষ্ট করতে এবং নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চেষ্টা করছি। এই কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে। এছাড়া কৃষকদের আধুনিক কৃষির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ওই উদ্যেক্তা পাশের জামালপুর শহরের পলিশা বেলটিয়া বাজার এলাকায় গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ এগ্রো কম্পজিট ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান। সেখানে একশ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন কোকোপিটে (নারকেলের আঁশ বা ছোবরা থেকে উৎপাদিত সার) চারা তৈরির বেশ কিছু বেড। ওইখানে মৌসুম ভেদে উৎপাদন করা হচ্ছে ক্যাপমিকাম, উন্নত জাতের মরিচ, আলু, টমেটো, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা ধরণের সবজির চারা। ওইসব চারা তিনি শেরপুর-জামালপুরের কৃষকদের মাঝে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছেন। এছাড়া ওইখানে তিনি বারোমাসী জাতের সাজনা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নতজাতের আখ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে গবেষণা করছেন। মনিরুজ্জামান বলেন, ওইসব সবজির চারা কৃষকদের মাঝে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত চারা পেয়ে কৃষকরা ভীষণ খুশি। আশা করছি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা জাম্প করে কয়েকধাপ ওপরে চলে আসবে।শেরপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, বাগান সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে বাগানের মানোন্নয়নে উদ্যোক্তাকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে ।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com