বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
দেশে নানা রকম পণ্যের হাট বসলেও শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে বসছে ব্যতিক্রমী পিঁপড়ার ডিমের হাট। এ হাটে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি। এখানে জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জের গারো পাহাড়ের শাল-গজারি বন এলাকা থেকে আসে ডিম বিক্রেতারা। এক শ্রেণির বেকার ও কর্মহীন আদিবাসী-বাঙালি মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত থেকে সংসার চালাচ্ছে শতাধিক মানুষ। তবে সারা বছর পাওয়া যায়না পিঁপড়ার ডিম। বর্ষার সময় মূলত এক শ্রেণির লাল বড় পিঁপড়া বনাঞ্চলের শাল-গজাড়ি গাছের মগ ডালে পাতা ও গাছের খোড়লের (গর্ত) মধ্যে বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে থাকে। ওই ডিম বড়শিতে সৌখিন মৎস্য শিকারিরা মাছ শিকারের জন্য ব্যবহার করে থাকে।জানা গেছে, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতি উপজেলার প্রত্যন্ত রাংটিয়া এবং বাঁকাকূড়া গ্রামে বসে ব্যতিক্রমী পিঁপড়ার ডিমের হাট। হাটে বিকেলের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহকারীরা এসে জড়ো হয়। পরে সন্ধ্যা নেমে এলেই পাইকাররা এক হাজার টাকা কেজিতে ওই ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে ডিম কিনে নেয়। পরবর্তীতে তারা ওই ডিম শেরপুরসহ ঢাকায় বিক্রি করে থাকে।তবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ি শাল-গজাড়ি বনে এবং আম, জাম,লিচুগাছসহ বিভিন্ন গাছ থেকে বাঁশের আগায় নেট বা জাল দিয়ে এক ধরনের ঠোঙা
তৈরি করে ওই ডিম সংগ্রহ করা হয়। সারা দিন ঘুরে ঘুরে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ এক কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারে কেউ কেউ।রাংটিয়া পিঁপড়ার ডিম হাট ছাড়াও পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয়
পাইকাররা গিয়ে ডিম সংগ্রহ করে থাকে এবং পরে তা শেরপুরসহ ঢাকায় বিভিন্ন মৎস্যচাষীদের কাছে বিক্রি করে থাকে তারা।পাহাড়ি ওই লাল পিঁপড়া প্রথমে শাল বা গজারি গাছর মগ ডালে তাদের মুখের আঠার
মতো লালা দিয়ে দুটি পাতাকে এক করে ঠোঙার আকৃতি তৈরি করে। পরে সেখানে মেয়ে পিঁপড়া বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। এ জাতীয় পিঁপড়া মাটিতেও অনেক সময় ডিম পাড়ে। তবে গাছের পাতার মধ্যে বেশি নিরাপদ মনে করে তারা।বাকাকূড়া গ্রামের ডিম সংগ্রহকারী আদিবাসী ডেনিয়েল সাংমা জানান, আমরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়-জঙ্গল ঘুরে ডিম সংগ্রহ করি। মোটামুটি ৩০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারি। প্রতি কেজি এক হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এতে আমার সংসার চলে। একই গ্রামের জামাল মিয়া জানায়, গাছ থেকে এ ডিম পাড়তে আমাদের খুব কষ্ট হয়। এছাড়া সাপ-বিচ্ছু, মৌমাছি আর হাতির ভয় থাকে। তবুও টাকার জন্য এ কাজ করি।এ বিষয়ে রাংটিয়া গ্রামের পাইকার অবিনাশ কোচ জানায়, পাহাড়ে এখন কোন কাজ নাই। তাই এই পাহাড়ি এলাকায় আদিবাসী বাঙালি প্রায় দুই শতাধিক অভাবী মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত। কারণ, প্রায় সকলেরই বিভিন্ন সমিতির ঋণের কিস্তি দিতে
হয়।বছরের এই সময়ে পাহাড়ে কোন কাজ না থাকায় বেকার আদিবাসী-বাঙালিরা এ ডিম সংগ্রহ করে থাকে। তবে এ ডিম সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়। সেই সাথে হাতি, সাপ ও মৌমাছির আক্রমণের ঝুঁকিও রয়েছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসী এবং ডিম সংগ্রহকারীরা জানায়।যুগ যুগ ধরে মানুষ জীবিকার তাগিদে নানা রকমের পেশায় যুক্ত হচ্ছে। তবে সরকার থেকে এই পিঁপড়ার ডিম এর চাষ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে ঝুঁকি নিয়ে বন-জঙ্গল থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে না তাদের। বাসায় বসেই এ পিঁপড়ার ডিমের ব্যবসা করতে পারবে। সেই সাথে পাহাড়ি বেকারদের স্বাবলম্বীর পথও সুগম হবে বলে মনে করছে স্থানীয় সচেতন মহল।