বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর :
শেরপুরের নকলায় মাত্র ৬ মাসে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন এর হাফেজ হয়ে বিস্ময়
সৃষ্টি করেছে ৭ বছরের শিশু মো. মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনী। সে নকলা শহরের
বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ‘নকলা দারুল উলূম মাদরাসা’ থেকে পবিত্র আল কোরআন এর হিফজ
সম্পন্ন করেছে। এই বিস্ময়কর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন শিশু হাফেজ মো. মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনীর ভগ্নিপতি (দুলাভাই) হাফেজ মাওলানা আব্দুল আলীম। শিশু হাফেজ মো. মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনী উপজেলার নকলা পৌরসভাধীন উত্তর কায়দা এলাকার মৃত হাবিব মিয়া ও
সুরাইয়া বেগম দম্পতির ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সন্তান। জানা গেছে, ওয়াছকুরুনী ২ বছর বয়সেই তার বাবাকে চিরতরে হারায়। এর পরে পিতৃহারা ওয়াছকুরুনী তার মায়ের কাছেই বড় হয়। সে একটু বুঝতে শুরু করলেই তাকে মাদ্রাসাতে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ওয়াছকুরুনী প্রখর মেধার অধিকারী হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয় এবং সবার কাছে হয়ে ওঠে অতি আদরের। শিশু ওয়াছকুরুনী তার মেধার কারনেই ২০২২ সালে পাঁচ পারা (‘ক’ গ্রুপ) হিফজ প্রতিযোগিতায় উপজেলায় প্রথম স্থান, জেলায় পঞ্চম স্থান (শারীরিক সমস্যার কারনে) ও বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ওয়াছকুরুনীর দুলাভাই হাফেজ মাওলানা আব্দুল আলীম জানান, বাবা হারা মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনীর মেধা ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে নকলা দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মুফতি আনসারুল্লাহ (তারা আলম) তার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণের আগ্রহী হয়ে ওয়াছকুরুনীকে নকলা দারুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি করেন। এখন পর্যন্তও তার যাবতীয়
ব্যয়ভার মুফতি আনসারুল্লাহ বহন করছেন বলে আব্দুল আলীম জানান। আব্দুল আলীম আরো
জানান- মাঝেমধ্যে ওয়াছকুরুনীর পরিবারসহ আত্মীয়ের পক্ষ থেকে ব্যয়বহনে শরীক
হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও মুফতি আনসারুল্লাহ তা নাকচ করে দিয়ে বলতেন, ‘মাহদী
হাসান ওয়াছকুরুনী যতদিন নকলা দারুল উলুম মাদরাসাতে আছে, অন্তত ততদিন আল্লাহর
রহমতে আমিই তার যাবতীয় ব্যয়বহন করব ইনশাআল্লাহ’। নকলা দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মুফতি আনসারুল্লাহ (তারা আলম) জানান, ৭ বছরের কোন শিশু মাত্র ৬ মাসে মহাগ্রন্থ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ মুখস্থ করতে সক্ষম হয়েছে এটা শুধু নকলা উপজেলাতেই প্রথম নয়, তার জীবনেও এটাই প্রথম দেখা। তিনি বলেন, ‘মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনীর এমন সাফল্যে আমরা গর্বিত। এই সাফল্যে আমাদের মতো গর্বিত হওয়ার কথা পুরো জেলা ও উপজেলাবাসীর। মুফতি আনসারুল্লাহ জানান, মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনীর শিক্ষক হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম (সোহাগ) সব জায়গায় সবক্ষেত্রেই তাকে নিয়ে গর্ব করেন। তার ঐকান্তিক সহযোগিতায় মাহদী এত অল্প বয়সেই এই কীর্তি গড়তে সমর্থ হয়েছে। এতে হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলামের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এবিষয়ে ওয়াছকুরুনীর শিক্ষক হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম (সোহাগ) জানান, মাহদী
হাসান ওয়াছকুরুনী অত্যান্ত নম্র-ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির একজন মেধাবী ছেলে। তার
শিক্ষকতা জীবনে এটাই প্রথম ঘটনা যে, মাত্র ৬ মাসে ৭ বছরের একজন শিশু পবিত্র
কালামুল্লাহ হিফজ সম্পন্ন করলো। তিনি আরো জানান, ওয়াছকুরুনী শেষ দিকে এসে
প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ পৃষ্ঠা করে সবক (মুখস্ত) শুনিয়েছে। আল্লাহ তাকে নিশ্চয়
দীনের জন্য কবুল করবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। নকলা দারুল উলুম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব নাজমুল হক মজনু বলেন, আমি দ্বীনি শিক্ষা প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু ৭ বছরের শিশু মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনীর মতো বাবাহারা একজন শিশু যে, মাত্র ৬ মাসে পবিত্র আল কোরআন এর হাফেজ হয়ে দেশব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি করবে তা কখনো কল্পনা করিনি। তার এই সাফল্যের কারনে ‘নকলা দারুল উলুম মাদ্রসা’ আজ দেশব্যাপি পরিচিতি পাচ্ছে। আমাদের মাদ্রসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আজ সর্ব মহলে প্রশংসিত। এটা ভাবতেই গর্বে বুকটা ভরে যায় বলে
তিনি জানান। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হক মজনু ও মুহতামিম মুফতি আনসারুল্লাহ একই
ভাবে বলেন, মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও এলাবাসীদের সার্বিক সহযোগিতা পেলে নকলা
দারুল উলুম মাদ্রসার সুনাম ভবিষ্যতে আরো বাড়বে ইনশাআল্লাহ। এই মাদ্রসার সুনাম
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে বলে তারা আশাব্যক্ত করেন।
শিশু হাফেজ মো. মাহদী হাসান ওয়াছকুরুনীর উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনায় ওয়াছকুরুনীর মা
সুরাইয়া বেগম, ভগ্নিপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল আলীম, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হক মজনু, মুহতামিম মুফতি আনসারুল্লাহ, শিক্ষক হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম সোহাগসহ তার আত্মীয়স্বজন এই প্রতিবেদকের মাধ্যেমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।