তালুকদার রাসেল, ঈশ্বরদী পাবনা:
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হবে ঈশ্বরদী-রূপপুর রেললাইন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালিযুক্ত হয়ে ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা গেছে। ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রেললাইন প্রকল্পটি বৃহস্পতিবার ৯ ফেব্রুয়ারী আলোর মুখ দেখবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল ও যন্ত্রপাতি রেলযোগে পৌঁছাতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হলেও শুধু পারমাণবিক প্রকল্পেরই নয় বরঞ্চ ঈশ্বরদী ইপিজেডের প্রস্তুতকৃত মালামাল কন্টেইনারের মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো হবে। এতে নব দিগন্তের দরজা খুলেছে । ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নে নবনির্মিত রেলওয়ে স্টেশনের নাম ‘রূপপুর’ নামকরণ করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বৃহস্প্রতিবার সকালে গণভবন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এই রেলপথের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি মালামাল ছাড়াও ঈশ্বরদী ইপিজেডের প্রস্তুতকৃত মালামাল কন্টেইনারের মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষ পণ্যবাহী ট্রেনে সহজে মালপত্র আনা নেওয়া করতে পারবে। এতে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমল পরিবর্তন আসবে, জাগরিত হবে ঈশ্বরদীসহ ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি । ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রেলপথের প্রকল্প পরিচালক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, রেলবান্ধব বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলওয়ের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ চালু হলে রেলওয়ে খাতে রাজস্ব আয় বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালামাল পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আনতে চান। আগে ঈশ্বরদী থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন ছিল। এ প্রকল্পের আওতায় মিটারগেজ-ব্রডগেজ (ডুয়েলগেজ) কানেক্টিভ হয়ে গেল। পণ্যবাহী ট্রেনে মোংলা বন্দর থেকে ব্রডগেজ ট্রেন চলে আসতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মিটার গেজ ট্রেন আসতে পারবে। এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মর্যাদা অনেক বেড়ে গেল । রেলওয়ের প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের পহেলা এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলে । ভারতের জিপিটি ও বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে পাকশীর -রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ব্রডগেজ-মিটারগেজ (ডুয়েল গেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, ‘বি’ শ্রেণীর একটি সুদৃশ্য স্টেশন ভবন, একটি প্লটফর্ম, সাতটি ব্রড কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে । ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের দু’পাশের লুপলাইন সংস্কার, প্লাটফর্ম উঁচু করার কারণে একসাথে ১৮টি ট্রেন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসে দাঁড়াতে পারবে। সাবেকি রিলে-ইন্টারলকিং পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে কম্পিউটারইজড পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে সুইচ কেবিনে বাটন চাপলেই ট্রেন আসা-যাওয়ার রেললাইনটি সহজেই ক্লিয়ার হবে। এখন আর কোনো ট্রেন আউটারে এসে লাইন ক্লিয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য ট্রেনের যে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন আসবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ কারখানায় ডকপিট নির্মিত হয়েছে। ডকপিটে একই সময়ে একটি মিটারগেজের ইঞ্জিন, নয়টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে । পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল বলেন, উদ্বোধনের পর প্রকল্পটি সমতায় আসলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রেলপথে সহজে শুধু মালামাল-যন্ত্রপাতি পৌঁছানোই নয়, এলাকায় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে উত্তর জনপদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমল পরিবর্তন আসবে। স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে এ অঞ্চলের মানুষ পণ্যবাহী ট্রেনে করে সহজে মালপত্র আনা নেওয়া করতে পারবে। সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে যাবে -এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য করা মানুষদের। পাকশী বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ -আমল থেকেই পাকশীতে তৎকালীন ‘সাঁড়াঘাট’ রেলস্টেশনের সন্নিকটে নির্মিত হয়েছিল বরফকল। বরফ পরিবহনের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সেসময় ঈশ্বরদী-পাকশী রুটে একটি রেললাইন নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে পাকশী বিভাগীয় রেলের সদর দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য ওই রেলপথ দিয়ে বিনা পয়সার ‘পাইলট’ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। -রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ওই ট্রেনে সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় ট্রেনে চলাচল করতো। নব্বয়ের দশকে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘পাইলট ট্রেন’ চলাচল বন্ধ করে দেয় । ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়েতে দৃশ্যমান উন্নয়ন শুরু হয় । সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দীর্ঘ ২৬ বছর পরে পাইলট ট্রেন চলাচল করার রুটের পরিত্যক্ত রেললাইনগুলো সরিয়ে নতুন করে ঈশ্বরদী-রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পর্যন্ত রেলপথসহ সংস্কার শুরু হয়