মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা,ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ ১৩ পুলিশকে হত্যার ঘটনায় থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এই হামলায় এনায়েতপুর থানায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত রোববার (২৫ আগষ্ট) রাতে এনায়েতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ছয় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম মন্ডল আরও বলেন , এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ১৩ পুলিশ হত্যা মামলায় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী,শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন,বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।মামলার অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা এক আসামিকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু সেই আসামীকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন। পুলিশ ওই দাবি মেনে নেয়নি। তার অবৈধ দাবি মেনে না নেওয়ায় পুলিশের ওপর তার ক্ষোভ ছিল। পরে ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলাও নেয় পুলিশ। পরে বাচ্চুর নেতৃত্বে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা থানা ঘেরাও করে। সে সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক এর অপসারণের দাবিও করেছিলেন তিনি। পরে আসামিরা এনায়েতপুর থানা পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন,এই থানা সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না। এ কথায় ছাত্র-জনতারা চলে যায়। পরে ১নং আসামি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুষ্কৃতকারী দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে উপ-পরিদর্শক (এসআই) তহছেনুজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এ এসআই) ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একপর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দশ্যে ভেতরে ঢুকে যায়। এসময় পুলিশের ও জনসাধারণের জমা দেওয়া বেসরকারি অস্ত্র ও গুলি লুট করে। পরে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতর ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, কনস্টেবল হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদেরকেও পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে । এ সয়ম নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর করে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানি করে।
পরবর্তীতে বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। আসামিরা পাঁচটি পিস্তল ও আটটি ম্যাগজিন, একটি চায়না পিস্তল ও দুটি ম্যাগজিন, চারটি চায়না রাইফেল ও ৩৭টি চার্জার, দুটি চায়না রাইফেল টাইপ ও দুটি ম্যাগজিন, ছয়টি ১২ বোর শর্টগান, একটি ৩৮ মিমি গ্যাসগান লঞ্চার, ৭.৬২/৩৯ মিমি গুলি ১৬৮ রাউন্ড, ৭.৬২/২৫ মিমি গুলি ১৬ রাউন্ড, ৯/১৯ মিমি গুলি ৬০ রাউন্ড, ১২ রোব শটগান (রাবার কার্তুজ) ২২৭ রাউন্ড, ১২ রোব শর্টগান (লেটবল কার্তুজ) ৩৫৯ রাউন্ড, লং রেঞ্জ গ্যাস শেল ৩৮ রাউন্ড, শর্ট রেঞ্জ গ্যাস শেল ৩৬ রাউন্ড লুট করে নিয়ে যায়।
এ ছাড়া আসামিরা একটি ডাবল কেবিন ও একটি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ ভ্যান, পুলিশ সদস্যদের ১৫টি মোটরসাইকেল ও একটি ট্রাক, বিভিন্ন সময় আটক করা নতুন পুরাতন ১২টি মোটরসাইকেল ও থানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ওয়াকিটকি পুড়িয়ে দেয়। এতে এনায়েতপুর থানায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।