বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
নেপালকে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এ দলের অন্যতম সদস্য ছিলো রংপুরের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না। এজন্য গর্বিত রংপুরবাসী। এজয়ের আনন্দের জোয়ার বইছে রংপুরসহ নারী ফুটবলারদের গ্রাম হিসাবে পরিচিত সদ্যপুস্কুরিনীতেও।
গত সোমবার রাতে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এ দলের সদস্য রংপুরের সদ্যপুস্কুরিনীর ফুটবল কন্যা সিরাত জাহান স্বপ্নার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ চাম্পিয়ন হওয়ায় পুরো রংপুর জেলাসহ সদ্যপুষ্কুরনী এলাকাজুড়ে সর্বশ্রেণীর মানুষজনের মাঝে দেখা গেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। নেপালের বিপক্ষে ২ গোল করেছে স্বপ্না। খেলা শেষ হওয়ার পরপরই তার বাড়ি শুরু হয় উৎসব। চলে পুরো এলাকা জুড়ে মিষ্টি বিতরণ। হয় বিজয় র্যালী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিরাত জাহান স্বপ্নার ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েছে রংপুরের ফুটবলপ্রেমীরা। এর আগে ভারতের ম্যাচে স্বপ্না দুটি গোল করেছিল সে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সিরাত জাহান স্বপ্নার বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরিনী পালিচড়ার জয়রাম গ্রামে। তার পিতা মোকছার আলী একজন বর্গচাষী। মা লিপি বেগম গৃহিনী। ছোট থেকেই দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ছিলনা পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই। ভাঙ্গা ঘরে থাকতে হতো। তিন বোনসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কোন মতে সংসার চলতো পিতার আয়ে। ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি স্বপ্নার আগ্রহ ছিল। এর পরেই সে সদ্যপুস্কুরিনী পালিচড়া স্পোটিং ক্লাবে ভর্তি হয়। পরে এ দলের হয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলেছেন। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পায়, সেই থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলছেন। দারিদ্র জয় করা রংপুরের সদ্যপুস্কুরিনী পালিচড়ার এই মেয়ে সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুটটা অর্জনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মেয়ের সাফল্যে আনন্দে কেঁদে ফেলেন স্বপ্নার মা লিপি বেগম। তিনি বলেন, ‘স্বপ্না ফুটবল খেলুক, এটা এলাকার মানুষ ও স্বজনরা চাইতো না। তারা বলতো, মেয়ে, তাও আবার অজপাড়া গ্রামের মেয়ে কেন ফুটবল খেলবে? কিন্তু স্থানীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় হারুন আমার কাছে এসে বলেন স্বপ্নাকে ফুটবল কোচিং করাবেন। আমি প্রথমে রাজি হইনি। পরে রাজি হই। এখন তো আমার মেয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে এনেছে। তার জন্য পালিচড়া গ্রামমসহ দেশবাসী আজ গর্বিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি কোনও কাজ করতে পারেন না। আমি ধান শুকানোর কাজ করে সংসার চালাই। আমার তিন মেয়ে, কোনও ছেলে নেই। অনেক কষ্ট চলছে তাদের সংসার। স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী জানান, আমি আমার মেয়ের জন্য সত্যি গর্বিত। এটা আমাদের মতো গরিব পরিবারের জন্য বিরাট কিছু। আমার ভালো লাগছে আমার মেয়ে দেশের জন্য খেলছে, ভালো খেলে রংপুরের মুখ উজ্জ্বল করছে। প্রতিবেশী আলেয়া বেগম ও মমতাজ বেগম বলেন, ‘স্বপ্না পালিচড়া তথা বাংলাদেশের গর্ব। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত। দোয়া করি সে অনেক দূর এগিয়ে যাক।’ স্বপ্নার সতীর্থ আসমা, রাখি ও মরিয়ম বলেন, ‘আমাদের অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে স্বপ্না দেখিয়ে দিয়েছে, সাধনা করলেই সফল হওয়া যায়। তার মতো আমরাও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতে চাই। সেজন্য কঠোর অনুশীলন করছি। স্বপ্নাকে স্যালুট, তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য।’স্বপ্নার কোচ মিলন খান জানান, সিরাত জাহান স্বপ্না অত্যন্ত মেধাবী খেলোয়াড়। সে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এই সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ৪ গোল করে দেশের জয়ে ভূমিকা রেখেছে। আমি কোচ হিসেবে গর্বিত এবং আনন্দিত। সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ‘স্বপ্না আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। এই গ্রামের অনেক মেয়ে ফুটবল খেলে। স্বপ্নাকে দেখে তারা উৎসাহ পায়। আমরা স্বপ্নার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। গ্রামে ফিরলেই তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মফিজার রহমান রাজু বলেন, আমার নিজ এলাকা রংপুরের পালিচড়ার একটি মেয়ে স্বপ্না সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা এতে দিতে অবদান রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া মিনি স্টেডিয়াম আর সহায়তা আজ তাদের বিশ্বজয়ের স্পর্ধা দিয়েছে। এব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, আমরা রংপুরবাসী সিরাত জাহান স্বপ্নার জন্য গর্ববোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য সদ্যপুস্কুরিনী পালিচড়ায় একটা মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিয়েছে। নারী ফুটবলারের গ্রাম সদ্যপুস্কুরিনী আমাদের রংপুরকে গর্বিত করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।