শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী,রাজশাহী:
‘প্রায় ৩৭ বছর ধরে পদ্মায় মাছের ডিম ও রেণু ধরি। ডিম দেখলে বুঝতে পারি কতটুকু কি মাছ হবে। ৯৫ শতাংশ বলতে পারি কি মাছ হবে। যেটা বলি হয়ও তাই। আর কয়েক দিন পরে পানির সাথে আইখরা মাছের ডিম আসবে। সাথে কিছু সংখ্যক রুই থাকবে। তবে ১৬ আনায় আইখরা মাছ হবে।’এভাবে নিজের মাছ শিকার অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলছিলেন জেলে হান্নান আলী। তিনি রাজশাহী পবা উপজেলার কাটাখালীর টাঙ্গন এলাকার পদ্মা নদীতে বিভিন্ন মাছের ডিম ও রেণু আহরণ করেন। তার এই কাজের অভিজ্ঞতা তিন যুগের বেশি। তাই তিনি নদীর পানি থেকে জালে ওঠা ডিম দেখলে বলতে পারেন কি মাছ হবে। শুধু হান্নান আলীরই নয়, এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে মাদুদ, মনসুর ও চাঁদসহ আরো অনেকেরই। তারা জানায়, শ্যামপুর ঘাটে ১০ থেকে ১২ জন, সাহাপুরে ১৫ থেকে ২০ জন, টাঙ্গনে ৮ থেকে ৯ জন। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছের রেণু ধরা পড়ে ইউসুফপুর ও চারঘাটের। এই ২০০ জনের তিন মাসের জীবিকার উৎস পদ্মা থেকে মাছের রেণু আহরণ।
রাজশাহী মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করেন এমন জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ জন। এদের মধ্যে মাছের ডিম ও রেণু ধরে কমপক্ষে ২০০ জন হবে। তারা পবার শ্যামপুর থেকে চারঘাট পর্যন্ত। বছরের আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাস পদ্মা নদী থেকে এই জেলেরা ডিম ও রেণু সংগ্রহ কওে পুকুরের খামারিদের কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া অনেকেই আবার পদ্মায় মাছ শিকার শেষে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।জেলে হান্নান আলী বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে পদ্মায় ডিম ও রেণু ধরি। এই ডিমগুলো ফোটার পরে বিভিন্ন ধরনের মাছ হয়। এরমধ্যে থাকে রুই, কাতলা, মিরকা, কালবাউস, আইখোরা, বোয়াল, চিতল। ডিমের রেণু সবাই চিনতে পারে না। আমরা ডিমের কোয়ালিটি দেখে বলতে পারেÑ কত শতাংশ রুই হাবে, কত শতাংশ কাতল হবে। আল্লাহর রহমতে সেটাই হয়।
ডিম ও রেণু আহরণে ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে থাকতে হয় বলে তিনি জানান, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পদ্মা নদীতে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা মাচার উপরে পলিথিনের ছাউনির নীচে থাকতে হয়। ঝড় বা বৃষ্টি হলে উপরে উঠে আসি। ঘন্টায় ঘন্টায় জাল ঝারা না দিলে রেণুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রাতে ছয় থেকে সাতবার জাল থেকে মাছের ডিম ও রেণু তুলে জমানো পানিতে রাখতে হয়। অনেক সময় একটানা মাছ আড়ায় থেকে তিনদিন পাওয়া যায়। তবে পানি স্থীতিশীল অবস্থায় থাকলে প্রতিদিনই ডিম ও রেণু পাওয়া যায়।ডিম ও রেণুর দামের বিষয়ে জেলে হান্নান আলী বলেন, অনেক জেলে ডিম ও রেণুগুলো নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিক্রি করেন। তখন জেলেরা ডিম ও রেণুর দাম ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি করেন। তবে সেই তুলনায় পদ্মাপাড়ে রেণুর দাম কম। কয়েকদিন আগে দাম বেশি থাকলেও বর্তমানে পদ্মাপাড়ে প্রতি ১০০ গ্রাম ডিম ও রেণু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম করে মাছের ডিম ও রেণু পেয়ে থাকেন একেকজন জেলে। তার দাম লাগে গড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। তবে নদীর ধারেই ১৫ থেকে ১৭ হাতের জাল পাতায় এর খরচও নেই। অনেকটাই বিনা খরচে মাছের ডিম ও রেণু আহরণ।পবা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা থেকে খাওয়ার জন্য ডিম বা রেণু শিকার দÐনীয় অপরাধ। তবে জেলেরা পদ্মা থেকে মাছের ডিম বা রেণু আহরণ করতে পারবেন পুকুরে চাষের জন্য। পবা উপজেলায় ৩ হাজার ৮৭ জন জেলে রয়েছে। তারমধ্যে শুধু পদ্মায় মাছ শিকার করেন ১ হাজার ৭০০ জন জেলে। জেলেরা মাছের ডিম ও রেণু পদ্মা থেকে আহরণ করে বিক্রি করে থাকেন।রাজশাহী জেলা মৎস কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজশাহীতে মাছের পোনার চাহিদা মেটায় সরবারি-পাবলিক হ্যাচারী থেকে। এরমধ্যে ১৫ শতাংশ মাছের ডিম ও রেণু পাওয়া যায় পদ্মা নদী থেকে। তবে তুলনামূলক পদ্মার মাছের ডিম ও রেণুর চাহিদা ভালো।