বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:
রংপুর জেলাসহ বিভাগের আট জেলা জুড়ে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। কৃষিজমি, জনবসতি ও গ্রামীণ পরিবেশের অভ্যন্তরে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইটভাটা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করে চলছে। এর ফলে পরিবেশ দূষিণের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হুমকির মূখে পড়েছে কৃষিসহ জীববৈচিত্র্য। এনিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পরিবেশ সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহল। তারা এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তবে জনবল সংকটের কারণে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর রংপুর কার্যালয়। এক পরিসংখ্যানে জানাগেছে, রংপুর জেলাসহ বিভাগের আট জেলায় ১ হাজার ৩৭টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে।এর মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ১৯৬টি। বাকি ৮৪১টি ইটভাটা সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। যার মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। আর সবচেয়ে কম অবৈধ ইটভাটা পঞ্চগড়ে রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর বলছে, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে অভিযানে ভাটা পড়েছে, এমনটা মনে করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ২৪৭টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ২১৫টি। বৈধ মাত্র ৩২টি। লালমনিরহাটে ৫৬টির মধ্যে ২৯ অবৈধ এবং বৈধ ২৭টি, দিনাজপুরে ২৬৩টির মধ্যে অবৈধ ২০০ আর বৈধ ৬৩টি, কুড়িগ্রামে ১১২টির মধ্যে ৭৯টি অবৈধ, পঞ্চগড়ের ৫০টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ৩৯টি, ঠাকুরগাঁওয়ের ৮০টির মধ্যে ৭৩টি অবৈধ। এ জেলায় বৈধ ইটভাটা মাত্র সাতটি, নীলফামারীর ৫৬টির মধ্যে ৫০টি অবৈধ, বৈধ মাত্র ছয়টি এবং গাইবান্ধার ১৭৩টি ভাটার মধ্যে ১৫৬টিই অবৈধ। এ জেলায় বৈধ মাত্র ১৭টি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় পরিবেশ অধিদফতরের কোনো প্রকার ছাড়পত্র কিংবা অনুমোদন নেই। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। ফলে রংপুর বিভাগের ৮৪১টি ইটভাটা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অমান্য করে এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কৃষিসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। সেই সাথে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।
সচেতন মহল বলছে, কৃষিজমির টপ সয়েলই হচ্ছে ইটভাটাগুলোর মাটির উৎস। যার কারণে একদিকে হাজার হাজার একর জমি পতিত হয়ে কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।
কৃষক ও স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনি ভেঙে দিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও ইটভাটা প্রস্তুত হয়ে যায়। এসব ইটভাটার ছাই মিশ্রিত ধোঁয়ায় গাছ গাছগাছালি ও ফসলের ক্ষেতে অনবরত করার কারণে আম কাঁঠাল লিচুর মুকুল ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি জমি কমছে।
এব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (উপ-সচিব) সৈয়দ ফরহাদ হোসেন জানান, বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতর রংপুর জেলাসহ বিভাগ জুড়ে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। স¤প্রতি একটি ইটভাটার মালিক ও ম্যানেজারকে কারাদন্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আগামীতে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।